রবিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

মধুখালী শ্রমের হাট

বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি

মধুখালী শ্রমের হাট

হাটে খদ্দেরের অপেক্ষায় দিনমজুর

ফরিদপুরের মধুখালীতে গড়ে উঠেছে কৃষি শ্রম বিক্রির বিশাল হাট। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রতিদিন শত শত দরিদ্র মানুষ এখানে আসেন শ্রম বিক্রি করতে। বিশেষ করে  মধুখালী বাজারে শুক্র ও সোমবার হাটের দিন। বেলা বাড়তেই মধুখালী বাজার বাসস্ট্যান্ড ওয়ালটন শো-রুমের সামনে চোখে পড়ে মানুষের জটলা। সকাল থেকেই মানুষগুলো জড়ো হতে শুরু করে। আরেক শ্রেণির মানুষ এখানে আসেন শ্রম কিনতে যারা কৃষি খামার করেন। প্রায় ১০/১২ বছর ধরে মধুখালীতে এই কৃষি শ্রমিকের হাট গড়ে উঠেছে আপন গতিতে। এসব শ্রমিক পাট কাটা, ধোয়া থেকে শুরু করে খেত-খামার এবং গৃহস্থালির বিভিন্ন কাজ করে থাকেন। সপ্তাহের দুই দিন এ দুই হাটে উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন থেকে গ্রামের গেরস্থরা শ্রম বা কৃষি শ্রমিক কিনতে আসেন। হাটে ওঠা পণ্যের মতো এখানেও চলে দরদাম। এসব শ্রমিকের শ্রমের মূল্য ৩৫০-৫৫০ টাকা পর্যন্ত সঙ্গে তিন বেলা খাবার। সকাল হলেই চলতে থাকে দরদাম, দাম ওঠানামা করে যাকে বলা হয় বদলি। কেউ বলে কামলা। আবার অনেকে বলেন কৃষি শ্রমিক। সপ্তাহের শুক্র ও সোমবারের হাটে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত চলে এই বদলির বাজার। সরেজমিন দেখা গেছে, মূলত ফরিদপুর, যশোর, সাতক্ষীরা, শেরপুর, পাবনা, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, রাজবাড়ীসহ বিশেষ করে উত্তরবঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন জেলার লোকজন এখানে আসেন কাজের সন্ধানে। এক বেলার জন্য বা কয়েক দিনের জন্য তারা বিক্রি হয় এই বাজারে। গতকাল শ্রমিকের হাটে কথা হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা মামা ও ভাগিনা মো. মুসা এবং ইসরাফিলের সঙ্গে। তারা জানান, তাদের নিজ জেলায় এ মৌসুমে তেমন কাজ নেই। পারিবারিক সমস্যায় পড়ে পরিবারের সদস্যের নিয়ে এখানে এসেছেন।

ভাড়া বাড়িতে থাকেন। এ মৌসুমে কাজ করে কিছু টাকা গুছিয়ে নিজ বাড়িতে ফিরে যাব। এ অঞ্চলে শ্রমের দাম বেশি, কাজও বেশি। তাছাড়া প্রতিদিন শ্রম বিক্রি করা যায়। তাই এখানে চলে আসি। শেরপুরের কামরুজ্জামান (৪২) জানান, মহাজনেরা আমাদেরকে মানুষ হিসেবেই গণ্য করে না। কাজের একটুও বিশ্রাম দিতে চায় না। সাতক্ষীরা থেকে আসা খোকন বলেন, পাঁচ-সাত বছর এলাকাতে কাজে আসি। এবার ৩৩ দিন হয়েছে এসেছি। রাতে রেলস্টেশনে ঘুমাই, দিনে কাজের সন্ধানে যাই। কাজের মৌসুম শেষ করে আবার এলাকাতে চলে যাব। বাজার বাসস্টান্ডের ওয়ালটন এক্সক্লুসিভ শোরুমের স্বত্বাধিকারী মো. রেজাউল করিম বলেন, আমার শোরুম চালু করারও পূর্বে বিভিন্ন জেলা থেকে এখানে এসে কৃষি শ্রমিকের হাট বসে। সামনের স্থানটা পাকা করে দেওয়ায় তারা এখানে সুন্দর ভাবে শ্রম বিক্রি করতে পারেন। শ্রমিক নেতা ফরিদপুর চিনিকল শ্রমজীবী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক কাজল বসু বলেন, কৃষি শ্রমিকগণ শ্রম বিক্রি করতে আসেন। কৃষি শ্রমিকদের নিরাপত্তাহীনতাসহ নানা রকম সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। রাতের বেলায় যাত্রী ছাউনি, বিভিন্ন মার্কেটের বারান্দায় এবং রেল স্টেশনে রাত্রি যাপন করেন। আবার কেউ খোলা আকাশের নিচেই রাত কাটান। কাজ না পেলে কেউ খবর নেই না, খেয়ে না খেয়ে দিন-রাত কাটে। কাজ এবং খাদ্য সংকটে ভোগেন তারা।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর