শিরোনাম
মঙ্গলবার, ৫ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

হিলি চেকপোস্টে যাত্রী সেবার মান বাড়েনি

হিলি প্রতিনিধি

করোনার কারণে দীর্ঘ দুই বছর বন্ধের পর দিনাজপুরের হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যাত্রী পারাপার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। করোনার প্রকোপ কাটিয়ে উঠে এই পথ দিয়ে দিন দিন যাত্রী পারাপার বাড়লেও সেবার মান বাড়েনি বলে অভিযোগ যাত্রীদের। সেবার মান বাড়লে যাত্রী পারাপার বাড়ার সঙ্গে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে দাবি তাদের। এদিকে সেবার মান বাড়াতে সবধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সড়ক ও রেলপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় ব্যবসা, চিকিৎসা, ভ্রমণসহ নানা কাজে কলকাতা, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই দিল্লিসহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে যেতে হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে যাতায়াত করেন অনেক পাসপোর্ট যাত্রীরা। কিন্তু করোনার কারণে ২০২০ সালের ২৩ মার্চ থেকে এই পথ দিয়ে যাত্রী পারাপার বন্ধ হয়ে যায়। করোনার প্রকোপ কিছুটা কমলে ২০২১ সালের ১৬ মে হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের কার্যক্রম শুরু হলেও ভারত যাত্রী গ্রহণ না করায় এই পথ দিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাত্রী যাওয়া বন্ধ ছিল। যদিও এই সময়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে যাত্রী আসতে পারত। পরবর্তীতে চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল থেকে এই পথ দিয়ে দুই দেশের মাঝে যাত্রী পারাপার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

এতে করে চরম খুশি এই পথ দিয়ে চলাচলরত পাসপোর্ট যাত্রীরা। হিলি কাস্টমস কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে ১৪ এপ্রিল থেকে যাত্রী পারাপার শুরুর পর ওই এপ্রিল মাসে ১ হাজার ৫৬৯ জন পাসপোর্ট যাত্রী ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছে। একই মাসে বাংলাদেশ থেকে ভারতে গিয়েছে ৮৪২ জন যাত্রী যা থেকে ভ্রমণকর বাবদ রাজস্ব আয় হয়েছে ৪ লাখ ২১ হাজার টাকা। একইভাবে মে মাসে সেই সংখ্যা বেড়ে ভারত থেকে ৪ হাজার ৬৭৪ জন যাত্রী দেশে এসেছে আর বাংলাদেশ থেকে ভারতে গিয়েছে ৪ হাজার ৫১২ জন পাসপোর্ট যাত্রী যা থেকে ভ্রমণকর বাবদ রাজস্ব আয় হয়েছে ২২ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। সদ্য সমাপ্ত জুন মাসে ভারত থেকে ৫ হাজার ৭৪০ জন যাত্রী দেশে এসেছে আর বাংলাদেশ থেকে ভারতে গিয়েছে ৭ হাজার ৪৭৯ জন পাসপোর্ট যাত্রী। যা থেকে ভ্রমণকর বাবদ রাজস্ব আয় হয়েছে ৩৬ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। ভারত থেকে দেশে আসা পাসপোর্ট যাত্রী পুষ্পা রানী বলেন, আমার বাবার বাড়ি বাংলাদেশে কিন্তু করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরে পাসপোর্টে যাত্রী পারাপার বন্ধ থাকার কারণে খুব সমস্যার মধ্যে পড়ে গিয়েছিলাম। না আমি বাবা মায়ের সঙ্গে দেখা করতে আসতে পেরেছি না আমার বাবা মা ভারতে আমাকে দেখতে যেতে পারেনি এই ইমিগ্রেশন খোলা না থাকার কারণে। বর্তমানে ইমিগ্রেশন খোলার কারণে আমি ভারত থেকে বাংলাদেশে আসতে পারলাম বাবা মায়ের সঙ্গে দেখা করতে যেতে পারছি। টাকা পয়সা খরচ যাই হোক যেতে পারছি এটাই আমাদের জন্য বড় সুবিধা হয়েছে। ভারত থেকে বাংলাদেশে ঘুরতে আসা সজল কুমার বলেন, আমরা ভারত থেকে বাংলাদেশে ঘুরতে এসেছি আত্মীয়স্বজন রয়েছে তাদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করতে। আমরা ভারত থেকে এসেছি দীর্ঘক্ষণ হয়ে গেল আমাদের ইমিগ্রেশনের কাজকর্ম শেষ কিন্তু এখানে খাবারের কোনো ভালো হোটেল নেই। না খেয়েই ভারত থেকে এসেছি পথেও কোনো কিছু খেতে পারিনি কিন্তু এখানে যদি কোনো ভালো হোটেল থাকত ও খাওয়ার ব্যবস্থা থাকত তাহলে খুব ভালো হতো আমাদের মতো মানুষদের জন্য। ভারতে যাওয়া ইসমাইল হোসেন বলেন, আমি ভারতে চিকিৎসার জন্য যেতে হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে এসেছি। কিন্তু ইমিগ্রেশনে ভ্রমণকর দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই বাধ্য হয়ে আমাদের রিকশা ভাড়া খরচ করে সেই বন্দরের সামনে সোনালী ব্যাংকে গিয়ে ভ্রমণকর দিতে হচ্ছে, তারপরে ভারতে যেতে হচ্ছে। কিন্তু ইমিগ্রেশনেই যদি ব্যাংকের বুথ থাকত ভ্রমণকর দেওয়ার ব্যবস্থা থাকত তাহলে আমরা এখানেই ভ্রমনকর দিয়ে দ্রুত ভারতে চলে যেতে পারতাম, আমাদের জন্য ভালো হতো। প্রণব কুমার নামের এক বয়স্ক যাত্রী বলেন, এই পথ দিয়ে চলাচলে একমাত্র সমস্যাটি হচ্ছে একটিই মাত্র পথ সেই পথ দিয়ে আমদানিকৃত পণ্যবাহী ট্রাক যেমন আসছে ওই একই পথ দিয়ে যাত্রীদের যাতায়াত করতে হচ্ছে। এতে করে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে, আবার একই পথে একটি রেলগেট রয়েছে যার কারণে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। আমরা চাই এখানে পাসপোর্ট যাত্রীদের চলাচলের জন্য আলাদা পথের ব্যবস্থা করা হয় সেই সঙ্গে একটি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হয় তাহলে আমাদের চলাচল করতে সুবিধা হবে। ভারতে যাওয়া পাসপোর্ট যাত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এখানে পাসপোর্টের কার্যক্রম সাড়তে দীর্ঘক্ষণ সময় লাগছে, প্রায় দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে কার্যক্রম সম্পূর্ণ করতে। কাজ হচ্ছে কিন্তু অনেক সময় লাগছে এটি যেন দ্রুত করা হয় তাহলে সুবিধা হয়। আর দীর্ঘক্ষণ সময় লাগার কারণে যে একটু কোথাও বসে বিশ্রাম নেব সে সুযোগ নেই পর্যাপ্ত যাত্রী ছাউনি নেই বাধ্য হয়ে রোদে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বদিউজ্জামান বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘ দুই বছর বন্ধের পর চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল থেকে হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের কার্যক্রম শুরু হয়। চালুর পর প্রথম দিকে যাত্রী পারাপার কিছুটা কম থাকলেও বর্তমানে যাত্রী পারাপার আগের তুলনায় বেড়েছে। দিন দিন যাত্রী পারাপারের সেই সংখ্যা আরও বাড়ছে। আমরা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী যাত্রীদের সবধরনের সেবা দিয়ে যাচ্ছি যা আগের তুলনায় তারা ভালো সেবা পাচ্ছে। তবে যাত্রী সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তবে যাত্রী ছাউনিসহ যাত্রীদের সেবার মান কীভাবে বাড়ানো যায় এ বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর