বুধবার, ২৯ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

হাটে গরু-ছাগল বেশি দামও চড়া

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

হাটে গরু-ছাগল বেশি দামও চড়া

কয়েক দিন পর কোরবানির ঈদ। বগুড়ার হাটে হাটে আগের থেকে বেশি গরু, ছাগল উঠতে শুরু করেছে। জেলায় চাহিদার তুলনায় বেশি পশু থাকলেও এবার দামও চড়া। গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় পশু পালনে খরচ বেড়েছে। এদিকে দাম বেশি হওয়ায় ক্রেতারা আরও অপেক্ষা করছেন, তারা বিভিন্ন হাট ঘুরে দেখছেন পছন্দের পশু ক্রয় করতে। বগুড়ার হাটগুলোতে বিপুলসংখ্যক পশু আসলেও, ক্রেতা কম, দাম নিয়েও ক্রেতা-বিক্রেতাদের মাঝে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। জানা যায়, উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ হাট বগুড়ার মহাস্থানগড় গরুর হাট। এই হাটের সঙ্গে, ঘোড়াধাপ, সুলতানগঞ্জ হাট, শেরপুর হাট, সাবগ্রাম হাট, পেরী হাট, নামুজাসহ প্রায় শতাধিক স্থানে হাট বসে। এসব হাটে স্থানীয়ভাবে যেমন কোরবানির পশু কেনাবেচা হয় ঠিক তেমনি অন্য জেলার জন্যও পশু কেনাবেচা হয়। বগুড়ার খামারিরা কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে খামারে কোরবানি উপযোগী পশু লালন-পালন করে লাভের আশা করছেন। খামারিরা দেশি জাতের প্রচুর গরুর লালন পালন করেছে। খামারি এখন কোরবানির হাটকে কেন্দ্র করে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। নিজেদের খামারের গরু, ছাগল, ভেড়াসহ কোরবানির পশু হাটে তোলার আয়োজন চলছে। এদিকে বগুড়ার হাটগুলো কেন্দ্র করে মৌসুমি গরুর বেপারিদের আনাগোনা বেড়েছে। গরু ব্যবসায়ীরা গরু এক জেলা থেকে অন্য জেলার হাটে বিক্রি করে থাকেন। গত বছর বগুড়ার হাটগুলোতে চট্টগ্রাম, সিলেট, রংপুরের ব্যবসায়ীদের গরু ক্রয় করতে দেখা গেছে। বগুড়া সদরে মোট খামারি রয়েছে ৩ হাজার ৪২০টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গরুর খামার গড়েছে টিএমএসএস-এর নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপিকা ড. হোসনে আরা বেগম। তার খামারে কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে ১ হাজার ২২০টি। এই খামারে ষাঁড় আছে ৮৮৫টি। অন্যান্য পশুও কোরবানিযোগ্য করে গড়ে তোলা হয়েছে।

তিনি বগুড়ায় মানবসেবার পাশাপাশি কোরবানিযোগ্য গরুর খামার গড়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। বগুড়া জেলায় প্রাকৃতিক খাদ্য দিয়েই অস্ট্রেলিয়ার ফ্রিজিয়ান, আমেরিকার ব্রাহমা ক্রস, ভারতীয় শাহিওয়াল, নেপালের গিরসহ দেশি জাতের গরু, ছাগল পালন করে এখন ভালো দামের প্রত্যাশা করছেন খামারিরা। প্রতি বছরই ঈদ এলে গরু বিক্রি করে বাড়তি আয় করেন তারা। ছোট-বড় খামারের পাশাপাশি ঈদকে সামনে রেখে চার মাস ধরে অনেকেই গরু মোটাতাজা করে থাকেন। খামারিরা বলছেন, চলতি বছর পশুখাদ্যের দাম ও শ্রমিকের মজুরিসহ অন্যান্য খরচ বেড়ে যাওয়ায় পশুপালন খরচও বেড়েছে কয়েক গুণ। এতে করে কোরবানির পশুর দাম গত বছরের চেয়ে বেশি। বগুড়ার ধাপের হাট ও মহাস্থান হাট ঘুরে দেখা গেছে, বিপুলসংখ্যক ক্রেতা তাদের গরু, ছাগল নিয়ে হাটে এসেছেন। তবে ক্রেতার সংখ্যা কম থাকায় বেচাকেনা তেমন নেই। পশু বিক্রেতা সামছুল হক জানান, এবার পশু লালন-পালনে খরচ বেড়ে গেছে, এ জন্য গরুর দামও বেশি। ক্রেতাদের আনাগোনা কম বলে জানান। এ ছাড়া প্রতিবছর রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা বগুড়ার হাট থেকে গরু, ছাগল কিনতে আসেন। এবারো তাদের কেনাকাটা শুরু হয়েছে। কোরবানির ঈদ যত কাছে আসবে হাট বাজারে ততটাই ভিড় বাড়বে। জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতর কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে জেলার মোট ১২টি উপজেলার ৪৬ হাজার ১৫ জন খামারি মোট ৪ লাখ ২৭ হাজার ২৯৫টি গবাদি পশু কোরবানিযোগ্য করে তুলেছেন। এ বছর জেলায় কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে পশুর চাহিদা রয়েছে ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৩৭৫টি। চাহিদার অতিরিক্ত পশু রয়েছে ৬৭ হাজার ৯২০টি। পশুগুলোর মধ্যে গরু (ষাঁড়, বলদ ও গাভী) ২ লাখ ৬৭ হাজার ৭৯৮টি, মহিষ ১ হাজার ৭৩৩টি, ছাগল ১ লাখ ২৯ হাজার ৫৩৮টি এবং ভেড়া ২৮ হাজার ২২৬টি। গেল ঈদে এ জেলায় প্রায় সাড়ে ৩ লাখ পশু জবাই করা হয়। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. সাইফুল ইসলাম, মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ওষুধ ব্যবহার না করে দেশি খাবার খাইয়ে পশু মোটাতাজা করার জন্য কৃষক ও খামারিদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে জানান। বাজারে দেশি গরুর চাহিদা বেশি থাকায় আশা করছি, খামারি ও কৃষকরা লাভবান হবেন। বগুড়ার সবচেয়ে বড় গরুর খামার গড়েছেন টিএমএসএস’র নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপিকা ড. হোসনে আরা বেগম। তিনি জানান দেশের জন্য সর্বদা কাজ করে চলেছে টিএমএসএস। তারই ধারাবাহিকতায় বগুড়ায় সবচেয়ে বড় খামার গড়ে তোলা হয়েছে। যাতে করে এই অঞ্চলের মানুষ সুলভ মূল্যে গরু ক্রয় করতে পারে। পবিত্র ঈদুল আজহার ঈদে কোরবানি দিতে পারে।

সর্বশেষ খবর