সোমবার, ৮ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

ভাঙনে দিশাহারা ধরলা তিস্তাপাড়ের মানুষ

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

ভাঙনে দিশাহারা ধরলা তিস্তাপাড়ের মানুষ

তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে তিস্তা-ধরলাপাড়ে। নদীর পানি কমে যাওয়ার সঙ্গে দেখা দিয়েছে ভাঙন। পাউবো বলছে, অন্তত ২৭টি পয়েন্টে ভাঙছে নদী দুটি। ফলে গত ৪৮ ঘণ্টায় অর্ধশত পরিবারের বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। নদীর তীরবর্তী বাসিন্দাদের চোখের সামনেই নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে বসতভিটা ও ফসলি জমি। ভাঙনে ফসলি জমি ও বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হওয়া এসব মানুষ এখন মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজতে দিশাহারা। তিস্তার ভারত অংশে নির্মিত গজলডোবায় বাঁধের মাধ্যমে ভারত সরকার একতরফা এর পানি নিয়ন্ত্রণ করায় শীতের আগেই বাংলাদেশ অংশে তিস্তা মরুভূমিতে পরিণত হয়। বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত পানি প্রবাহের ফলে বাংলাদেশ অংশে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়। বন্যায় সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তিস্তার বাম তীরের জেলা লালমনিরহাট। এবারে বর্ষার ভয়াবহ বন্যার ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ভাঙন আতঙ্কে পড়ে তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা। গত দুই দিন আগে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরপরই তীব্র ভাঙনের মুখে পড়ে নদীপাড়ের মানুষ। এক একটি পরিবার ৮/১০ বার নদীভাঙনের শিকার হয়ে সরিয়ে নিয়েছেন বসতভিটা। কেউ কেউ রাস্তার ধারে বা বাঁধের পাশে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। গত তিন দিনে সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের খামারটারী ও পূর্ব কালমাটি গ্রামের প্রায় ১০/১৫টি বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে চোংগাডারা উচ্চ বিদ্যালয়, খুনিয়াগাছ ইউনিয়ন পরিষদ, ভূমি অফিস, খুনিয়াগাছ উচ্চ বিদ্যালয়সহ নানা প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা। নদীর কিনারায় পড়েছে নির্মাণাধীন চোংগাডারা উচ্চ বিদ্যালয়ের চারতলা বিশিষ্ট ভবনসহ তিনশতাধিক বসতবাড়ি। এ ছাড়া জেলার গোকুন্ডা, সির্ন্দুনা, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ি, গড্ডিমারি, দহগ্রাম, ভোটমারী, রাজপুর, কুলাঘাট, মোগলহাটসহ তিস্তা-ধরলার তীরবর্তী ১৩টি ইউনিয়নের ২৭টি পয়েন্টে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। সদর উপজেলার পূর্ব কালমাটি গ্রামের মৃত খোরশেদের স্ত্রী মিনু বেওয়া তিনবার নদী ভাঙনের শিকার হয়ে অন্যের জমি ৩০ হাজার টাকায় বন্ধক নিয়ে তিনটি ঘর করে দুই ছেলেকে নিয়ে বসবাস করছেন। সেই বসতভিটাও নদীর মুখে পড়েছে। বন্ধকি জমি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় বন্ধকের ৩০ হাজার টাকাও দিচ্ছেন না জমির মালিক। টাকার অভাবে মাথা গোঁজার ঠাঁই করতে পারছেন না। স্থানীয়দের সহায়তায় ও নিকট আত্মীয়-স্বজনদের দিয়ে গত শুক্রবার ঘর তিনটি সরিয়ে পাশের একজনের জমিতে রেখেছেন। নতুনভাবে বাড়ি করার কোনো উপায় না পেয়ে দিশাহারা মিনু বেওয়া। মিনু বেওয়া বলেন, চারবার ঘরবাড়ি সরাতে গিয়ে সম্বল শেষ করেছি। এখন ঘর খুলে অন্যের জমিতে রেখেছি। রাতে কোথায় থাকব জানি না। এক সময় নিজের অনেক জমি ছিল। এখন দাঁড়িয়ে থাকার মতো কোনো জমি নেই। টাকা ছাড়া মিলে না জমি। সেই টাকাও নেই। পাশের গ্রাম খামারটারীর আছিবি, সোনাবি, আকলিমা বলেন, রাতে ঘুমাতে পারি না।

সর্বশেষ খবর