সোমবার, ১৩ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

পাহাড়ে ঝুঁকিতে বসবাস

ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি

পাহাড়ে ঝুঁকিতে বসবাস

পাহাড়ি জেলা রাঙামাটিতে ঝুঁকিতে বসবাস করছে কয়েক হাজার পরিবার। ফলে চলমান বর্ষায় ফের পাহাড় ধসের শঙ্কা বাড়ছে। বিগত ছয় বছরে অনেক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে উল্লেখ করার মতো ২০১৭ সালের ১৩ জুন। এ দিনে টানা বৃষ্টিতে রাঙামাটিতে ভয়াবহ পাহাড় ধসে প্রাণ হারায় পাঁচ সেনা সদস্যসহ ১২৮ জন। মাটির সঙ্গে বিলীন হয়ে যায় আরও ১৭টি পরিবার। প্রতি বছর এ দিনটিকে আতঙ্কের সঙ্গে স্মরণ করে রাঙামাটিবাসী। কিন্তু যে পাহাড় একসময় মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছিল, সে পাহাড় এখন জনবসতিতে ভরপুর। পাহাড়ের গা ঘেঁষে গড়ে উঠেছে নতুন নতুন হাজারো বসতি। বৃষ্টিতেও পাহাড় ধসের রেশমাত্র নেই কারও চোখেমুখে। এতে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে সচেতন মহলের মধ্যে। কারণ আবারও বৃষ্টির কবলে পাহাড়। তাই নতুন করে ধস নিয়ে বেড়েছে শঙ্কা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাহাড় দখল, অবৈধ বসতি স্থাপন বন্ধ করা না হলে এ বর্ষাতে ঘটতে পাড়ে প্রাণহানি। রাঙামাটি পৌরসভার তথ্য মতে, শুধু রাঙামাটি শহর এলাকায় ১ লাখ ২৫ হাজারের অধিক মানুষ পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে বসবাস করছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো হলো- শহরের শিমুলতলী, নতুন পাড়া, মনতলা, রাঙাপানি, রিজার্ভ, এসপি অফিস সংলগ্ন এলাকা, শহীদ আবদুুল আলী একাডেমি সংলগ্ন ঢাল, পুলিশ লাইন সংলগ্ন ঢাল, স্বর্ণটিলা পাহাড়ের ঢাল, রাজমণিপাড়া পাহাড়ের ঢাল, রেডিও স্টেশনের পাশে শিমুলতলী পাহাড়ের ঢাল, লোকনাথ মন্দির পাহাড়ের ঢাল, আনসার ক্যাম্প সংলগ্ন পাহাড়ের ঢাল, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সংলগ্ন পাহাড়ের ঢাল, চম্পক নগর পাহাড়ের ঢাল, পাবলিক হেলথ পাহাড়ের ঢাল, আমানতবাগ পাহাড়ের ঢাল, মুজিবনগর পাহাড়ের ঢাল এলাকায়। গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাতে বিভিন্ন জায়গায় পাহাড় ধসের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই এরই মধ্যে পাহাড় ধসের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করেছে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, রাঙামাটি পৌর এলাকার ৯টি ওয়ার্ডে ২৯টি আশ্রয় কেন্দ্র সব সময় প্রস্তুত।  পাহাড়বাসীদের সতর্ক করতে অব্যাহত আছে মাইকিংও। আগামীকাল জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্যোগ মোকাবিলায় সভা করা হবে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো পরিদর্শন করে ৩১টি স্থানে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড আগে থেকে স্থাপন করা আছে। এ বিষয়ে প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে। রাঙামাটি পৌর মেয়র মো. আকবর হোসেন চৌধূরী বলেন, এখনো বর্ষা আসেনি। তবে শুরু হয়েছে অবিরাম বৃষ্টিপাত। যে কোনো মুহূতে ঘটতে পারে পাহাড় ধসের ঘটনা। তাই যারা এখনো পাহাড়ের নিচে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে তাদের নিরাপদ স্থানে চলে যেতে পৌরসভার পক্ষ থেকে বার বার তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। প্রসঙ্গত, রাঙামাটিতে পাহাড় ধসে সবচেয়ে বড় ধরনের জানমালের ক্ষতি হয় ২০১৭ সালে ১৩ জুন। সে সময় পাহাড় ধসের ঘটনায় প্রাণ হারায় ১২৮ জন। জেলা প্রশাসনের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, রাঙামাটির ১০টি উপজেলা মিলে পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১৮ হাজার ৫৫৮টি পরিবারের। তার মধ্যে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত ঘর-বাড়ি হলো- ১ হাজার ২৩১টি। আর আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ৯ হাজার ৫৩৭টি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে- বন, বিদ্যুৎ, শিল্প কারখানা, মৎস্য খামার, গবাদি পশু. হাঁস-মুরগি। এ ছাড়া ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফসলি জমিও। যার পরিমাণ ১৮ হাজার ৯৯.৩১ হেক্টর। এ ছাড়া শহর এলাকায় ১৪৫টি স্থানে পাহাড় ধসে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিভিন্ন সড়ক। দেশের সব জেলা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় রাঙামাটি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর