বুধবার, ১৭ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

আলু নিয়ে বিপাকে চাষি হিমাগার মালিক

জয়পুরহাট প্রতিনিধি

আলু নিয়ে বিপাকে চাষি  হিমাগার মালিক

জয়পুরহাটের হিমাগারগুলোতে প্রকার ভেদে প্রতি  কেজি আলু ১৬ থেকে ১৭ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু খুচরা বাজারে তা ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ভোক্তারা বেশি দামে আলু ক্রয়ে মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেট ভারী করলেও আলু রেখে বড় বিপাকে পড়েছেন আলু ব্যবসায়ী, হিমাগার মালিক ও চাষিরা। পাইকারি বাজারে দাম ও চাহিদা না থাকায় তাদের মোটা অঙ্কের লোকসান গুনতে হচ্ছে। আলুর দাম কমে যাওয়ায় হতাশায় ভুগছেন তারা। মৌসুমের শুরুতে বেশি দাম পেয়েও আলু বিক্রি না করে আরও বেশি লাভের আশায় হিমাগারে মজুদ করে এবার কৃষক ও ব্যবসায়ীরা  বেকায়দায় পড়েছেন। সে সঙ্গে আলু সংরক্ষণের ভাড়া আর আলু ক্রয়ের সময়ে ব্যবসায়ীকে ঋণ দেওয়ার টাকা আদায় করতে না পেরে বড় বিপাকে পড়েছেন হিমাগার মালিকরাও। জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বিগত বছর আলুর ভালো দাম পেয়ে চাষিরা আলু চাষে ঝুঁঁকে পড়েন। শুধু চাষিরাই নয় ব্যবসায়ীরাও বাণিজ্যিকভিত্তিতে আলুর চাষ করেন। পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা মৌসুমের শুরুতে হিমাগার মালিকদের কাছ থেকে গত বছরের মতো লাভের আশায় ঋণের টাকা নিয়ে  জেলার ২০টি হিমাগারে আলু রাখেন। মৌসুমের শুরুতে এসব হিমাগারে আলু সংরক্ষণ হয় (৬৫  কেজি ওজনে) ২৪ লাখ ৫৩ হাজার ২৫৩ বস্তা। সংরক্ষিত আলু উত্তোলনের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ১৫ নভেম্বর। এসব হিমাগারে ১৭ লাখ ৫১ হাজার ১৫৩ বস্তা আলু আজও মজুত রয়েছে। গত বছর এসময়ে মজুদের প্রায় বেশিভাগ আলু বিক্রি হয়েছিল। চাষি, ব্যবসায়ী ও হিমাগার মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় জেলার সর্বত্র আলুর উৎপাদন ভালো হয়েছিল। উৎপাদন ভালো হওয়ায় এবং গত বছর দাম ভালো পাওয়ার কারণে মৌসুমের শুরুতে বিক্রি না করে এবার হিমাগারে আলু মজুদ বেশি করেছে। তাতে হিমাগারের খরচসহ প্রতি বস্তা (৬৫   কেজি) প্রকার ভেদে আলুর খরচ পড়েছে ১২৫০  থেকে ১৩০০ টাকা। বর্তমান বাজারে আলু প্রতি বস্তা ১০২০ থেকে ১০৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। গড়ে বস্তা প্রতি লোকসান গুনতে হচ্ছে ২৫০ টাকা। বাজারে আলুর যে দাম তাতে আরও মোটা অংকের  লোকসান গুনতে হবে চাষি ও ব্যবসায়ীদের। সঙ্গে আলু ক্রয় করতে ব্যবসায়ীদের দেওয়া ঋণের টাকা এবং আলু রাখার ভাড়ার টাকা ওঠাতে বড়  বেকায়দায় পড়েছে হিমাগার মালিকরা। লোকসান  ঠেকাতে আলু রপ্তানির দাবি জানিয়েছেন সংশ্নিষ্টরা। হাট-বাজার ও হিমাগারগুলোতে সরেজমিনে গিয়ে  দেখা গেছে, ৬৫ কেজি ওজনের কার্ডিনাল (লাল) জাতের আলু প্রতি বস্তা ১০১০ টাকায়, ডাইমন্ড (সাদা) জাতের আলু প্রতি বস্তা ১০৬০ টাকায়, দেশি পাকরি  জাতের আলু প্রতি বস্তা ১১৫০ টাকায় এবং রুমানা (পাকরি) জাতের আলু প্রতি বস্তা ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের এই সময়ে দাম ভালো থাকায় প্রতিটি হিমাগারে সংরক্ষণকৃত আলু বাহির করতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়েছিল শ্রমিক ও কর্মচারিদের। অথচ এ বছরের চিত্র উল্টো। আলু সংরক্ষণকারীদের উপস্থিতি এবার নেই বললেই চলে। এখন পর্যন্ত সংরক্ষিত আলুর তিন ভাগের এক ভাগ পরিমাণও বাহির হয়নি। এবারে এম ইসরাত  কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষণকৃত ১ লাখ ৪৪ হাজার বস্তা আলুর মধ্যে রবিবার দুপুর পর্যন্ত বাহির হয়েছে ৩৪ হাজার বস্তা। একই চিত্র পুনট কোল্ড স্টোরেজ, আর বি স্পেশালাইস্ট, নরওয়েস্ট, নর্থপোল, সাউথপোল, পল্লী হিমাগর, সালামিন ফুডস, মোল্লা, হিমাদ্রী, মান্নান অ্যান্ড সন্সসহ জেলার ২০টি হিমাগারের। এম ইসরাত হিমাগারের ব্যবস্থাপক বিপ্লব         কুমার জানান, ডিজেলের দাম বৃদ্ধির ফলে সারা দেশে সব কিছুর দাম হু হু করে বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ আলুর দাম দিন দিন কমেই যাচ্ছে। এ কারণে চাষি ও ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি লোকসান গুনতে হচ্ছে হিমাগার মালিকদের।

 বর্তমানে হিমাগারে থাকা লাখ লাখ বস্তা আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। আর আলু মজুদের সময় হিমাগার মালিকরা  কোটি কোটি টাকা ঋণ দিয়েছেন চাষি ও ব্যবসায়ীদের। গুনীমঙ্গল বাজারের ব্যবসায়ী  মোজাফর হোসেন জানান, গত বছর আলুর দাম  বেশি পাওয়ায় লাভের মুখ দেখেছিলাম। তাই এ বছর ঋণ নিয়ে দেশি পাকড়ী লাল জাতের সাড়ে ৩ হাজার বস্তা, ষ্টিক লাল জাতের ১১ হাজার বস্তা এলাকার কয়েকটি হিমাগারে রেখেছি। বর্তমানে বাজারের যে অবস্থা তাতে এই মুহূর্তে আলুগুলো বিক্রিতে প্রায় ৩৮ লাখ টাকা লোকসান হবে। এবার আলু রেখে বড় ভুল করেছি। আসলে বুঝতে পারছি না।  সড়াইল গ্রামের কৃষক সুজাউল ইসলাম বলেন, এবার আলু নিয়ে বড় বিপদে আছি। মৌসুমের শুরুতে আলু বিক্রি না করে কেন হিমাগারে রাখলাম। নিজের ভুলের খেসারত বড় করেই গুনতে হচ্ছে। লাভের আশায় আলু রাখলাম, এখন লাভ  তো দূরের কথা উল্টো মূল ধন খুইয়ে লোকশান গুনতে হচ্ছে। আলুর বিকল্প ফসল ফলানোর চিন্তা না করে আর উপায় নেই। জেলা মার্কেটিং কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আলুর দরপতন নিয়ে এবার সবাই চিন্তিত। যেসব কোম্পানিগুলো আলু বিদেশে রপ্তানি করে তাদের সঙ্গে আমরা দফায় দফায় আলোচনা অব্যাহত রেখেছি। দেখা যাক কী হয়। তবে দাম বেশি নিয়ে আমরা বাজারে মনিটরিং অব্যাহত রেখেছি।

সর্বশেষ খবর