রবিবার, ২৪ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

পাটের দামে খুশি কৃষক

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

পাটের দামে খুশি কৃষক

বগুড়ায় সোনালি আঁশ পাটের দামে খুশি কৃষক। এক সময় এ আবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেও বগুড়ার চাষিরা এবার পাট চাষে আবারও মাঠে নেমেছে। বগুড়র বিভিন্ন হাটগুলোতে এ বছর পাটের আমদানি কম। তবে ভালো দাম পাওয়ায় খুশি কৃষক। এ ছাড়া পাটখড়ি হতে বাড়তি আয়ও হচ্ছে তাদের। এবার শত কোটির বেশি টাকা কৃষকের ঘরে যাবে বলে তারা আশাবাদী। গত এক মাস আগের অসময়ের বন্যায় বগুড়া সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার বেশিরভাগ পাট খেত পানিতে তলিয়ে যায়। ফলে দীর্ঘসময় পানির নিচে থাকার কারণে এ বছর চরাঞ্চলের নিম্ন এলাকার পাট পানিতে নষ্ট হয়ে যায়। কেউ কেউ আবার অপরিপক্ব পাট তড়িঘড়ি করে কেটে নিয়েছেন। এতে তারা পাটের আশানুরূপ ফলন পাননি। ফলে বাজারে এ বছর পাটের আমদানি কম হচ্ছে। কিন্তু হাটবাজারগুলোতে এই সোনালি আঁশ পাটের দাম ভালো পাওয়ায় তারা খুশি। সারিয়াকান্দি উপজেলার কুড়িপাড়া চরের পাটচাষি সাইফুল ইসলাম জানান, তিনি এ বছর ৭ বিঘা জমিতে পাটচাষ করেছিলেন। এর মধ্যে ২ বিঘা জমির পাট বন্যায় নষ্ট হয়েছে। আর ৫ বিঘা জমিতে পাটের খুবই ভালো ফলন হয়েছে। প্রতি বিঘা জমি হতে তিনি এ বছর গড়ে ৭ মণ পাট পেয়েছেন। ধুনট উপজেলার বিলচাপড়ী গ্রামের পাটচাষি তোতা মিয়া জানান, তিনি এ বছর ৩০ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছিলেন। এর মধ্যে ২৫ বিঘা জমিতে পাট ভালো হয়েছে। বাকি জমির পাট বন্যায় নষ্ট হয়েছে। তিনি বলেন, পাটের ভালো দামে আমরা খুবই খুশি। এ ছাড়া প্রচুর দামে পাটখড়ি বিক্রি হচ্ছে। প্রতি বিঘা জমির পাটগাছ হতে প্রায় ৩০০ আঁটি পাটখড়ি আগালি এবং প্রায় ১২০ বোঝা গোড়ালি পাওয়া যায়। প্রতি আঁটি আগালি পাটখড়ি ১০ হতে ১৫ টাকা এবং প্রতি বোঝা গোড়ালি ৫০ হতে ৬০ টাকা করে বিক্রি হয়। সে হিসেবে পাটখড়ি বিক্রি করেও অতিরিক্ত টাকা ঘরে আসে। সারিয়াকান্দি উপজেলার পৌর এলাকায় শনিবার এবং মঙ্গলবার দুই দিন হাট বসে। এসব হাটের দিনে কৃষকরা খুবই ভোরে অটোভ্যান, ভটভটি দিয়ে পাট বিক্রয় করতে হাটে আসেন। সকাল ৯টার মধ্যে পাটের বেচাকেনা শেষ হয়। সকাল ৯টায় হাটে ১ হাজার হতে ১ হাজার ৫০০ মণ পাটের আমদানি হয়েছে। প্রতি মণ পাট সর্বনিম্ন ২ হাজার ৬০০ টাকা হতে সর্বোচ্চ ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। হাটে পাট নিয়ে আসা কৃষক ধলু ফকির বলেন, এবার পাটের দাম ভালো। আমরা অনেকটাই খুশি। তবে বন্যায় যদি পাট নষ্ট না হতো আরও দাম পেতাম। পাট ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম জানান, সকাল ৯টা পর্যন্ত তিনি ১৫০ মণ পাট ক্রয় করেছেন। পাটগুলো ট্রাকে ভরে তিনি একটি কারখানায় সরবরাহ করবেন। অপর পাট ব্যবসায়ী আবদুর রশিদ জানান, শনিবার সকালে সারিয়াকান্দি হাটে প্রতি মণ পাট ২ হাজার ৬০০ টাকা হতে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, এ বছর উপজেলায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ হাজার হেক্টর। যা লক্ষ্যমাত্রা পেরিয়ে ৭ হাজার ১০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ৬৮০ হেক্টর জমির পাট গত বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল হালিম বলেন, পাটের ভালোদামে কৃষকরা খুশি। হেক্টর প্রতি পাটের ফলন ৫৫ হতে ৬০ মণ তোষা। সে হিসাবে প্রায় ১১৫ কোটি টাকার পাট এ বছর কৃষকের ঘরে উঠবে। বগুড়ার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মো. এনামুল হক জানান, এ বছর পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২ হাজার ১৬৮ হেক্টর। এবার লক্ষ্যমাত্রা পেরিয়ে ১২ হাজার ২৭০ হেক্টর জমি পাটের আবাদ হয়েছে। জেলায় এ পর্যন্ত পাট কর্তন হয়েছে ১২ হাজার ৪২০ হেক্টর।

বগুড়ার অন্যান্য উপজেলার তুলনায় সারিয়াকান্দিতে সবচেয়ে বেশি পাট চাষ হয়ে থাকে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর