মঙ্গলবার, ১৪ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা
দুর্ভোগ চরমে

যমুনা গিলে খাচ্ছে বসতঘর

মো. নাসির উদ্দিন, টাঙ্গাইল

যমুনা গিলে খাচ্ছে বসতঘর

টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার তিন ইউনিয়নে যমুনা গিলে খাচ্ছে ঘরবাড়িসহ ফসলী জমি। বর্ষার আগেই যমুনায় শুরু হয়েছে ব্যাপক ভাঙন। চোখের নিমিষেই ঘরবাড়ি ও ফসলী জমি নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সহায়-সম্বল হারিয়ে পরিবার নিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিচ্ছে অনেকেই। নদী গর্ভে শেষ আশ্রয়টুকু চলে যাওয়ায় চরম অনিশ্চয়তায় খোলা আকাশের নিচে দিন কাটছে ভাঙনকবলিত অসহায় মানুষগুলো। তাদের দুর্ভোগ চরমে। অব্যাহত ভাঙনে হুমকির মধ্যে রয়েছে স্কুল, মসজিদ, ঈদগাঁ মাঠ ও ইউনিয়ন পরিষদ ভবনসহ বিস্তীর্ণ ফসলী জমি। প্রতিবারের মতো এবারও যমুনার ভাঙনে  বিলীন হয়ে যাচ্ছে বসতভিটা, রাস্তা ঘাটসহ ফসলী জমি। নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আকস্মিক এ ভাঙন দেখা দিয়েছে। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে এভাবেই যমুনার ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে অসংখ্য পরিবার। ভাঙনে দিশাহারা নাগরপুর উপজেলার যমুনা তীরবর্তী মানুষগুলো। ইতোমধ্যে উপজেলার সলিমাবাদ ইউনিয়নের পাইশা মাইঝাইল, খাষ ঘূনিপাড়া, চরসলিমাবাদ, ভূতের মোড় এবং ভারড়া ইউনিয়নের শাহাজানি, মারমা, উলাডাব এবং দপ্তিয়র ইউনিয়নের নিশ্চিতপুর, কাটি নিশ্চিতপুর, বাক কাটারীসহ বিভিন্ন গ্রামের বসতভিটা ও ফসলী জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মধ্যে রয়েছে আরও অসংখ্য ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও ফসলী জমি। ফলে চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে এসব এলাকার স্থানীয়রা। ভাঙন প্রতিরোধে জনপ্রতিনিধিরা প্রতিবছর নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও স্থায়ী সমাধানের কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। আর পানি উন্নয়ন বোর্ড বর্ষা মৌসুমে জিও ব্যাগ ফেলে দায় সারে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। খাষ তেবাড়িয়া গ্রামের কৃষক মো. দানেজ শেখ বলেন, ২ বছরে আমি ৬ বার ঘর বাড়ি সরিয়েছি। এখন আমার যাবার মতো কোনো জায়গা নেই। ছেলেমেয়ে নিয়ে কি করবো কোথায় যাবো। স্থানীয় বাসিন্দা আলতাব হোসেন বলেন, এবার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমার বাড়ি ভেঙে যায়। ছেলেমেয়েদের এক স্কুলে ভর্তি করলে পরের বছর আরেক স্কুলে দিতে হয়। এতে করে সন্তানদের লেখা পড়া ব্যাহত হচ্ছে। আমাদের  মতো এমন অসহায় অবস্থায় আর জানি কেউ না পড়ে। ভাঙন কবলিত এলাকাবাসী রাবেয়া, আমেনা, মনছের আলী ও রহিম বলেন, আমাদের ঘরবাড়ি, ফসলী জমি সব নদীতে চলে গেছে। এখন আমাদের সহযোগিতা করবে কে। আমরা সব সময় সরকারের কাছে দাবি করে আসছি নদীতে একটি স্থায়ী বেড়িবাঁধ দেওয়ার জন্য। কিন্তু কে শোনে আমাদের কথা। আমরা গরিব মানুষ, আমাদের কথার কোনো দাম নাই। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ছোট বেলা থেকে শুনে আসছি এ নদীতে বেড়িবাঁধ হবে। কিন্তু এতো বয়স হয়ে গেলে আজ পর্যন্ত বাঁধের এক অংশও দেখতে পারলাম না। আর কবে দিবো। নদীর ভাঙনে বাড়িঘর সব শেষ। এখন যেটুকু আছে তা এ ভাঙনে শেষ হয়ে যাবে। প্রতি বছর নদীর ভাঙন দেখা দেওয়ার পর পানি উন্নয়ন বোর্ড নাম মাত্র জিও ব্যাগ ফেলে যায়। এগুলো আমাদের কোনো কাজেই আসছে না। এখন আবার অসময়ে যমুনা নদীর ভাঙন দেখা দিয়েছে। আর এ নদীর তীরে যদি বাঁধ থাকতো তাহলে আমাদের বাড়িঘর ও ফসলী জমি নদী গর্ভে বিলীন হতো না। সলিমাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীদুল ইসলাম অপু বলেন, ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছি দীর্ঘদিন ধরে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে ভাঙন প্রতিরোধে ইতোমধ্যে একটি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড টাঙ্গাইল জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের মধ্যদিয়ে যমুনা পাড়ের হাজারও মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দূর হবে এমনটাই প্রত্যাশা। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ভাঙন রোধে  ইমার্জেন্সি জিও ব্যাগ ফালানোর কাজ চলছে। তবে এটা কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। ভাঙন রোধ ঠেকাতে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের বিকল্প নেই। নদীভাঙন কবলিত এলাকার জনসাধারণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পুনর্বাসন সহায়তা কর্মসূচির আওতায় ক্ষতিগ্রস্ত ৭৬টি পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা করে ৩৮ লাখ টাকার চেক বিতরণ করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর