শনিবার, ১৬ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান প্রকল্পে অনিয়ম

তালিকায় সচ্ছলদের নাম, বঞ্চিত প্রকৃত দরিদ্র জনগোষ্ঠী

খন্দকার একরামুল হক সম্রাট, কুড়িগ্রাম

কুড়িগ্রামে অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সুবিধাভোগীদের তালিকায় রয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার ও সরকারি চাকরিজীবীর স্বজনদের নাম। প্রকৃত দরিদ্রদের বাদ দিয়ে যারা সচ্ছল তাদের অন্তর্ভুক্ত করে আত্মসাৎ করা হচ্ছে সরকারি অর্থ। জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার নুনখাওয়া ইউনিয়নে এ অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির তথ্য পাওয়া গেছে। সরেজমিনে জানা যায়, নুনখাওয়া ইউনিয়নের ২০২১-২২ অর্থবছরে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান প্রকল্পে ৩৫০ জনের নামের তালিকা করা হয়। এর মধ্যে অর্ধশতাধিক নাম রয়েছে যারা সচ্ছল পরিবারের। তালিকায় ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলামের দুই ভাই হাবিবুল ও পল্লী চিকিৎসক মোহাম্মদ আলী, ৩ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আবদুল কাদেরের ছেলে সাহাজুল আলম, এনামুল হক, পুত্রবধূ তাহমিনা বেগম, আদুরি বেগম, ৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মোকারুল ইসলাম, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী জাকিয়া সুলতানা, তার ভাই বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া জাকারিয়া সরকার এবং ভাতিজা খোরশেদের নাম আছে। ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় মাটি কাটার ৬০ দিনের কাজ দেখিয়ে প্রতিদিন জনপ্রতি ৪০০ টাকা হারে মজুরি তোলা হয়েছে। অথচ বাস্তবে তালিকাভুক্ত এসব ব্যক্তি কখনই কোনো কাজ করেননি। জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী জাকিয়া সুলতানা তালিকায় দেবর ও নিজের নাম থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, মজুরি কে পায় সে বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। ইউপি সদস্য আবদুল কাদের অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, মেম্বারেরও তো খরচ আছে। বিভিন্ন স্থানে খরচ করতে হয়। সেই খরচের জন্য দু-একটা নাম দেওয়া হয়েছে। মোস্তফা নামে এক সুবিধাভোগী বলেন, মাটি কাটার কাজে আমার নাম ছিল, চেয়ারম্যান নিজেই বলেছেন। কিন্তু কোদাল-ডালি নিয়া কাজ করতে যায়া শুনি আমার নাম কাটি দিছে। এখন তালিকায় দেখি চেয়ারম্যানের ভাই, সরকারি চাকরি করে তার বউর নাম আছে। হামার চায়া ওমরাই গরিব বেশি। আনছার ভিডিপির ইউনিয়ন কমান্ডার মোহাম্মদ আলী ভোলা বলেন, তালিকায় চেয়ারম্যানের ভাই, ভাতিজা, ইউপি সদস্যদের স্বজন ও ইউনিয়ন সচিবের ঘনিষ্ঠজনদের নাম রয়েছে। অথচ এলাকার অনেক হতদরিদ্রর নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, বিধি মোতাবেক ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের নাম তালিকায় দেওয়া যায় না। তাই কিছু শ্রমিকের নাম তালিকায় নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত করায় এমন হয়েছে। নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুর আহমেদ মাছুম বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে তালিকা প্রিন্ট করে ইউনিয়নের ঘরে ঘরে গিয়ে যাচাই করা হচ্ছে। তালিকায় এমন কতগুলো অসংগতি রয়েছে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, কুড়িগ্রামে ২০২১-২২ অর্থবছরে নয়টি উপজেলায় ২৭ হাজার ৯২৮ জন সুবিধাভোগীর জন্য ৪৪ কোটি ৬৮ লাখ ৪৮ হাজার টাকাসহ নন-ওয়েজ কস্ট খাতে ২ কোটি ৫ লাখ ১৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শ্রমিক সরদার ভাতা বাবদ বরাদ্দ দেওয়া হয় ১৩ লাখ ১৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে নাগেশ্বরী উপজেলায় সুবিধাভোগী রয়েছেন ৪ হাজার ৯৪৯ জন।

সর্বশেষ খবর