বুধবার, ৩ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

ধুঁকছে গাইবান্ধা হাসপাতাল

গাইবান্ধা প্রতিনিধি

ধুঁকছে গাইবান্ধা হাসপাতাল

গাইবান্ধা জেলার ২০০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসক সংকটে কাক্সিক্ষত সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। এক্স-রেসহ যন্ত্রপাতির অভাবে রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য যেতে হয় বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে। হাসপাতালের আশপাশে গড়ে উঠেছে ২০/২৫টি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ক্লিনিক এবং ওষুধের দোকান। অভিযোগ আছে তাদের নিয়োজিত দালালরা রোগী ধরতে চষে বেড়ান সরকারি হাসপাতালে। অন্যদিকে হাসপাতালের নোংরা পরিবেশ আর দুর্গন্ধে সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে পড়ে। ২০০ শয্যার এ হাসপাতাল চলছে ১০০ শয্যার বরাদ্দ জনবল দিয়ে। সেখানেও আবার ৪৩ জন চিকিৎসকের পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ২০ জন। ১০ বিভাগের মধ্যে ছয়টি বিভাগেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় জোড়াতালি দিয়ে চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম। মেডিসিন, কার্ডিওলজি, সার্জারি, ইএনটি, শিশু, চক্ষু, চর্ম ও যৌন, এনেসথেসিয়ার সিনিয়র কনসালটেন্ট পদগুলো বছরের পর বছর ধরে শূন্য। অন্যদিকে চক্ষু, চর্ম ও যৌন, প্যাথলজি, সার্জারি, রেডিওলজি ও ইমেজিং এবং ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিটেশন বিভাগে জুনিয়র কনসালটেন্টও নেই দীর্ঘ সময় ধরে। আবাসিক চিকিৎসকও (আরএমও) নেই বেশ কয়েক মাস যাবত। দুটি  এক্স-রে মেশিন নষ্ট বছরের পর বছর। গত বছর একটি মেশিন ঠিক করা হলেও তা আবার নষ্ট হয়ে গেছে। অন্যটি ১১ বছর ধরে নষ্ট। এক্স-রে ছাড়াও অন্যান্য পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য বাইরে নিয়ে যেতে দালালরা সক্রিয়। সরেজমিন হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে বহির্বিভাগে উপচে পড়া ভিড়। করোনার স্বাস্থ্যবিধি না মেনে রোগীরা গায়ে গা লাগিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। প্রতিদিন গড়ে ৬০০ রোগী বহির্বিভাগে আসছেন। হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোতে ময়লা পরিবেশ, ড্রেন এবং খোলা জায়গায় ময়লার কারণে দুর্গন্ধে নাকে রুমাল চেপে চলতে হয়। টয়লেটগুলো ময়লা ও দুর্গন্ধে ব্যবহার অনুপযোগী। টয়লেটের ময়লা রান্নাঘর সংলগ্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে ডোবার সৃষ্টি করেছে। ওয়ার্ডে সে দুর্গন্ধ ঢুকে রোগীদের অবস্থান দুঃসাধ্য করে ফেলেছে। ওয়ার্ড ছাড়িয়ে হাসপাতালের করিডোর বারান্দাগুলোও রোগীতে ভরা। সেখানে নেই পরিচ্ছনতার বালাই। হাসপাতালের বারান্দায় শয্যাশায়ী পাওয়া পলাশবাড়ির নাজমুল হুদা বলেন, পিঠে টিউমার অপারেশনের জন্য ভর্তি হয়েছি। বারান্দায় বৃষ্টি, রোদ আর রাতে মশার উপদ্রবে টেকা দায়। ডাক্তার শুধু সকালে রাউন্ড দেওয়ার সময় আসেন এ ছাড়া ডাক্তারের দেখা পাওয়া যায় না। এক্স-রে এবং কয়েকটি পরীক্ষা বাইরে থেকে করাতে হয়েছে। অনেক ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে। পুরুষ ওয়ার্ডের ২৮ নম্বর বিছানার রোগী আকীউল আলম জানান, বালিশ মশারি বিছানার চাদর সবই বাড়ি থেকে নিয়ে আসতে হয়েছে। যে খাবার দেওয়া হয় বিশেষ করে দুপুর এবং রাতে তা একেবারে নিম্নমানের।

বাধ্য হয়ে কেউ কেউ এসব খাবার খায় অন্যরা বাড়ি বা হোটেল থেকে খাবার কিনে আনে। নিরাপদ চিকিৎসা চাই, গাইবান্ধা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, হাসপাতালের এসব সমস্যা নিয়ে আমরা মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদানসহ নানা কর্মসূচি পালন করে থাকি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শুধু আশ্বাস দেন কিন্তু সমস্যার সমাধান করেন না। এখানে ব্যবস্থাপনার বড় রকমের ত্রুটি আছে। চেষ্টা করলেই হাসপাতাল দালাল মুক্ত ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা যায়। অভিযোগ আছে বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর সঙ্গে যোগসাজশে হাসপাতালের এক্স-রে মেশিন অকেজো করে রাখা হয়। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মাহবুব হোসেন বলেন, চিকিৎসকের শূন্যপদে লোক চেয়ে ঢাকায় চিঠি দেওয়া হয়। নোংরা পরিবেশ ও অন্যান্য বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর