হাত বদলেই বাড়ছে সবজির দাম। চাষিরা দাম না পেলেও পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা মুনাফা লুটে নিচ্ছে। পাইকারি হাটের চেয়ে খুচরা বাজারে প্রতি কেজিতে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি। উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ পাইকারি হাট মহাস্থানে গ্রীষ্মকালীন সবজির সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও দাম নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ক্রেতা-বিক্রেতাদের। তবে মহাস্থান হাটের সবজি বগুড়া শহরের পাইকারি ও খুচরা বাজারসহ রাজধানী ঢাকায় বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। হাতবদলের সঙ্গে সঙ্গে সবজির দাম প্রতি কেজিতে বাড়ছে। হাটবাজারের খাজনা, লেবার ও যানবাহন খরচ সব মিলিয়ে খুচরা বাজারে সবজির দাম বেড়ে যায় বলে ব্যবসায়ীরা জানান। উত্তরের জেলাগুলোর মধ্যে বগুড়া একটি কৃষিপ্রধান এলাকা। ধান, পাট, সবজি, মরিচ, ভুট্টা, আলু, সরিষার জন্য কৃষি ক্ষেত্রে অবদান রাখছে। এ জেলায় গোটা বছর সবজি চাষ হয়ে থাকে। বগুড়ায় উৎপাদিত সবজি এসে জেলার মহাস্থান হাটে জমা হয়। এই হাট থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় চলে যায় সবজি। মহাস্থান হাটে যে দামে সবজি বিক্রি হয় তার থেকেও কয়েক গুণ বাড়িয়ে বিক্রি হয় জেলার খুচরা বাজারে। শীতকালীন সবজি বেশি হলেও গ্রীষ্মকালেও এ জেলায় সবজি উৎপাদন করে থাকে চাষিরা।
এসব সবজি বিক্রির সবচেয়ে বড় হাট মহাস্থান। বগুড়াসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে চাষিরা সবজি বিক্রি করতে আসে এখানে। সকালে জমি থেকে তোলা টাটকা সবজি মহাস্থান হাট থেকে প্রতিদিন ট্রাকে করে যাচ্ছে বগুড়া শহরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক দুলাল হোসেন জানান জেলায় গোটা বছরে ৪ লাখ মে. টন সবজি উৎপাদন হয়, এর মধ্যে গ্রীষ্মকালীন সময়ে সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় সোয়া ১ লাখ টন সবজি উৎপাদন হয়। এই সবজিই স্থানীয়ভাবে চাহিদা মিটিয়ে জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রথমে পাইকারি বাজারে এবং পরে সেখান থেকে খুচরা বাজারে বিক্রি হয়ে থাকে। গতকাল বগুড়ার মহাস্থান হাটে কাঁচামরিচ ১৩০ থেকে ১৪২ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও রাজাবাজারে তা ১৬০ টাকা এবং খুচরা বাজারে ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। পটোল প্রতি কেজি ১৫ টাকা হলেও ১০ কিলোমিটার দূরে বগুড়ার রাজাবাজার ও ফতেহ আলী বাজারে তা ২৫ থেকে ৩০ টাকা, মহাস্থান হাটের চেয়ে বগুড়ার বাজারে ঢেঁড়স, করলা, কচু কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ১০ থেকে ২৫ টাকার পিস লাউ বগুড়া শহরের খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা করে। মহাস্থান হাটে যে সবজি ২০ টাকা বগুড়া শহরের খুচরা বাজারে তা ৪০ টাকা হিসেবে বিক্রি হয়ে থাকে। ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থানে এসব সবজি পাইকারি বাজারের চেয়ে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হয়। মহাস্থান পাইকারি হাট থেকে বগুড়ার বাজার এবং রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য জেলায় এসব সবজি হাতবদল হচ্ছে একাধিকবার। চাষির কাছে থেকে পাইকারি ক্রেতা, এরপর আবার বাজারের আড়তদার থেকে খুচরা বিক্রেতার কাছে থেকে সাধারণ ভোক্তার কাছে হাতবদলেই দাম বেড়ে যাচ্ছে। উৎপাদন অনুযায়ী কাক্সিক্ষত মূল্য পাচ্ছে না বিক্রেতারা, আর শ্রমিক ও পরিবহন খরচসহ নানা কারণে দাম বাড়ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। জেলার মহাস্থান হাটের ক্রেতা আশরাফ মিয়া জানান, মহাস্থান হাটে সবজির দাম কম। আবার একই সবজি শহরের খুচরা বাজারে কিনলে দ্বিগুণ দাম দিতে হয়। সবজির চাষিরা দাম না পেলেও খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে দাম বেড়ে যাচ্ছে। শহরের ফতেহ আলী কাঁচাবাজারে বাজার করতে আসা ফজলুল হক জানান, বগুড়া শহরের রাজাবাজারে এক দাম। আর ফতেহ আলী বাজারে আরেক দাম। রাজা বাজার আর ফতেহ আলী বাজারের মধ্যে দূরত্ব মাত্র ১০ ফুট। এই ১০ ফুটের ব্যবধানে সব ধরনের সবজির দাম বেড়ে যায় কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা করে।