শনিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

কুড়িগ্রামে সার সংকট

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

কুড়িগ্রামে সার সংকট

আমন খেতে সার ছিটাচ্ছেন কৃষক -বাংলাদেশ প্রতিদিন

আমন মৌসুমের শুরুতেই কুড়িগ্রামে সার সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে গ্রামগঞ্জে ব্যবসায়ী ও দোকানগুলোতে বিভিন্ন সারের দেখা মিলছে না। ফলে কৃষকদের মাঝে দেখা  দিয়েছে চরম অসন্তোষ। আর সার ডিলারদের কাছে সামান্য কিছু পাওয়া গেলেও কৃষকদের কিনতে হচ্ছে চরা দামে প্রায় দ্বিগুণ মূল্যে। এ ছাড়াও প্রতিদিন বাড়ছে ইউরিয়া সারের মূল্য। অন্যদিকে, পাল্লা দিয়ে বেড়ে যাচ্ছে কীটনাশকের দাম। এ অবস্থায় চলতি মৌসুমে আমন আবাদে বাড়তি খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন এখানকার কৃষকরা। কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ১৯ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে হাইব্রিড জাত ১২ হাজার ৭৫০ হেক্টর, উফশী ৯৪ হাজার ৫০০ হেক্টর এবং স্থানীয়জাত ১২ হাজার ৭০০ হেক্টর। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৫৫৫ মেট্রিক টন। এবার ৫ লাখ ৮ হাজার ৪৯৩ জন কৃষক আমন চাষে যুক্ত হয়েছেন। কিন্তু ডিজেল এবং ইউরিয়া সারের মূল্য বৃদ্ধিসহ হাল চাষে খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় দুর্ভাবনায় দিন কাটছে এসব চাষির। সরেজমিন জানা গেছে, এবার আমন চাষাবাদে ইউরিয়া সারের চাহিদা রয়েছে ৯২ হাজার ৩০৬ মেট্রিক টন। টিএসপি ২২ হাজার ৮৭১ মেট্রিক টন, ডিএপি ৪৩ হাজার ৪৩৩ মেট্রিক টন, এমওপি ৫২ হাজার ১৯৫ মেট্রিক টন, জিপসাম ৩৬ হাজার ৪৭২ মেট্রিক টনসহ অন্যান্য সার। এর মধ্যে জেলায় ইউরিয়া সার বরাদ্দ পাওয়া গেছে ৫৫ হাজার ২ মেট্রিক টন, টিএসপি ১০ হাজার ৪৪৬ মেট্রিক টন, ডিএপি ১৫ হাজার ৪৫৭ মেট্রিক টন, এমওপি ২৩ হাজার ৮৮৭ মেট্রিক টন এবং জিপসাম ১৪ হাজার ৬৫৬ মেট্রিক টনসহ চাহিদার অর্ধেক অন্যান্য সার। চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম হওয়ার সুযোগে সরকারের নির্ধারিত দামের চেয়ে দেড় থেকে দুই গুণ বেশি দামে কৃষকদের কাছে সার বিক্রি করছেন সার ডিলার ও ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে এমওপি সারের দাম বাড়ানো হয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। খুচরা বাজারে ৫০ কেজির এক বস্তা এমওপি সার সরকারের দেওয়া নির্ধারিত দাম ৭০০ টাকা হলেও বিক্রি করা হচ্ছে ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকা দরে। অনেক সময় সেটাও পাওয়া যাচ্ছে না। ডিএপিতে বস্তা প্রতি দাম বাড়িয়েছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। শুধু ইউরিয়াবাদে অন্যান্য সব ধরনের সারে মূল্য বৃদ্ধি করেছে ব্যবসায়ীরা। এর ফলে এক প্রকার বাধ্য হয়ে তা কিনছেন প্রান্তিক কৃষকরা। এদিকে সারের পাশাপাশি দ্বিগুণ মূল্যে ডিজেল ও কীটনাশক কিনতে হচ্ছে কৃষকদের। ফলে অতিরিক্ত উৎপাদন খরচ নিয়ে চিন্তিত কৃষক। একসঙ্গে কৃষির সঙ্গে সম্পর্কিত সব ধরনের জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির কারণে কৃষকদের এখন নাভিশ্বাস অবস্থা। তারা কীভাবে এই বাড়তি মূল্য সমন্বয় করবেন তা নিয়ে রয়েছেন ভীষণ দুশ্চিন্তায়। রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের মিরেরবাড়ী এলাকার কৃষক আতাউর রহমান জানান, তিন দিন বিভিন্ন হাটবাজারে ঘুরেও পটাশ (এমওপি) সার পাইলাম না। একই এলাকার জসমত আলী জানান, অনেক খুঁজে পাশর্^বর্তী লালমনিরহাট জেলার বড়বাড়ী বাজার থেকে ১৪০০ টাকায় এক বস্তা পটাশ সার কিনলাম। এত দাম বাড়লে কৃষক চলবে কীভাবে। এদিকে নাগেশ্বরী উপজেলার কেদার ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর এলাকার কৃষক হারেজ আলী জানান, তিনি ১০ বিঘা জমিতে আমন চাষ করেছেন। এখন জমিতে অন্যান্য সারের সঙ্গে পটাশ (এমওপি) সার দিতে হচ্ছে কিন্তু বাজারে পটাশ সার পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে সময়মতো সার দিতে পারছেন না জমিতে। নাগেশ্বরী কচাকাটা বাজারে কেদার ইউনিয়নের ডিলার মেসার্স কাশেম ট্রেডাসে গিয়ে দেখা যায় দ্বিগুণ দামে এমওপি সার বিক্রি করছেন। এখানে ডিলারের নিযুক্ত ব্যক্তি সাইদুল ইসলাম জানান, বেশি দামে সার বিক্রি করা ঠিক নয় তার দোকানের কর্মচারী ভুলে বিক্রি করে ফেলেছে। একই ইউনিয়নের সার ডিলার আল মামুন জানান, এমওপি সারের দাম অনেক বেশি হওয়ায় তিনি তা ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ করে দিয়েছেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক শামসুদ্দিন মিঞা জানান, চাহিদার তুলনায় সারের কম বরাদ্দ পাওয়ায় কিছুটা সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর