বুধবার, ৬ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

নোয়াখালীতে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট

নোয়াখালী প্রতিনিধি

নোয়াখালীতে জমে উঠেছে  কোরবানির পশুর হাট

নোয়াখালী জেলার বিভিন্ন হাটবাজারের কোথাও এখনো কোরবানির পশু হাট জমে না উঠলেও বিভিন্ন ব্যক্তিমালিকানাধীন খামারে জমে উঠেছে কেনাবেচা। বিভিন্ন হাটবাজার ঘুরে গরু কেনার ঝামেলা ও ঝুঁকি এড়াতে খামার থেকে পছন্দসই গরু সংগ্রহের দিকে ঝুঁকছেন ক্রেতারা। এবার জেলার অনেক খামারে লাইভ ওয়েট স্কেলে দেশি গরু বিক্রি হচ্ছে। খামারে গরু বেচাকেনায় দালাল বা মধ্যস্বত্বভোগী না থাকায় ক্রেতা বিক্রেতা কোনো পক্ষকেই বাড়তি খরচ দিতে হচ্ছে না। এতে দুই পক্ষই লাভবান হচ্ছেন। খামার থেকে গরু কেনার ক্ষেত্রে ক্রেতাদের জন্য বাড়তি সুবিধা হচ্ছে পশুর হাট থেকে গরু কিনলে হাসিল (টোল) বাবত শতকরা হারে যে টাকা দিতে হয় খামারে তাও লাগে না। সরেজমিন সদর উপজেলার পশ্চিম চর উড়িয়া গ্রামে মানফাত মিট-ক্যাটেল অ্যান্ড ডেইরি ফার্মে প্রতিদিনই দূরদূরান্ত থেকে গরু কিনতে আসা ক্রেতাদের ভিড় চোখে পড়ে। প্রাকৃতিক উপায়ে দেশি গরু মোটা তাজাকরণ ফার্মগুলোর মধ্যে বৃহত্তর নোয়াখালী ও বৃহত্তর কুমিল্লা অঞ্চলের সর্ববৃহৎ এ খামারে গত পাঁচ বছর থেকে লাইভ ওয়েট স্কেলে গরু বিক্রি করা হয়। খামারটিতে এবার বিক্রির জন্য সর্বনিম্ন দুই শ কেজি থেকে সর্বোচ্চ সাত শ কেজি ওজনের দুই শটি গরু রয়েছে। এর মধ্যে শুক্রবার পর্যন্ত ৭০টি গরু বিক্রির জন্য বুকিং হয়ে গেছে। এখানে প্রতি কেজি ষাঁড়ের মূল্য ৪৫০ টাকা এবং প্রতি কেজি বলদের মূল্য ধরা হয়েছে ৪৮০ টাকা। এ হিসাবে ১ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা দামের গরু রয়েছে খামারটিতে। ক্রেতাদের ভাষ্য অনুযায়ী, অন্যান্য বারের অভিজ্ঞতায় এবারও ভালো গরু পাওয়ার আশায় এ খামারে আসছেন তারা। এখানে পছন্দসই গরু ঠিক করে বুকিং দিয়ে ঈদের আগ পর্যন্ত খামারেই রাখার সুবিধা পাচ্ছেন ক্রেতা। এক্ষেত্রে গরু নেওয়ার সময় পরিমাপ করে বুকিংয়ের সময় নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করতে হয় ক্রেতাকে। ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী ঈদের দিন সকালেও বাড়িতে গরু পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। খামারের কর্মরত শ্রমিক আবদুর রহিম জানান, ঈদের কয়েক মাস আগে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে দেশি গরু সংগ্রহ করে এখানে এনে কাছের সরকারি পশু চিকিৎকদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে দেশি খাবার ও রোগ বালাই প্রতিশেধক দিয়ে মোটাতাজা করে বিক্রি করা হয়। খামারের সুন্দর, স্বাস্থ্যকর পরিবেশ যে কারও পছন্দ হবে।

 মানফাত মিট-ক্যাটেল অ্যান্ড ডেইরি ফার্মের মালিক অ্যাডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহিন জানান, ২০১৮ সালে ৭ একর পতিত জমিতে ৮০টি গরু দিয়ে যাত্রা শুরু করেন তিনি। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। প্রতি বছর ২০০ গরু বিক্রি হয় এ খামারে। তার পুরো খামারটিতে আধুনিকতার ছোঁয়া। শেডের ভিতরে প্রতিটি গরুর জন্য স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে তৈরি করা হয়েছে আলাদা আলাদা চৌবাচ্চা। রয়েছে গরুর গোসল, চিকিৎসা ও প্রজননের জন্য আলাদা ব্যবস্থা। তিনি বলেন, নোয়াখালীতে সর্বপ্রথম আমাদের খামারেই লাইভ ওয়েট স্কেলে গরু বিক্রি শুরু করি। আমি মনে করি বাজারে গেলে মানুষ নানাভাবে প্রতারিত হওয়ার সুযোগ থাকে। কোরবানির হাটে দালাল থাকে তারা মানুষকে বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলে দেয়। খামারে সুন্দর পছন্দের গরু লাইভ ওয়েট স্কেলে কিনতে পারে। আমরা শতভাগ সুস্থ ও সুঠাম দেহের গরু দিয়ে থাকি। খামারে প্রতিদিন কমপক্ষে একবার আবার কখনো দুবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে গরুগুলোকে গোসল করানো হয় এবং পরিচর্যা করা হয়। এখানে ঘাসের চাষ করা ঘাসের পাশাপাশি খড়, ভুসি ও নিরাপদ পোলট্রি ফিড খাওয়ানো হয় গরুগুলোকে। গরুর বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, গোখাদ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে এবার গরু মোটা তাজাকরণে খামারিদের ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ খরচ বেড়েছে। যার কারণে গরুর বাজার দরের ওপরে এর প্রভাব পড়েছে। এরপরও নিচক লাভের চিন্তা না করে পবিত্র ঈদে কোরবানির জন্য মানুষকে সুস্থ, সবল গরু দিতে পেরে মানুষিক প্রশান্তির পাশাপাশি সওয়াবের অধিকারী হওয়াই আমাদের মূল লক্ষ্য। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কাজী রফিকুজ্জামান জানান, নোয়াখালীতে কোরবানির জন্য এবার ১ লাখ গবাদি পশু লালনপালন করা হচ্ছে যা জেলায় চাহিদার চেয়ে ১০ হাজার বেশি। জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশের সঙ্গে সভা করে কোরবানির পশুর হাটে ক্রেতা বিক্রেতাদের সুবিধার্থে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রাণিসম্পদ বিভাগের তত্ত্বাবধানে একাধিক অনলাইনে প্ল্যাটফরমে পশু বেচাকেনার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর