মঙ্গলবার, ৫ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

টাঙ্গাইলে কোরবানির জন্য ৮৭ হাজার পশু প্রস্তুত

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

টাঙ্গাইলে কোরবানির জন্য ৮৭ হাজার পশু প্রস্তুত

টাঙ্গাইলে আসন্ন কোরবানির ঈদ সামনে রেখে জেলায় ৮১ হাজার ৫টি পশুর চাহিদার বিপরীতে ৮৭ হাজার ৯১টি পশু প্রস্তুত রয়েছে। এ জন্য সরকারি হিসাবে শতাধিক হাট-বাজার থাকলেও অস্থায়ী পশুর হাট রয়েছে প্রায় ১০০টি। এসব হাট-বাজারে কোরবানির পশু বিকিকিনির জন্য আলাদা শেড নির্মাণ, বাঁশ দিয়ে খুঁটি ও বেড়া দেওয়া এবং ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। জানা গেছে, টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলায় সরকারি হিসাবে হাট-বাজার রয়েছে প্রায় ২০০টি। এর মধ্যে গরু-ছাগলের হাট রয়েছে শতাধিক। এ ছাড়া কোরবানির ঈদ উপলক্ষে এবার প্রায় ৬০টি অস্থায়ী গরুর হাট বসানো হচ্ছে। ১২টি উপজেলার গরু-ছাগলের হাটগুলোর মধ্যে- বঙ্গবন্ধু সেতুসংলগ্ন ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী গরুর হাটটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর হাট হিসেবে পরিচিত। এ ছাড়া শিয়ালকোল, নিকরাইল, অর্জুনা, আগতেরিল্লা, বামনহাটায় গরু বিকিকিনি হয়ে থাকে। ধনবাড়ীতে কদমতলী, কেন্দুয়া, কেরামজানী, বলদীআটা, মুশুদ্দি, পাইস্কা, জাগিরাচালা। মধুপুরে লাউফুলা, কাকরাইদ, শোলাকুড়ি, মহিষমারা, চাপড়ী, গাংগাইর। গোপালপুর উপজেলায় সাজনপুর, গোপালপুর, ঝাওয়াইল, ভেঙ্গুলা, বাংলাবাজার, নলীনবাজার, মোহনপুর, আলমনগর ও নলহরা। ঘাটাইলে দেউলাবাড়ী, ধলাপাড়া, কদমতলী, ডেলুটিয়া, সাগরদীঘি, গারোবাজার, ব্রাহ্মণশাসন, মাকরাই। কালিহাতীতে কস্তুরীপাড়া, পৌজান, বর্গা, বলধী, আউলিয়াবাদ (ভন্ডেশ্বর), মগড়া, মরিচা, রতনগঞ্জ, এলেঙ্গা, সয়া, রামপুর। টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় শহরের বেবিস্ট্যান্ড, করটিয়া, আয়নাপুর, যুগনী, ধরেরবাড়ী, তোরাপগঞ্জ, ওমরপুর, কাকুয়া। সখীপুরে ইন্দারজানী, বহেড়াতৈল, গজারিয়া, নলুয়া, নাটশালা, তক্তারচালা, বড়চওনা, কচুয়া, কুতুবপুর, ছিলিমপুর। বাসাইল উপজেলায় বাসাইল সদর। দেলদুয়ারে লাউহাটি, রূপসী, এলাসিন, ফাজিলহাটি, দেউলী, ভুরভুরিয়া। নাগরপুরে সলিমাবাদ, তেবাড়িয়া, খোরশেদ মার্কেট, শাহজানী, ভারড়া, সহবতপুর। মির্জাপুর উপজেলায় ফতেহপুর, জামুর্কী, দেওহাটা, তরফপুর, বহুরিয়া। এসব হাট-বাজারগুলোতে নিয়মিত গরু-ছাগল বেচাকেনা হয়ে থাকে।

কোরবানির ঈদ সামনে রেখে এসব হাট-বাজার ছাড়াও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও জনবহুল এলাকায় অস্থায়ী গরুর হাট বসানোর প্রস্তুতি চলছে। টাঙ্গাইলের পশু খামারি ও প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা ওইসব হাটগুলোতে পশু ওঠানোর জন্য পালিত পশু পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। সরকারি-বেসরকারি হাটগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা ছাড়াও অস্থায়ী হাট বসানোর জন্য বাঁশের ঘের, বেড়া, খুঁটি লাগানো হচ্ছে। এ ছাড়া অনলাইন ও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পশুর ছবি আপলোড করে অনেকে পশু বিক্রির চেষ্টা করছেন- কেউ কেউ আশানুরূপ সফলও হচ্ছেন। প্রান্তিক কৃষক, খামারি ও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা জানান, টাঙ্গাইলে দেশীয় জাতের পশুর পাশাপাশি নেপালি, হরিয়ানা, সিন্ধি জাতের গরু-ছাগল, মহিষ ও ভেড়াও প্রস্তুত করা হয়েছে। দেশীয় ও প্রাকৃতিক উপায়ে খড়, ভুসি, খৈল, আখের গুড়, কাঁচা ঘাস এবং পুষ্টিকর দানাদার খাবার খাওয়ানোর মাধ্যমে পশুগুলো মোটাতাজাকরণ করা হয়েছে। তারা কোনো প্রকার রাসায়নিক ওষুধ বা হরমোন জাতীয় ইনজেকশন প্রয়োগ না করে সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া মোটাতাজা করেছেন। পশুর শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে পশুর মাথার ওপর বৈদ্যুতিক পাখা লাগানো হয়েছে। ভেটেরিনারি ডাক্তাররা নিয়মিত পশুর চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। তারা আরও জানান, কোরবানিকে কেন্দ্র করে তারা বাড়তি আয় করে থাকেন। কেউ নিজে পালন করা গরু আবার কেউ ঈদের ৬-৭ মাস আগে বাজার থেকে কিনে গরু লালন-পালন করে প্রস্তুত করেন। ক্রেতারা সাধারণত কোরবানির ঈদের এক মাস-দেড় মাস আগে থেকে খামারিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে থাকেন- এবারও করেছেন। ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা মূল্যের পশুগুলো অধিকাংশ মধ্যবিত্তদের কোরবানির চাহিদা মেটাবে। প্রথমদিকে কোরবানির পশু বেচাকেনা তেমনভাবে শুরু না হলেও শেষ সময়ে পশু বিক্রি পুরোপুরি শুরু হয়। তবে গো-খাদ্যের চড়া দামে পশু লালন-পালন করে ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে মালিকরা অনেকটা শঙ্কায় রয়েছেন। টাঙ্গাইল জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রমতে, জেলায় এবার কোরবানির পশুর মোট চাহিদা ৮১ হাজার ৫টি। সে লক্ষ্যে জেলায় এবার মোট ৮৭ হাজার ৯১টি পশু প্রস্তুত রয়েছে। মোট চাহিদার চেয়ে ৬ হাজার ৮৬টি পশু বেশি প্রস্তুত রয়েছে। মোট পশুর মধ্যে ৪৪ হাজার ৮২৭টি ষাঁড়, ৬ হাজার ৭টি বলদ, ৮ হাজার ২৪৭টি গাভী, ২৩৩টি মহিষ (মেষ), ২৪ হাজার ১৮২টি ছাগল, ৩ হাজার ৫৬৪টি ভেড়া এবং উট-দুম্বাসহ অন্যান্য ৩২টি।

সূত্র জানায়, গত ঈদুল আজহায় কোরবানির পশুর চাহিদা ছিল ৭৩ হাজার ৯৭৭টি এবং প্রস্তুত করা হয়েছিল ৮০ হাজার ২০০টি। ২০২০ সালের চাহিদা ছিল ৭৩ হাজার ৫৪৭টি এবং প্রস্তুত করা হয় ৯০ হাজার ৫২২টি। খামারি দুলাল হোসেন চকদার, রাশেদুল ইসলাম, হেকমত সিকদার, কৃষক নাহিদ হোসেন, লাবু মিয়া, আবদুর রশিদসহ অনেকেই জানান, ঈদ সামনে রেখে তাদের মতো অনেক কৃষক ও খামারি ব্যস্ত সময় পার করছেন। দেশীয় খাদ্য খাওয়ানোর মাধ্যমে পশুগুলো মোটাতাজা করেছেন। ঈদের বাজারে কাক্সিক্ষত দাম পেলে গরু পালনে তারা আরও উৎসাহিত হবেন। তারা জানান, ভারতসহ বাইরের দেশ থেকে গরু-মহিষ আমদানি করা হলে প্রান্তিক কৃষক ও খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। সে জন্য দেশের বাইরে থেকে গরু-মহিষ আমদানি বন্ধ করার দাবি জানান তারা।

টাঙ্গাইল জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রানা মিয়া জানান, প্রান্তিক কৃষক ও খামারিদের লালন-পালন করা পশুর প্রাথমিক তালিকায় এ সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাস্তবে মাঠ পর্যায়ে কোরবানি হিসেবে এ সংখ্যা আরও বাড়বে। তারা খামারি ও প্রান্তিক কৃষকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। পশুর যে কোনো সমস্যায় তারা সহযোগিতা দিয়ে থাকেন। এ ছাড়া স্থায়ী বা অস্থায়ী প্রতিটি কোরবানির পশুর হাটে এবার ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম দায়িত্ব পালন করবে।

সর্বশেষ খবর