সোমবার, ১৮ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

নদী-খালে বর্জ্য, হুমকিতে পরিবেশ

বরগুনা প্রতিনিধি

নদী-খালে বর্জ্য, হুমকিতে পরিবেশ

দেশের দক্ষিণ উপকূলীয় জেলা বরগুনার প্রতিটি নদী আর প্রবাহমান খালে প্রতিদিন ফেলা হচ্ছে প্লাস্টিক, পলিথিন আর অপচনশীল বর্জ্য। বরগুনার বিষখালী, বুড়ীশ্বর (পায়রা) খাকদন, বলেশ্বরসহ বঙ্গোপসাগরে ভাসছে অসংখ্য প্লাস্টিকের বোতল, পলিথিনসহ চিকিৎসায় ব্যবহৃত উচ্ছিষ্ট। এসব প্লাস্টিক, পলিথিনসহ অপচনশীল বর্জ্য পদার্থ পানিকে যেমন দূষিত করছে তেমনি  জমির উর্বরতা শক্তি কমিয়ে দিচ্ছে। একই সঙ্গে উপকূলীয় পরিবেশের বিপর্যয় সৃষ্টি হচ্ছে। সরকারের পরিবেশ অধিদফতর বা স্থানীয় প্রশাসন উপকূলীয় পরিবেশ রক্ষায় দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এসব বর্জ্যে নদী  ও খাল ইতোমধ্যে ভরাট হয়ে স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ভাটার সময় দেখা যায় স্তূপ হয়ে আছে এসব অপচনশীল দ্রব্য। জেলার বিষখালী, খাকদন বুড়ীশ্বর, বলেশ্বরসহ বরগুনার ভাড়ানীখাল ছাড়াও  জেলার তালতলী,  আমতলী, বেতাগী, বামনা, পাথরঘাটার বিভিন্ন খালে অবাধে ফেলা হচ্ছে ও অপচনশীল বর্জ্য পলিথিন-প্লাস্টিক। যার কারণে সর্বনাশ হচ্ছে পানি মাটি ও পরিবেশের। ভরাট হচ্ছে, খাল, নদী, সাগর পর্যন্ত। পানি দূষণের পাশাপাশি নদীর পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য পড়েছে হুমকির মুখে খালের তলদেশে জমছে পলিথিনের স্তর। পানি ও খাল দূষণে হারিয়ে যাচ্ছে নানা প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণি। প্রতিদিন সাগরে ফিশিং ট্রলার থেকে টন টন প্লাস্টিকের অপচনশীল দ্রব্য ফেলা হচ্ছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও বর্জ্য ফেলার ব্যবস্থা নেই। যে যেখানে পারছে বর্জ্য ফেলছে। বিভিন্ন হাটবাজারে ছড়িয়ে আছে প্লাস্টিকের পানির বোতল, পলিথিন। এসব অপচনশীল বর্জ্যে এলাকায় খাল ও ডোবা-নালা ময়লা-আবর্জনা ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে জমতে থাকা অপচনশীল এসব বর্জ্যরে কারণে ভরাট হয়ে যাচ্ছে ছোট ছোট খাল। দূষিত হচ্ছে পানি। এ বিষয়ে পরিবেশ আন্দোলনের সংগঠক মুশফিক আরিফ বলেন, বর্জ্য পলিথিন-প্লাস্টিক আবর্জনায় পানিতে ফেলার কারণে উপকূলের খাল বিল নদীর স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে খালের নাব্যতা হারিয়েছে। আমরা প্রাকৃতিকভাবে যে মৎস্য সম্পদ পেতাম সেই মৎস্য সম্পদও আজ আমাদের নেই। পরিবেশবিদ হিসেবে আমরা উদ্বিগ্ন ও চিন্তিত। আগামী ১০ বছরে এই খালবিল নাব্যতা হারিয়ে ভরাট হয়ে চর পড়ে যাবে। আমরা পরিবেশকর্মীরা সরকারের কাছে আবেদন জানাই, বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকার যেসব খাল-বিলগুলো বর্জ্য-আবর্জনায় নাব্যতা হারিয়েছে সেগুলোকে পুনর্খনন করে নাব্যতা ফিরেয়ে আনার। আর পরিবেশ অধিদফতরের বরগুনা জেলায় কোনো অফিস না থাকায় বরিশাল ও পটুয়াখালী থেকে এসে নামমাত্র কাজ করছে। এর দায় পরিবেশ অধিদফতর এড়াতে পারে না। আর পলিথিনের বিষয়ে দোকানে অভিযানে কোনো ফল হবে না। পলিথিন উৎপাদন কারখানাগুলোতে অভিযান চালিয়ে তা বন্ধ করে দেওয়ার দাবি জানান তিনি। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক এস এম বদরুল আলম বলেন, প্লাস্টিক ফসলি জমির জন্য দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি করে। ফসল উৎপাদনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। ফসলের মূল মাটির গভীরে যেতে পারে না, পানি নিষ্কাশন ব্যাহত হয়।

সর্বশেষ খবর