শনিবার, ১৩ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

সারের দাম বাড়ায় দিশাহারা কৃষক

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

সারের দাম বাড়ায় দিশাহারা কৃষক

লালমনিরহাটে সার পেতে হয়রানির শিকার হচ্ছেন আমন চাষিরা। পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও মিলছে না সার। ডিলারদের মাধ্যমে সার পেতে রীতিমতো কাড়াকাড়ি করতে হচ্ছে। আবার কৃষকের ভিড় সামাল দিতে কখনো মোতায়েন করা হচ্ছে পুলিশ। সার ও কীটনাশকের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন জেলার কৃষকরা। উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম না পেলে অনেক কৃষক চাষাবাদে আগ্রহ হারাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। লালমনিরহাটে ৫০ কেজির এক বস্তা ইউরিয়া সার ডিলারের কাছ থেকে সংগ্রহ করা যায় ১ হাজার ১০০ টাকায়, খোলাবাজারে যা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩০০ টাকা। একইভাবে এমওপি সারের বস্তা সরকার নির্ধারিত মূল্য ৭৫০ টাকা হলেও খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ টাকা। টিএসপি সার ডিলার বিক্রি করছে ১ হাজার ১০০ টাকা, খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ টাকা। ডিএপি সার ডিলারের কাছে পাওয়া যায় ৮০০ টাকায়, খোলাবাজারে যা ১ হাজার ১০০ টাকা।  খোলাবাজারে সার কিনতে চড়া দাম দিতে হয় বলে কৃষকরা ভিড় জমিয়েছেন ডিলারের কাছে। কিন্তু ডিলারের কাছে পর্যাপ্ত সার না থাকায় এই কাড়াকাড়ি পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। নিরুপায় কৃষকের খোলাবাজার থেকে সার সংগ্রহ করতে বস্তাপ্রতি বাড়তি গুনতে হচ্ছে ২০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আমন মৌসুমের শুরু থেকে লালমনিরহাটে সারের এই সংকট। কৃষি বিভাগের দেওয়া তথ্য মতে, জেলায় আগস্ট মাসে ৭ হাজার ৬৯০ মেট্রিক টনের বিপরীতে ৩ হাজার ৯৯৭ মেট্রিক টন ইউরিয়া, এমওপি ৩ হাজার ৩১৩ মেট্রিক টনের বিপরীতে ৯৯৩ মেট্রিক টন, টিএসপি ২ হাজার ৭৬২ মেট্রিক টনের বিপরীতে ৮৩৫ মেট্রিক টন এবং ডিএপি ২ হাজার ৪৩০ মেট্রিক টনের বিপরীতে ৮৭৯ মেট্রিক টন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।  ডিলারদের মাধ্যমে সার পেতে হয়রানির শিকার হচ্ছেন চাষিরা। পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও অনেকের ভাগ্যে মিলছে না সার। সার সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেক সময় ধাক্কাধাক্কির ঘটনাও ঘটছে। গত কয়েক দিনে লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট, রাজপুরসহ বেশ কিছু স্থানে সার নিতে চাষিদের উপচে পড়া ভিড় সামাল দিতে করতে হচ্ছে পুলিশ মোতায়েন। কালিগঞ্জ উপজেলা শিয়াল খোওয়া এলাকার কৃষক শাহা আলী বলেন, কীটনাশকের পর সারের দাম বৃদ্ধিতে খাদ্যশস্য ও সবজি উৎপাদনে চাপের মুখে পড়েছি। চলতি আমন মৌসুমে ধান উৎপাদনে খরচ কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। কারণ কিছুদিন আগে এক বিঘা জমি হালচাষ করতে খরচ হতো ৮০০ টাকা। ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় সেই জমি হাল দিতে এখন খরচ হচ্ছে ১ হাজার ২০০ টাকা। তার ওপর বৃষ্টি না হওয়ায় বাড়তি সেচ দিতে প্রতি ঘণ্টায় খরচ হচ্ছে ৩০০ টাকা। এ ছাড়া রয়েছে চারা রোপণের কামলা খরচ, সার, কীটনাশক, নিড়ানি, কাটা ও মাড়াই খরচ। সব মিলিয়ে বিঘাপ্রতি প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ। এরপর জমিতে কী পরিমাণ ফসল হবে, তা বলাও সম্ভব নয়। লাভ তো দূরের কথা, এ বছর উৎপাদন খরচ ওঠানো সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। চাপারহাট এলাকার চাষি রবিউল ইসলাম বলেন, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও সার পাইনি। সার কিনতে গিয়ে কাড়াকাড়ি অবস্থা। মারামারিও হচ্ছে। এভাবে আমাদের পক্ষে আমন আবাদ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। একই এলাকার চাষি  হেলাল উদ্দিন বলেন, লাইনে দাঁড়িয়ে খুব কষ্ট করে সার নিতে হচ্ছে। তা-ও আবার এক বস্তার বেশি দেয় না। আমন ধান রোপণের পরে এখনো সার দিইনি। সারের এমন সংকট হবে কল্পনা করিনি। আমন চাষের যে এবার কী হবে বলতে পারছি না। জেলার বিএডিসির সার ডিলার কুদ্দুস আলী বলেন, চাহিদামতো সার পাওয়া যাচ্ছে না। যে পরিমাণ বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে, তার চেয়ে অনেক গুণ বেশি চাহিদা রয়েছে। ফলে সার বিক্রি করতে হিমশিম খাচ্ছি। লালমনিরহাটে কালিগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা এক বস্তা করে সার দিচ্ছি। পাশাপাশি কৃষকদের অতিরিক্ত সার ব্যবহার করতে নিরুৎসাহ করছি। ডিলাররা একসঙ্গে সার আনলে এমন ভিড় হতো না। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক হামিদুর রহমান বলেন, আমাদের এখানে এমওপি সারের কিছুটা সংকট রয়েছে। এরই মধ্যে অতিরিক্ত বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করেছি। আশা করছি দ্রুতই সার সংকট কেটে যাবে।

 

সর্বশেষ খবর