মঙ্গলবার, ১৪ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

দেড় যুগেও অবসান হয়নি জলাবদ্ধতার

জনদুর্ভোগ চরমে

নাটোর প্রতিনিধি

দেড় যুগেও অবসান হয়নি জলাবদ্ধতার

দিন, মাস, বছর-যুগ সবই পার হয়েছে। দেড় যুগে অনেক নেতা এসেছেন, গেছেন। ভোটারদের মন জয়ে ছড়িয়েছেন প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি। কিন্তু কেউ কথা রাখেননি। নাটোরের লালপুর বাজারের জলাবদ্ধতার  কারণে জনভোগান্তির অবসান হয়নি। বরং গত দেড় যুগ ধরে জনভোগান্তি স্থায়ী রূপ নিয়েছে। গত এক সপ্তাহের বর্ষণে লালপুর বাজারসহ আশপাশের এলাকায় জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে এলাকার মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ইতিপূর্বে একাধিকবার সংস্কার বা প্রতিকারের উদ্যোগ নেওয়া হলেও অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। প্রতিকার না পেয়ে ব্যবসায়ীসহ এলাকাবাসী চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন। এলাকাবাসী জানান, লালপুরের সবচেয়ে ব্যস্ততম এই বাজারের পানি নিষ্কাশনের জন্য ১৯৯৬ সালে একটি ড্রেন নির্মাণ করা হয়। প্রথম দিকে কয়েক বছর এই ড্রেনে জলাবদ্ধতার কিছুটা নিরসন হয়। পরবর্তীতে ড্রেনের ভিতর ময়লা-আর্বজনা ফেলার কারণে ড্রেন বন্ধ হয়ে ভাগাড়ে পরিণত হয়। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই লালপুর বাজারসহ আশপাশের এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এতে বাজারের ব্যবসায়ী, ক্রেতা-বিক্রেতাসহ সাধারণ মানুষকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এদিকে গত এক সপ্তাহের বর্ষণের কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় লালপুর বাজারসহ আশপাশের এলাকায় কৃত্রিম বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি বাজারের আশপাশের বাড়ির উঠানসহ বসতঘরের মধ্যেও পানি প্রবেশ করেছে। ফলে চরম দুর্ভোগ আর সংকটে দিন অতিবাহিত করছেন এলাকার বাসিন্দারা। এ ছাড়া লালপুর বাজারের চারপাশজুড়ে রয়েছে লালপুর শ্রী সুন্দরী পাইলট হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, লালপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ, কে এন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও লালপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এসব প্রতিষ্ঠানে অন্তত ৩/৪ হাজার শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে। বর্ষা মৌসুম আসলেই এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠ জলাবদ্ধতায় বিলে পরিণত হয়। শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজে যাতায়াত করতে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হতে হয়। এ ছাড়া লালপুর বাজার জামে মসজিদের মুসল্লিদের নামাজে যাতায়াতের ক্ষেত্রেও চরম বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, এই ড্রেনের কারণে লালপুর পুরাতন বাজার, আবাসিক এলাকা, উত্তর লালপুর, ম লপাড়া গ্রামসহ আশপাশের ৩/৪ গ্রামেও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। অথচ বাজারের দক্ষিণে পদ্মা নদী আর পশ্চিম পাশে বিশাল জোলা (ক্যানেল) থাকা সত্ত্বেও পানি নিষ্কাশনের বেশ সুযোগ রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিনেও এই ড্রেন সংস্কার কিংবা জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ব্যবসায়ীরা জানান, লালপুর বাজারে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয়-বিক্রয় করতে আসে কয়েক হাজার মানুষ। এখানকার  পণ্য রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু জলাবদ্ধতার কারণে ব্যবসায়ীদের কাজকর্ম ব্যাহত হয়। লালপুর সদর বাজার বণিক সমিতির সভাপতি আ স ম মাহামুদুল হক মুকুল বলেন, বাজারের কিছু ব্যবসায়ী তাদের নিজেদের দোকানের সামনে রাস্তার ওপর মাটি দিয়ে উঁচু করে নিয়েছে। এ কারণে বৃষ্টি হলে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এলাকাবাসী বাজারের ভাঙা রাস্তাগুলো ও পানি নিষ্কাশনের ড্রেনের সংস্কারের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। সদর ইউপি চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক পলাশ বলেন, বাজারের পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনের সংস্কার কাজ শুরু করা হবে। এ ছাড়া বাজারের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে  রাস্তাগুলো উঁচু করে নতুনভাবে নির্মাণ করা হবে।

লালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীমা সুলতানা বলেন, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ও বাজারের গলির রাস্তা নির্মাণসহ উন্নয়নমূলক কাজের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর