শিরোনাম
রবিবার, ২৪ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

নদী ভাঙনে হুমকির মুখে বাজার

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

নদী ভাঙনে হুমকির মুখে বাজার

নাগরপুরের ধুবড়িয়া ইউনিয়নে যমুনা নদীর অব্যাহত ভাঙনে বলরামপুর ডিজিটাল বাজার হুমকির মুখে। প্রতিদিনই নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি, ফসলি জমিসহ বিস্তির্ণ এলাকা। নদীর ক্রমাগত ভাঙনে দুশ্চিন্তা ও অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছে বলরামপুরবাসী। সরেজমিন দেখা যায়, ধুবড়িয়া ইউনিয়ন সদর এলাকা থেকে বলরামপুর খুব বেশি দূরে না হলেও যাতায়াতব্যবস্থা নাজেহাল। মোটরসাইকেল নিয়ে যাতায়াত-উপযোগী সড়ক নেই সেখানে। পায়ে হেঁটে বলরামপুর ডিজিটাল বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাজার থেকে মাত্র ৫ মিনিটের দূরত্বেই যমুনা নদী। অশ্রুসিক্ত মানুষগুলো কেউ ভিটেবাড়ি সরানোর কাজে ব্যস্ত, কেউ তাকিয়ে আছে নদীর দিকে। নদী প্রস্থে বাড়ার ফলে বলরামপুর বিদ্যালয় কাছে চলে আসার উপক্রম। ভাঙন থেকে বাঁচতে অন্যত্র চলে যাচ্ছে শতাধিক পরিবার। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, এবারের বন্যায় শতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। যদি এ কষ্ট ও দুর্দশা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপলব্ধি করতেন, তাহলে তারা কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন। তারা নদী ভাঙনের কষ্টের বাস্তবতা থেকে যোজন যোজন দূরে অবস্থান করেন। আরও কত ঘরবাড়ি এবার বিলীন হবে তা অনুমান করা যাচ্ছে না। এ ছাড়া প্রতি বছর বন্যা মৌসুমে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে বালুর বস্তা (জিও ব্যাগ) ফেলার মতো সান্ত্বনামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এতে স্থায়ী ভাঙন বন্ধ করা সম্ভব নয়। এখানে এক স্থানে ভাঙন বন্ধ হলে আরেক স্থানে ভাঙন শুরু হয়। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে, বস্তায় উপকার হচ্ছে কিন্তু বাস্তবে শুধু টাকাই নষ্ট। ভাঙন যা হওয়ার তা-ই চলমান থাকে। দুই পাড় উজাড় করে যমুনা ক্রমাগত প্রস্থে বেড়েই চলেছে। স্থানীয় বৃদ্ধ লতিফ মিয়া ক্ষোভ নিয়ে বলেন, ‘দপ্তিয়র নিশ্চিন্তপুরে কিছু এলাকায় বালু ভরা বস্তা ফেলানো হলেও আমাদের বলরামপুরের এদিকে কিছুই করেনি। আজকে বিকালে এক কবর থেকে লাশ বের হয়ে গেছে মাটি নদীতে সরে গিয়ে। সবাই ঘরবাড়ি সরিয়ে অন্য জায়গায় চলে যাচ্ছে।’ আরেক বাসিন্দা কবির বলেন, ‘নদী প্রায় বলরামপুর বাজারের কাছেই চলে আসছে। আজ পর্যন্ত জনপ্রতিনিধিরা কেউ কোনো বড় পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। এ নদী কখন কী করে বলা কঠিন। কোনো অনুমানই খাটে না।’ ধুবড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান শাকিল বলেন, ‘আমি কয়েকদিন আগেই ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। বর্তমানে পরিষদে কোনো বাজেট নেই। আমি উপজেলা প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েছি তারা দ্রুতই ব্যবস্থা নেবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন।’ নাগরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওয়াহিদুজ্জামান মুঠোফোনে বলেন, ‘ধুবড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান আমাকে লিখিতভাবে ভাঙন সমস্যা সম্পর্কিত কিছু অবহিত করেননি। চেয়ারম্যান মৌখিকভাবে বলেছেন বন্যায় ভাঙন হতে পারে। এখন বিষয়টি জানলাম, আমরা অচিরেই ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করব। এরপর সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব। তারা যা পদক্ষেপ নেওয়ার নেবেন।’ উল্লেখ্য, বদ্বীপ খ্যাত নাগরপুর উপজেলায় এক পাশে যমুনা নদী অন্য পাশে ধলেশ্বরী নদী বিদ্যমান। প্রতিবারের মতো এবারও যমুনার অব্যাহত ভাঙনে সলিমাবাদ ইউনিয়নের চরসলিমাবাদ, পাইকশা, মাইঝাইল, ধুবড়িয়া ইউনিয়নের বলরামপুর, ডিজিটাল বাজার, দপ্তিয়র ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সর্বশেষ খবর