বুধবার, ১৫ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

মৃৎশিল্পে জীবনজীবিকা

মাহবুবুল হক পোলেন, মেহেরপুর

মৃৎশিল্পে জীবনজীবিকা

মেহেরপুরে মাটির পণ্য তৈরিতে ব্যস্ত শিল্পীরা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা শহর থেকে আট কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মৃৎশিল্পের গ্রাম খ্যাত আমতৈল। এই গ্রামের মানুষ ব্রিটিশ আমল থেকে মৃৎশিল্পের কাজ করে আসছে। শিল্পটির মূল উপকরণ হচ্ছে মাটি। কালের বিবর্তনে অভাব দেখা দিয়েছে মাটির। তাছাড়া আগের মতো কদর নেই মাটির তৈরি পণ্যের। একসময় যে মাটি বিনা খরচে পাওয়া যেত এখন তা চড়া দমে কিনতে হয়। ফলে এ পেশা বাদ দিয়ে অনেকে কৃষিসহ অন্য পেশায় ঝুঁকছেন। তবে বাপ-দাদার পেশাকে এখনো আঁকড়ে আছে আর্ধশত পরিবার। অর্ধশত পরিবারে সঙ্গে আরও দেড়-দুই হাজার মানুষ এই পেশায় জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে। আমতৈল গ্রামের মৃৎ কারখানায় নারী-পুরুষ সবাই মিলে প্রতিনিয়ত কাজ করছেন। জানা যায়, একদিকে মাটি ও আনুষঙ্গিক জিনিসের দাম বেড়েছে। সেই তুলনায় বাড়েনি মাটির তৈরি তৈজসপত্রের মূল্য। অন্যদিকে ফ্লাস্টিকের চমকপ্রদ পণ্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় নিপুণ শিল্পকর্ম খচিত মাটির জিনিসের চাহিদা কমেছে। ফলে নিপুণ হাতের শিল্পকর্মে কাদামাটি হয়ে ওঠা নিত্যব্যবহার্য বাসনপত্র, ফুলের টব, নান্দা, খেলনাসহ কারুকাজ করা শোপিসের দাম পাচ্ছে না বলে জানান মৃৎশিল্পীরা। তাই এ পেশাকে টিকিয়ে রাখতে এখন পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য তৈরি করা হচ্ছে মাটির পাত ও রিংস্লাব। এ রিংস্লাব জেলার চাহিদা মিটিয়ে পাশের কয়েকটি জেলায়ও বিক্রি হচ্ছে।  মৃৎশিল্পী জালাল উদ্দীন বলেন, এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত অনেকের নিজস্ব জমি নেই। কারখানার মালামাল তৈরি ও চুলার জন্য জমি লিজ নিতে হয়। এক বিঘা জমি লিজ নিতে বছরে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা দিতে হয়। বছরের মাত্র ৮-৯ মাস চলে এ ব্যবসা। অনেক মৃৎশিল্পী বিভিন্ন সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করেছেন। আনুষঙ্গিক খরচ মিটিয়ে কোনোরকম লাভ থাকে। সরকার স্বল্প সুদে কুমারদের ঋণের ব্যবস্থা করলে সবাই স্বাবলম্বী হতে পারত। হবিবুর রহমান নামে একজন বলেন, আমাদের গ্রামের যে বাড়িতেই যাবেন দেখবেন পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও বাড়ির উঠানে মাটির চাকি তৈরির কাজে ব্যস্ত। আশপাশের লোকজন আমাদের ডাকে চাকির গ্রাম বলে। গাংনী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা কাজি আবুল মনসুর জানান, ওই গ্রামের কুমাররা ঋণের জন্য আবেদন করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর