বুধবার, ৩ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

চাহিদার সার মিলছে না

হিলি প্রতিনিধি

খরার কারণে ধান রোপণ করতে না পারলেও কয়েকদিনের বৃষ্টিতে দিনাজপুরের হিলিতে আমন ধান রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। এরই মধ্যে দেখা দিয়েছে পটাশ সারের সংকট চাহিদামতো না মেলার অভিযোগ কৃষকদের। দোকানিরা সার রেখে কৃত্রিম সংকট  দেখিয়ে বাড়তি দাম নিচ্ছেন বলে অভিযোগ তাদের। এতে উৎপাদন খরচ বাড়ায় ধান চাষাবাদ করে  লোকশানের দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। এদিকে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বাড়তি দামে কেউ যাতে সার বিক্রি করতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক রয়েছে কৃষি বিভাগ। উপজেলা জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুমে বৃষ্টিপাত বিলম্বিত হওয়ায় আমন ধান রোপণ বিলম্ব হয়েছে। বর্তমানে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হওয়ায় কৃষকরা জোরেশোরে ধান রোপণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। চলতি আমন মৌসুমে উপজেলায় ৮ হাজার ১৫৫ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৫৫ ভাগ জমিতে আমন ধান রোপণ সম্পন্ন হয়েছে। এ সপ্তাহের মধ্যেই সম্পূর্র্ণ জমিতে ধান রোপণ সম্পন্ন হবে বলে আশাবাদ কৃষি বিভাগের।

হিলির ইসমাইলপুরের কৃষক আসলাম হোসেন বলেন, এতদিন আকাশের বৃষ্টিপাত ছিল না যার কারণে মাঠ ফেটে চৌচির হয়ে গিয়েছিল খরার কারণে আমরা ধান রোপণ করতে পারিনি। কিন্তু গত তিন চার দিন ধরে বৃষ্টিপাত হওয়াতে মাঠে চাহিদামতো পানি জমায় এখন আমরা ধান রোপণ শুরু করে দিয়েছি। কিন্তু ধান রোপণ করতে গিয়ে বর্তমানে সার নিয়ে নতুন সংকটের মধ্যে পড়ে গেছে পটাশ সার পাওয়া যাচ্ছে না। যে পরিমাণ জমিতে পটাশ সার প্রয়োজন সেই মোতাবেক সার পাওয়া যাচ্ছে না। আর যে পরিমাণ সারের দাম তাতে করে কিভাবে আবাদ করব সেটি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছি। যে সার সাড়ে ৭০০ টাকা বস্তা ছিল সেই সার এখন হয়ে গেছে ১ হাজার ৩০০ টাকা এত দাম দিয়ে আমরা তো সার কিনতে পারছি না। বিঘা প্রতি ৫ কেজি করে পটাশ সার সিলিপের মাধ্যমে নিতে হচ্ছে সেই সিলিপ নিয়েও মারামারির মতো অবস্থা সিলিপ নিয়েও সার পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা যদি জমিতে পটাশ সার দিতে না পারি তাহলে আবাদ করব কিভাবে। পটাশ সার যেন আমরা চাহিদামতো ও সরকারি মূল্যে পাই সেই ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। একই এলাকার কৃষক ইব্রাহিম শেখ বলেন, বর্তমানে সবকিছুর দাম বেশি হয়ে গেছে যে ধান আমরা পূর্বে লাগাচ্ছিলাম ৮০০ টাকা করে বিঘা কিন্তু এই কয়েকদিন ধরে অনাবৃষ্টির কারণে খরায় অনেক জমিতে ধান লাগাতে পারেননি কৃষকরা। বর্তমানে বৃষ্টিপাত হওয়ায় এক সঙ্গে সব কৃষক জমিতে ধান রোপণ শুরু করে দিয়েছেন যার কারণে চাহিদামতো শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। এই সুযোগে শ্রমিকরা তাদের মজুরি বাড়িয়ে দিয়েছেন বর্তমানে ১ হাজার ২০০ টাকা নিচ্ছেন ধান লাগানো। এতে করে আমাদের ধানের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে কিন্তু সেই তুলনায় আমরা ধানের দাম তো পাচ্ছি না। ছাতনি গ্রামের কৃষক তসলিম উদ্দিন বলেন, আমাদের কৃষকদের অবস্থা খুব খারাপ, আমরা সময়মতো সার পাচ্ছি না। দোকানদাররা সার রেখে দিয়ে বেশি দামে অন্যত্র বিক্রি করে দেয় আর আমাদেরকে বলে সার নেই চাহিদামতো পাচ্ছি না এরকম নানা সমস্যা দেখায়। সারের যে সরকারি মূল্য সেই মূল্যে যদি আমরা পটাশ সার পাইতাম ও আমাদের চাহিদামতো সার পেতাম তাহলে আমাদের জন্য সুবিধা হতো।   স্থানীয় সারের দোকানি আজগর আলী বলেন, সব সারেরই দাম ও সরবরাহ ঠিক রয়েছে শুধুমাত্র পটাশ সার পাওয়া যাচ্ছে না সেসঙ্গে এর দামটাও বেশি। সরকার দিচ্ছে বিঘা প্রতি ৫ কেজি করে কিন্তু কৃষকদের প্রয়োজন ১০ কেজি করে যার কারণেই আমাদের কাছ থেকে বাড়তি মূল্য দিয়ে সার কিনছেন কৃষকরা। যার কারণে আমরা বাহির থেকে বাড়তি দাম দিয়ে ক্রয় করে বাড়তি দামে বিক্রি করছি। পটাশ সারের দাম কিনতেই বেশি কখন কি দাম হচ্ছে বলা যাচ্ছে না। কয়েকদিন আগে ১ হাজার ১৮০ টাকা ক্রয় করলেও বর্তমানে ১ হাজার ২০০ টাকা বস্তা কিনতে হচ্ছে। তারপরেও চাহিদামতো পাওয়া যাচ্ছে না ১ বস্তা বা ২ বস্তা করে পটাশ সার দিচ্ছে। হাকিমপুর উপজেলা কৃষি অফিসার ড. মমতাজ সুলতানা বলেন, আমরা যে পরিমাণে পটাশসহ অন্যান্য সারের বরাদ্দ পেয়েছি তা আমাদের নিবিড় মনিটরিংয়ের মাধ্যমে প্রত্যেকটি কৃষককে তার জমি যাচাই-বাছাই করে তাদেরকে সেই পরিমান সার দেওয়ার ব্যবস্থা করছি। আমাদের সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ সার্বক্ষণিক মাঠে তদারকি করছেন। যার কারণে কৃষকরা সুষমভাবে সার পাচ্ছেন এতে করে উপজেলায় এখন পর্যন্ত ৩৪ টন পটাশ সার মজুদ রয়েছে। সেসঙ্গে চলতি মাসের বরাদ্দকৃত সার তো রয়েছে। আমরা আশা করছি আমাদের উপজেলাতে সার নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। এছাড়া সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বাড়তি মূল্যে যদি কেউ সার বিক্রি করে থাকে সেই ক্ষেত্রে আমরা কঠোরভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আমরা এ বিষয়ে খুব জোরালোভাবে মনিটরিং করছি যাতে কেউ সরকারি দামের চেয়ে বাড়তি দামে কোনো সার বিক্রি করতে না পারে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর