সোমবার, ১৩ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

সত্যি হচ্ছে স্বপ্নের সড়ক

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

সত্যি হচ্ছে স্বপ্নের সড়ক

অবশেষে নানা জটিলতা শেষে সমাপ্তির পথে বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল থেকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মধ্যে সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সত্যি হচ্ছে স্বপ্নের সড়ক। এ সড়কের জন্য জমি অধিগ্রহণ, আধুনিক সড়ক নির্মাণসহ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা। জানা যায়, ২০০৫ সাল পর্যন্ত বগুড়া জেলা শহরে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালই ছিল জেলাবাসীর চিকিৎসার মূল ভরসা। জেলাবাসীর উন্নত চিকিৎসার জন্য ২০০৩ সালের দিকে বগুড়া শহরের সিলিমপুর এলাকায় ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণের কাজ শুরু হয়। আধুনিক চিকিৎসার সব উপকরণ নিয়ে ২০০৬ সালে হাসপাতালটির কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল থেকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে রোগী পরিবহনে নানা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হতে থাকে। একদিকে শহরের বাহিরে অপরদিকে ঢাকা-বগুড়া-রংপুর মহাসড়ক হওয়ার কারণে যানজটে পড়ে রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যেত। রোগী ও মহাসড়কের চাপ কমাতে মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল থেকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মধ্যে একটি সংযোগ সড়কের দাবি তোলে বগুড়াবাসী। সেই সময় শুধু প্রস্তাবনা করা হয়। প্রস্তাবনা সড়কটিই বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার বিভিন্ন উন্নয়নের ধারায় সড়কটির নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নের পথে। সড়ক ও জনপথ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল থেকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মধ্যে সংযোগ সড়ক মোট ১.৮৫ কিলোমিটার। এই পরিমাণ সড়ক নির্মাণে সরকারকে বেশ কিছু মূল্যবান জমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছে। সড়ক নির্মাণের চেয়ে জমি অধিগ্রহণ খরচই বেশি পড়ছে। সড়কটি বিভিন্ন সময়ে নির্মাণ কাজ করে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি নির্মাণ কাজের জন্য সংশোধিত ব্যয়সহ অনুমোদন আগামী ১৪ জুন একনেকে পাস হবে। পাস হলেই বাকি কাজটি দ্রুততার সঙ্গে শেষ করা হবে। মহাসড়ক থেকে আলাদা থাকায় বাইপাস সড়কের মতো কাজ করবে। এতে করে মহাসড়কের ওই স্থানে চাপ কমবে। রোগী পরিবহন সহজ হবে। সময় বাঁচবে। খরচও বাঁচবে। এই সড়কটি স্থানীয় জনগণ ব্যবহার করে দ্রুততার সঙ্গে নিজেদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে। সে কারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে সড়কটি। সড়কটি নির্মাণে মূল অনুমোদন ছিল প্রায় ১০৫ কোটি টাকা। পরবর্তিতে সংশোধিত হয়ে নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা। প্রকল্পটি ২০১৭ সালে শুরু হয়ে ২০২২ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সড়ক বিভাগ থেকে প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য আবেদন করে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধি পেয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, সড়কটি আধুনিক হবে। প্রায় ৪৫ ফুট প্রশস্ত সড়কটিতে সকল প্রকার রোড মার্কিং, প্রয়োজন অনুসারে সেতু ও কালর্ভাট, সড়কের দুই পাশে ড্রেন নির্মাণ করা হবে। সড়কটি যেন দির্ঘস্থায়ী হয় সে কারণে সকল প্রকার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। বগুড়াবাসী যে সব উপায়ে ও নগদ অর্থ খরচ করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেলে যাতায়াত করছে তাতে করে সড়কটি নির্মাণ হলে বছরে ৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকা অপচয় রোধ হবে। এই প্রকল্পের আওতায় জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে ২.৫৭১৮ হেক্টর। এই জমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণ বাবদ নতুন করে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৬৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা।

বগুড়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান জানান, সড়কটির অধিকাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি প্রায় ০.৬ কিলোমিটার সড়কটি নির্মাণের জন্য আগামী ১৪ জুন একনেকে অনুমোদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই অনুমোদন হলে আগামী জুন ২০২৩ সালের মধ্যে কাজটি সম্পন্ন করা হবে। বগুড়াবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল সড়কটি নির্মাণের। সেই স্বপ্ন পূরণ এখন সময়ের বিষয় মাত্র। তবে সড়কটি হবে আধুনিক ও বগুড়াবাসীর ব্যবহারে উপযোগী। সড়কটি নির্মাণ সম্পন্ন হলে এলাকাবাসীর আর্থিক গতিও বৃদ্ধি পাবে। সড়কের দুই পাশের মানুষের যেমন উন্নয়ন হবে ঠিক তেমনি যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের সৃষ্টি হবে।

সর্বশেষ খবর