সোমবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

চাষাবাদ করে বেঁচে থাকার লড়াই

নওগাঁ প্রতিনিধি

চাষাবাদ করে বেঁচে থাকার লড়াই

হু হু করে প্রতিদিনই বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। বরেন্দ্রভূমি হিসেবে পরিচিত নওগাঁ জেলায় এক সময় বৃষ্টিনির্ভর আমন ধান ছাড়া অন্য কোনো ফসল হতো না। কৃষির আধুনিকায়নের ফলে জেলার অধিকাংশ জমিতেই এখন তিন ফসল চাষাবাদ হয়। এর মধ্যে ধান চাষে আগ্রহ বেশি কৃষকের। এ এলাকায় বেশি ধান উৎপাদন হওয়ায় স্থানীয়রা নওগাঁকে ধানের রাজধানী বলে থাকেন। চলতি আমন মৌসুমে নওগাঁয় দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৯৭ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ধান উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখা এ জেলার কৃষকদের কপালে এখন দুশ্চিন্তার ভাঁজ। কারণ রোপা আমনের ভরা মৌসুমে কয়েক দিনের ব্যবধানে ইউরিয়া ও ডিজেলের দাম বাড়ার ফলে ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন কৃষকরা। কৃষকরা বলছেন, চলতি আমন মৌসুমে সার ও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে উৎপাদন ব্যয় উঠবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। বেশি সমস্যায় বর্গাচাষি ও ক্ষুদ্র কৃষকরা। তাদের ভাষ্য, সার ও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে প্রতি বিঘায় ধান উৎপাদনে বাড়তি ৩ হাজার টাকা খরচ পড়বে। প্রতি বিঘা জমিতে ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা ব্যয়ে ফসল উৎপাদন করে ন্যায্যমূল্য না পেলে বড় ধরনের সংকটে পড়তে হবে। সদর উপজেলার ফতেপুর মাঠে বর্গা নেওয়া জমিতে ছেলে হালিমকে নিয়ে শুক্রবার সকালে ধানের চারা রোপণ করছিলেন নওগাঁর পার-বোয়ালিয়ার বাসিন্দা করিম হোসেন। তিনি বলেন, ‘চাষাবাদ করে এখন বেঁচে থাকার লড়াইয়ে আমাদের জীবনজীবিকা চলছে। ডিজেলের দাম বাড়ার কারণে আগে এক বিঘা জমিত একবার হাল দিতে টিলার মালিকেরা ২৫০ টাকা লিত, অ্যাকন সেটিত ল্যাওচে ৪০০ টাকা। গত বোরো মৌসুমে একই জমিত শ্যালোমেশিন দিয়ে স্যাচ দিতে ১২০ টাকা দিতু আর অ্যাকন দ্যাচি ২০০ টাকা। আবার ইউরিয়া সারের দাম প্রতি ধাড়ায় (৫ কেজি) বাড়ছে ৩০ টাকা। অ্যাতো খরচ করে ধানের ন্যায্যদাম না পাইলে বউ-ছল লিয়ে মরা ছাড়া বুদ্ধি থ্যাকবে না।’ স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইউরিয়া সারের দাম প্রতি কেজিতে ৬ টাকা করে বৃদ্ধি করায় প্রতি বিঘা জমিতে ধান উৎপাদনে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বেশি খরচ পড়বে। তবে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে ধান উৎপাদনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে। ডিজেলের দাম প্রতি লিটারে এক লাফে ৮০ থেকে ১১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে ধানের জমি প্রস্তুতের জন্য পাওয়ার টিলার কিংবা ট্রাক্টর দিয়ে তিন চাষে আগে ৭৫০ টাকা নেওয়া হতো এখন সেখানে নেওয়া হচ্ছে ১২০০ টাকা। অনাবৃষ্টির কারণে এ বছর সেচ দিয়ে ধান আবাদ করতেও বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। ডিজেলচালিত ইঞ্জিনে আগে যেখানে প্রতি ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ টাকা নেওয়া হতো, এখন সেখানে নেওয়া হচ্ছে ২০০ টাকা। শ্যালোইঞ্জিন থেকে জমির দূরত্বের অনুপাতে এক বিঘা জমিতে সেচ দিতে দুই থেকে তিন ঘণ্টা সময় লেগে থাকে। সে হিসাবে এক বিঘা জমিতে একবার সেচ দিতে বাড়তি প্রায় ২০০ টাকা খরচ পড়ছে। একটি জমিতে পুরো মৌসুমে সেচ দেওয়ার প্রয়োজন পড়লে সাধারণত ১০ থেকে ১২ বার সেচ দিতে হয়। অর্থাৎ প্রতি বিঘা জমিতে সেচ খরচ বাড়বে প্রায় ২ হাজার টাকা। ইউরিয়া ও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে ধান উৎপাদনে প্রায় ৩ হাজার টাকা বেশি খরচ পড়বে। বিএফএ নওগাঁ জেলা শাখার সভাপতি রেজাউল ইসলাম বলেন, আমন মৌসুমে সাধারণত আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে সারের মূল চাহিদা থাকে। ডিলারদের জন্য প্রতি মাসে বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়।

সর্বশেষ খবর