বুধবার, ২২ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

বদলে যাবে দক্ষিণের মৎস্য খাত

পাথরঘাটা (বরগুনা) প্রতিনিধি

বদলে যাবে দক্ষিণের মৎস্য খাত

জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার বেলগাছা গ্রামে বন্যায় প্লাবিত বসতবাড়ি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

দুই দিন পরই স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন। গোটা দক্ষিণাঞ্চলসহ সারা দেশে আনন্দে উদ্ভাসিত; বরগুনা জেলার মানুষের মধ্যে আবেগ, উচ্ছ্বাসের ঢেউ সমানে বয়ে যাচ্ছে। যারা যুগের পর যুগ ধরে একটি সেতুর অভাবে সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন, তারা আজ আত্মপ্রত্যয়ী। অন্যান্য শ্রেণি-পেশার মতো কৃষক, মৎস্য ও কৃষি পণ্যের ব্যবসায়ীরা উচ্ছ্বসিত। কৃষি ও মৎস্য নির্ভর এ জেলার মৎস্য খাতে ‘পদ্মা সেতু’র ব্যাপক প্রভাব পড়বে, মৎস্য অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। দক্ষিণাঞ্চলে মৎস্যসম্পদে বিপ্লব ঘটাবে পদ্মা সেতু। সামুদ্রিক মাছের অন্যতম বড় পাইকারি বাজার বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র। এ বন্দর থেকে ইলিশসহ বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ সড়ক পথে নিয়ে যাওয়া হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। কয়েক দশক ধরে ফেরিঘাটে যানজটের কারণে যথাসময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন না ব্যবসায়ীরা। অনেক সময় ফেরিঘাটে দিন পার হয়ে যায়। এতে মাছের গুণগত মান খারাপ হয়ে যাওয়ায় ভালো দাম পায় না ব্যবসায়ীরা। পদ্মা সেতু চালু হলে মাছ ব্যবসায়ী আসবে আমূল পরিবর্তন। যার সুফল পাবেন ব্যবসায়ী, পাইকার, জেলে ও মৎস্য শ্রমিকরা।

পাথরঘাটা মৎস্য বন্দর সূত্রে জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে (বিএফডিসি) প্রায় ৪ হাজার ৮০০ টন সামুদ্রিক মাছ বিক্রি হয়েছে, যার অর্ধেকের বেশি ছিল ইলিশ। অবতরণ কেন্দ্রে বিক্রি করা মাছের ওপর শতকরা ১ দশমিক ২৫ শতাংশ রাজস্ব আদায় করে সরকার। পদ্মা সেতু চালু হলে অবতরণ কেন্দ্রটিতে সামুদ্রিক মাছ রপ্তানি বাড়বে। এতে সরকারের রাজস্ব আরও বাড়বে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

পাথরঘাটা মৎস্য আড়তদার সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর জোমাদ্দার বলেন, ‘আমরা মাছ কিনে বিক্রির জন্য দেশে বিভিন্ন বাজারে পাঠাই। সেখানে পৌঁছাতে আমাদের ফেরি পার হতে হয়। এতে অনেক সময় লাগে, মাঝে মাঝে ফেরি আটকে সময়মতো বাজার না পেলে অন্য বাজার খুঁজতে হয়। তাতে ইলিশসহ সব মাছেরই মান নষ্ট হয়ে যায়। ভালো দামে বিক্রি করা যায় না। পদ্মা সেতু উদ্বোধন হলে এসব সমস্যা আর থাকবে না। আমূল পরিবর্তন ঘটবে এই বন্দরের।’

পাথরঘাটা মৎস্য পাইকার সমিতির সভাপতি মো. সাফায়েত মুন্সি বলেন, ভরা মৌসুমে পাথরঘাটা মৎস্য বন্দর থেকে প্রতিদিন কয়েকশ ট্রাক মাছ নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে যায়। কিন্তু সড়ক পথ খুব খারাপ হওয়াতে অনেক সময় গন্তব্যে যেতে দেরি হওয়াতে মাছ নষ্ট হয়। ফলে পাইকারদের অনেক লোকশান গুনতে হয়। পদ্মা সেতু হওয়াতে দ্রুত যেতে পারবে এবং সময় কম লাগাতে মাছের দামও ভালো পাবে। বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ‘মাছের ব্যবসায় সুদিন ফেরার আশায় পদ্মা সেতু উদ্বোধনের প্রহর গুনছেন দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবসায়ীরা। পদ্মা সেতু চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলের এই বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে মাছের ব্যবসায় সুদিন ফিরে আসবে। সেতু না থাকায় মাছ কিনে ব্যবসায়ীরা সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে পারতেন না। ফেরির জন্য অপেক্ষা করতে হতো। এতে নষ্ট হয়ে যেত মাছের মান, ভালো দাম পাওয়া যেত না। পদ্মা সেতু চালু হলে সকাল-বিকাল গাড়ি যেতে পারবে। এতে প্রতিদিনের মাছ প্রতিদিন বিক্রি হবে। রাজধানীবাসী এবং অন্য এলাকার মানুষ সমুদ্রের তাজা মাছ খেতে পারবেন।’ বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক লেফটেন্যান্ট এম লুৎফর রহমান বলেন, ‘পাথরঘাটা থেকে ব্যবসায়ীদের মাছ কিনে ফেরি পার হয়ে যেতে হয়। এতে অনেক সময় লাগে। সেই সঙ্গে গুণগত মানও কমে যায়। পদ্মা সেতু চালু হলে এখান থেকে কোনো ফেরি পার হতে হবে না। কম সময়েই দেশের যে কোনো জায়গায় পৌঁছানো সম্ভব হবে। তখন বন্দরে ট্রলার আসবে বেশি, ফলে বাড়বে এ অবতরণ কেন্দ্রের রাজস্ব আদায়। এ ছাড়া উপজেলায় প্রায় ৩০ হাজার জেলে ও শ্রমিক রয়েছে, তাদের সবার ভাগ্যের পরিবর্তন আনতে পারে এই সেতু।’

সর্বশেষ খবর