মঙ্গলবার, ৫ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা বঞ্চিত ১৬৯ শিক্ষার্থী

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

কুড়িগ্রামের রৌমারীতে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের উপবৃত্তি থেকে ১৬৯ জন শিক্ষার্র্থী বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি রৌমারী উপজেলার যাদুরচর ডিগ্রি কলেজে ঘটেছে। এ নিয়ে ওই কলেজের উপবৃত্তি বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা গত বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেয়। আর এ ঘটনায় কলেজের গভর্নিং বডি ও অধ্যক্ষের দ্বন্দ্বকে দায়ী করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, দারিদ্র্যপীড়িত পিছিয়ে পড়া উপজেলা হিসেবে রৌমারী উপজেলাকে শতভাগ উপবৃত্তির আওতাভুক্ত করে। ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে যাদুরচর ডিগ্রি কলেজের ১৬৯ জন শিক্ষার্থী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উপবৃত্তির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও জমা দেন। কিন্তু গত ২১ এপ্রিল ছিল আবেদনের শেষ তারিখ। আর তা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট সমন্বিত উপবৃত্তি কর্মসূচির উপ-পরিচালকের এক চিঠিতে বলা হয়, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কার্যক্রম সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হলে সৃষ্ট যে কোনো সমস্যার জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান এবং উপজেলা/থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দায়ী থাকবেন। সূত্রে জানা যায়, যাদুরচর ডিগ্রি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা মজিবুর রহমান বঙ্গবাসী দীর্ঘদিন সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্‌যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী ডিগ্রি পাস ছাড়া ডিগ্রি কলেজের কেউ সভাপতি হতে পারবেন না। বিগত ২০১৫ সালে যখন যাদুরচর কলেজে ডিগ্রি খোলা হয় সে সময় তৎকালীন এমপি মো. রুহুল আমিন পদাধিকার বলে সভাপতি নিযুক্ত হন।

২০১৭ সালে জানুয়ারিতে মজিবুর রহমান নকল ডিগ্রি পাস সনদে সভাপতি নির্বাচিত হন। কলেজ অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম নকল সনদের বিরুদ্ধে জাতীয় বিশ্ববিদ্‌যালয়ে সনদ যাচাইয়ের জন্য আবেদন করেন। বোর্ড তদন্তে তার সনদ জাল প্রমাণিত হলে সভাপতি পদ চলে যায়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এই নিয়ে অধ্যক্ষ ও প্রতিষ্ঠা সভাপতির দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছে। এরপর গত বছর ৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় বিশ্ববিদ্‌যালয় মো. আবদুস সালাম মন্ডলকে গভর্নিং বডির সভাপতি অনুমোদন দেন। সভাপতি অনুমোদনকৃত সদস্যদের নিয়ে ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ সালে প্রথম সভা করা জন্য নোটিস খাতায় সব সদস্যের সাক্ষর নেন। পরে সভা না করে গোপনে সভাপতি আবদুস সালাম মন্ডল, প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মজিবুর রহমান বঙ্গবাসি, শিক্ষক প্রতিনিধি সহকারি অধ্যক্ষ সফিকুল ইসলাম, আনছার আলী প্রভাষক (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি), রফিকুল ইসলাম (প্রভাষক বাংলা) যোগসাজশে অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলামকে সাময়িক বহিষ্কার করেন এবং উপাধ্যক্ষ সফিকুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যেক্ষের দায়িত্ব দেন। এ নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা হয়। দীর্ঘ সময় ধরে তা চালু থাকা ও দ্বন্দ্বের কারণে অভিভাবকরা মনে করেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের উপবৃত্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছে এ ১৬৯ জন শিক্ষার্থী। ওই কলেজের ২০২১-২২ শিক্ষবর্ষের শিক্ষার্থীরা জানায়, কলেজ কর্তৃক নির্দেশনা অনুযায়ী নির্ধারিত সময় প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র কলেজের অফিস কক্ষে জমা দেওয়া হলেও একজন শিক্ষার্থীও উপবৃত্তির টাকা পায়নি। যাদের চক্রান্তে এমন ঘটনা ঘটেছে তাদের বিচারসহ উপবৃত্তির আওতায় আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানায় তারা। যাদুরচর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির তালিকা পাঠাতে অফিস সহকারী মোস্তাফা কামাল ও মাসুদ পারভেজকে লিখিত নির্দেশনা দিলেও তারা তা মানেননি। এ কারণে ১৬৯ জন শিক্ষার্থী উপবৃত্তির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এ ঘটনায় অফিস সহকারী মোস্তফা কামাল ও মাসুদ পারভেজকে শোকজ করা হয়েছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আইবুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় আমি অধ্যক্ষকে বারবার তাগিদ দেওয়ার পরও কোনো কাজ হয়নি। নির্র্ধারিত তারিখের শেষ দিন অনেক যোগাযোগ করেও তাদের দ্বারা শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির অনলাইন করাতে পারিনি। এটা মূলত কলেজ পরিচালনা কমিটির সঙ্গে অধ্যক্ষের মামলা-মোকদ্দমা ও দ্বন্দ্বই প্রধান কারণ। তবে এ ব্যাপারে রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, মূলত ওই কলেজে অধ্যক্ষ ও সভাপতির দ্বন্দ্বের জেরে ঘটনা ঘটছে বলে জেনেছি। এ ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সর্বশেষ খবর