সোমবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

দখলে হুমকির মুখে দাদনা খাল

ফেনী প্রতিনিধি

দখলে হুমকির মুখে দাদনা খাল

দখলে হুমকির পথে ফেনীর দাগনভূঞার দাদনা খাল। গুরুত্বপূর্ণ এই খালটি নোয়াখালীর সেবেরহাট হয়ে দাগনভূঞার রামনগর, সদর উপজেলা, এয়াকুবপুর, চৌধুরীর হাট, তালতলী হয়ে সোনাগাজীর চরমজলিসপুর দিয়ে ছোট ফেনীতে মিলিত হয়েছে। উপজেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও জলাবদ্ধতা নিরসনে খালটি রাখছে ব্যাপক ভূমিকা। এই অঞ্চলের কৃষিখাতে এর অবদান কম নয়। বর্তমানে খালটি দখল ও ভরাট হয়ে অনেকটা বিলুপ্তির পথে। দাদনা খালের পুরো অংশই রয়েছে দখলদারদের কবলে। বিশেষ করে দাগনভূঞার বাজারের অংশটি দখল করে রেখেছে প্রভাবশালী রাঘববোয়ালরা। সেখানে তারা নির্মাণ করেছে দোকান-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। অনেকে বাড়ি-ঘরও করেছে খালের মধ্যে। দখলে নিয়েছে তাদের বাড়ির আঙিনা হিসেবেও। খালটিতে কিছু খেটে খাওয়া মানুষও টংয়ের দোকান তৈরি করে ব্যবসা করছে। যে যেদিক দিয়ে সুবিধা পেয়েছেন সেদিক দিয়েই দখল করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। খালটি দখলের কারণে বর্ষা মৌসুমে উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলে জলাবদ্ধতার চরম আকার ধারণ করে। দখলের ফলে দাগনভূঞায় যেমন জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে তেমনি কৃষিখাতেও ব্যাঘাত ঘটছে।  সরেজমিন দেখা যায়, দাগনভূঞা বাজারের গৌখানার পশু জবাইকৃত ময়লা, পৌর শহরের কাঁচা বাজারের ময়লা ফেলা হয় এই খালে। বিভিন্ন বাসা-বাড়ির আবর্জনার ও আশপাশের আবর্জনাও বিভিন্নভাবে এসে এই দাদনার খালের দাগনভূঞা দক্ষিণ বাজার অংশও ভরাট হয়ে যাচ্ছে। খালটির বিভিন্ন অংশে প্রভাবশালী দখল করে নির্মাণ করেছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়ি। স্থানীয় কৃষকরা জানান, তারা শত শত একর জমিতে ফসল করতে পারছেন না। ব্যবসায়ী সিরাজ উদ্দৌলা বলেন,  খালটি প্রায় ভরাট হয়ে বর্ষায় ঘরবাড়ি, মৎস্য প্রকল্প ও রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। আমি জন্ম থেকে দেখিনি খালটির সংস্কার বা খনন করতে। বর্জ্য ফেলার কারণে বৃষ্টি এলেই পানি আটকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। দাগনভূঞা বাজারের ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল হুদা জানান খালের ময়লা-আবর্জনা ও দুর্গন্ধের কারণে মাদরাসায় পড়তে আসা শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। মাদরাসাটির পাঠদানের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ দাদনা খালটির ব্যাপারে মেয়র সাহেবকে অবগত করা হলেও আজ পর্যন্ত কোনো কূল কিনারা হয়নি। বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন লিটন জানান খালটি ভরাট হওয়ার কারণে যেমন তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা তেমনি দুর্গন্ধের কারণে আমার ব্যবসায়ীরা দোকানে বসতে পারি না। পৌরসভার মেয়র ওমর ফারুক খান জানান দাদনা খালটি আমাদের নয় এটা পানি উন্নয়ন বোর্ডের আমরা শুধু পরিষ্কার করে দিতে পারি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহির উদ্দিন জানান, খাল খননের কাজটি সাধারণত বিএডিসি করে থাকে। সরকারের হাতে যে ৬৪ জেলা প্রকল্প আছে তাতে আমার দাদনা খালের প্রস্তাবনাও পাঠিয়েছি। পাস হয়ে           আসলে কাজ করা হবে। তার আগে আমাদের কিছুই করার নেই। নদী দখলের ব্যাপারে তিনি জানান, খাল খননের কাজ শুরু হলে আমরা সার্ভেয়ার দিয়ে মেপে দেখব। আমাদের জমি হলে আমরা উদ্ধার করব। তাছাড়া আমাদের কিছু করার নেই।  স্থানীয়রা দখলদারদের হাত থেকে খালটি উদ্ধার ও যত্রতত্র খালে ময়লা-আবর্জনা ফেলে খাল ভরাট থেকে খালটিকে উদ্ধার করে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানান।

সর্বশেষ খবর