সোমবার, ৩০ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

চা পাতা তোলা নিয়ে বিপাকে চাষি

সরকার হায়দার, পঞ্চগড়

চা পাতা তোলা নিয়ে বিপাকে চাষি

পঞ্চগড়সহ উত্তরের সমতল অঞ্চলের ক্ষুদ্র চা চাষিরা কাঁচা চা পাতা সরবরাহে বিপাকে পড়েছেন। শুরু থেকে তারা কাঁচি দিয়ে চা গাছ থেকে ছয় থেকে সাত পাতা কারখানাগুলোতে সরবরাহ করে আসছেন। এতে তৈরি চা পাতার গুণগত মান কমে গেছে। তৈরি চা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে নিম্নমানের এ চা পাতা অকশন মার্কেটে ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে না। ফলে চাষিরাও চা পাতার দাম পাচ্ছেন না। তাই চাষিদের কারখানায় চা গাছের আড়াই থেকে তিন পাতা সরবরাহ করার নির্দেশনা দিয়েছেন চা পাতা মূল্য নির্ধারণ কমিটি। এমন নির্দেশনায় অনেক চাষি তিন পাতা সরবরাহ শুরু করলেও অনেকে পড়েছেন বিপাকে। চা বোর্ড এবং কারখানা কর্তৃপক্ষ বলছেন সচেতনতা ও বিজ্ঞানভিত্তিক চা চাষের অভিজ্ঞতা না থাকায় চা চাষিরা কাঁচি দিয়ে কেটে চা গাছের ছয় থেকে সাত পাতা সরবরাহ করেন। অথচ চায়ের গুণগতমান এবং রাসায়নিক দ্রব্যগুলো ঠিক রাখার জন্য হাত অথবা মেশিন দিয়ে চাপাতা প্লাকিং করা প্রয়োজন। দেশের অন্যান্য জেলায় হাত ও মেশিন দিয়ে তিন-চার পাতা প্লাকিং করা হলেও পঞ্চগড়ে ছয়-সাত পাতা প্লাকিং করার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। তাই চায়ের অকশন বাজারে পঞ্চগড়ের চায়ের দাম কমে গেছে। বিসমিল্লাহ টি ফ্যাক্টরির চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম মিঞা জানান, চাষিরা ডালসহ সাত-আট পাতার চা পাতা নিয়ে আসে। এতে কারখানায় জ্যাম হয়ে যায়। চা পাতার মান নষ্ট হয়। অকশন মার্কেটে সিলেটের চা বিক্রি হয় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি। মান খারাপ হওয়ার কারণে পঞ্চগড়ের চা বিক্রি হয় ১২০ থেকে ১৪০ টাকা। এ ব্যাপারে সব কারখানাকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা আমাদের কারখানার পক্ষ থেকে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করা শুরু করেছি। এখন অনেক চাষি  তিন থেকে চার পাতার কাঁচা চা পাতা দিচ্ছেন। তাদের আমরা নির্ধারিত দাম দিচ্ছি। চা বিশেষজ্ঞ মাসুদুর রহমান জানান, পঞ্চগড়ের চাষিরা বিজ্ঞানসম্মতভাবে চা পাতা উৎপাদনের জন্য এখনো প্রশিক্ষিত হয়ে ওঠেননি। ৭০ শতাংশ ভালো পাতা হলেও চায়ের মান ঠিক থাকে। ভালোমানের চা তৈরির জন্য চাষিরা যদি একটি পাতা একটি কুড়ি ৫ শতাংশ, দুটি পাতা একটি কুড়ি ৫৫ শতাংশ, তিনটি পাতা একটি কুড়ি ১৫ শতাংশ, নরম ভাঞ্জি ১৫ শতাংশ, শক্ত ভাঞ্জি ৫ শতাংশ, শক্ত পাতা ১০ শতাংশ সরবারহ করেন তাহলে চায়ের মান ঠিক থাকবে। তৈরি চা উৎপাদনের প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতি কেজি কাঁচা চা পাতা কিনছেন ১০ থেকে ১২ টাকায়। বড় চা পাতার অজুহাতে প্রতি কেজিতে ২০ থেকে ২৫ ভাগ চা পাতার দামও দিচ্ছেন না তারা। চাষিদের অভিযোগ, এ দামে উৎপাদন খরচও তুলতে পারছেন না তারা। এ নিয়ে আন্দোলনের মুখে প্রতি কেজি কাঁচা চা পাতার মূল্য ১৮ টাকা নির্ধারণ করে চা পাতা মূল্য নির্ধারণ কমিটি। সেই সঙ্গে চা চাষিদের তিন থেকে চার পাতা সরবরাহ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। ফলে সাত পাতার কাঁচা চা পাতা ফিরিয়ে দিচ্ছেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে কারখানাগুলো তিন থেকে চার পাতার চাপাতা কেনার কথা বললেও চা চাষিরা পড়েছেন বিপাকে। অন্যদিকে ১৮ টাকায় তিন থেকে চার পাতার চা পাতা সরবরাহ করলে তারা লোকশানে পড়বেন বলে জানিয়েছেন। তারা চান তিন থেকে চার পাতা সরবরাহ করতে হলে দাম বাড়াতে হবে। বাংলাদেশ চা বোর্ড পঞ্চগড় আঞ্চলিক অফিসের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও নর্দান বাংলাদেশ প্রকল্পের পরিচালক ড. মোহাম্মদ শামীম আল মামুন বলেন, চায়ের গুণগতমান ঠিক রেখে চা পাতা কাটার জন্য খোলা আকাশ স্কুলের মাধ্যমে আমরা চা চাষিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছি। আমরা সব চাষিকে আড়াই থেকে তিন পাতা কাঁচা চা পাতা সরবরাহ করতে বলি। কিন্তু অনেক চাষি তা মানেন না। ছয় থেকে সাত পাতা কাঁচা চা পাতা থেকে ভালোমানের চা পাতা তৈরি সম্ভব নয়। কারখানা কর্তৃপক্ষেরও এসব চা নেওয়া ঠিক নয়। সেই সঙ্গে চাষিদের সচেতন করার দায়িত্ব কারখানাগুলোরও রয়েছে। এ ব্যাপারে আরও জোড়ালো উদ্যোগ নিতে পারে।  চায়ের মূল্য নির্ধারণ কমিটির সভাপতি এবং পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক জহিরুল ইসলাম বলেন, অনেক চা চাষি নির্ধারিত মানের বাইরে পাতা দিচ্ছেন। যারা ভালোমানের পাতা দিচ্ছেন তারা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন। আমরা কয়েকটি কারখানা পরিদর্শন করেছি। আশা করি নির্ধারিত মূল্যের কম দামে পাতা কেনার অভিযোগ আর থাকবে না।

সর্বশেষ খবর