রবিবার, ২৯ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

১৮১ ইটভাটার মধ্যে অবৈধ ৯৯

মোশাররফ হোসেন বেলাল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

১৮১ ইটভাটার মধ্যে অবৈধ ৯৯

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৮১টি ইটভাটার মধ্যে ৯৯টি ইটভাটাই চলছে অবৈধভাবে। ইটভাটা স্থাপনের আইন অনুযায়ী বিদ্যালয়, রেলপথ, হাসপাতাল ও ক্লিনিকের ১ কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। আবাসিক এলাকা (৫০টি বাড়ি আছে এমন জায়গা), কৃষি জমি আছে এমন জায়গাতেও ইটভাটা করা যাবে না। তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরসহ ৯ উপজেলাতে ইটভাটা আইন অমান্য করা হয়েছে বেশ কিছু ইটভাটা। শুধু বিদ্যালয়ের পাশ ঘেঁষেই করা হয়েছে ১৮টি ইটভাটা। জেলায় থাকা ১৮১টি ইটভাটার মধ্যে সব কয়টিই ইটভাটাই কৃষি জমির মধ্যে। বেশির ভাগ ইটভাটার পাশেই রয়েছে আবাসিক ও জনবহুল এলাকা। জেলার আখাউড়া উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের গঙ্গাসাগর রেলওয়ে স্টেশনের কাছে আছে একটি ইটভাটা। এই ইটভাটার পাশ দিয়েই ঢাকা-চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম-সিলেট রেলপথ। কাছেই একটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র। এর কয়েক শ গজ দূরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। আশপাশে অনেক কৃষিজমি। আছে বসতবাড়িও। জেলা পরিবেশ অধিদফতরের হিসাব মতে, জেলার ১৮১টি ইটভাটার মধ্যে ৯৯টি ইটভাটাই অবৈধ। এসব ইটভাটা বন্ধে তারা নিয়মিত কার্যক্রম চালাচ্ছেন। এসব অবৈধ ইটভাটা বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করাসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা। এদিকে জেলার ৯ উপজেলার ৯৯টি অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করতে সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাই কোর্ট। গত ২৪ এপ্রিল বিচারপতি মো. আশরাফুল ইসলাম ও মহিউদ্দিন শামীমের হাই কোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আইনজীবী এ কিউ এম সোহেল রানা জনস্বার্থে এই রিট করলে এই আদেশ দেওয়া হয়। সরেজমিনে দেখা গেছে সদর উপজেলার সুহিলপুর ইউনিয়নের খলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পূর্বপাশ ঘেঁষেই রয়েছে মেহেদী ব্রিকস নামের একটি ইটভাটা। স্কুল ও ইটভাটার দূরত্ব দেড় থেকে দুই শ মিটার। ইটভাটার ধুলায় স্কুলের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। ইটভাটায় যাতায়াতকারী ট্রাক্টরের আওয়াজে শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে ঠিকমতো মনোযোগ দিতে পারেন না। সদর উপজেলার বাকাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পৌর এলাকার গোকর্ণ এলাকার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সদর উপজেলার কালিসীমা দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছেই রয়েছে কয়েকটি ইটভাটা। নবীনগর উপজেলার কৃষ্ণনগর আবদুল জব্বার উচ্চবিদ্যালয়, বিজয়নগর উপজেলার রামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চান্দুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, টানমনিপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, বুধন্তী আহলাদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সরাইল উপজেলার বৈশামুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছেও রয়েছে বেশ কয়েকটি ইটভাটা। আখাউড়া উপজেলার ধরখারে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের পশ্চিম পাশে তিনটি ও পূর্ব পাশে দুটি ইটভাটা রয়েছে। এই পাঁচটি ইটভাটার পাশেই কৃষি জমি। উপজেলার মোগড়া এলাকার দুটি ইটভাটার পাশেও রয়েছে কৃষি জমি ও বসতবাড়ি। এর একটির পাশ দিয়ে গেছে রেলপথ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আখাউড়া উপজেলার এক ইটভাটার মালিক অভিযোগ করে বলেন, ‘ইটভাটা চালাতে গিয়ে তাদেরকে নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। যাদের বৈধ কাগজপত্র আছে তাদেরকেও খেসারত দিতে হয়। প্রায় সময়ই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাদেরকে চাঁদা দিতে হয়। সরাইল উপজেলার সুবর্ণ ব্রিকসের পরিচালক শহিদুল ইসলাম রুবেল অভিযোগ করে বলেন, পরিবেশ অধিদফতর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দুই কর্মকর্তা তার কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকার সুবিধা নিয়েছেন। পরে আরও কিছু দাবি করলে তিনি দিতে অস্বীকৃতি জানালে তার ভাটায় অভিযান চালানো হয়।

তিনি বলেন, শুধু তাই নয়, পরিবেশ অধিদফতর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উপ-পরিচালকও তার কাছ থেকে মসজিদ উন্নয়নের নাম করে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন। তবে পরিবেশ অধিদফতর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া উপ-পরিচালক মো. নুরুল আমিন তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। গত শুক্রবার বিকালে মোবাইল ফোনে মো. নুরুল আমিনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৯৯টি অবৈধ ইটভাটা থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, এগুলো বন্ধ করতে আমরা নিয়মিত কার্যক্রম চালাচ্ছি। ভ্রাম্যমাণ আদালতসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, হাই কোর্টে দায়ের করা রিটের কাগজপত্র এখনো পাইনি। কাগজপত্র পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। তিনি তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ইটভাটার মালিকদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয় ও পরিবেশ অধিদফতর থেকে পৃথক দুটি তদন্ত চলছে। তিনি বলেন, যেহেতু আমি কারও কাছ থেকে মসজিদের উন্নয়নের কথা বলে টাকা নেইনি, তাই আশাকরি তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত হব।

সর্বশেষ খবর