মঙ্গলবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

টাঙ্গাইলে মৃৎশিল্পের দুর্দিন

নাসির উদ্দিন, টাঙ্গাইল

টাঙ্গাইলে মৃৎশিল্পের দুর্দিন

উন্মুক্ত বাজার প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পেরে টাঙ্গাইলের মৃৎশিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে। অত্যাধুনিক প্লাস্টিক, অ্যালুমোনিয়াম ও মেলামাইনের তৈজসপত্রের দাপটে এ শিল্প প্রায় বিলুপ্ত। জেলার মৃৎশিল্পীরা অর্থাভাবে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। কেউ কেউ ইতোমধ্যে চলে গেছেন ভিন্ন পেশায়। টাঙ্গাইলে এক সময় তৈজসপত্রের চাহিদা পূরণ করত মাটির তৈরি হাঁড়ি, পাতিল, কলসি, থালা (সানকি), কুয়ার পাট, নানা খেলনা, পিঠা তৈরির খরমা (সাজ)। গ্রাম্য মেলা ও হাট-বাজারে মাটির নানা পণ্য শোভা পেত। টাঙ্গাইল বিসিক সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলায় ১৫৮, বাসাইলে ১১৫, নাগরপুরে ১০৭, মির্জাপুরে ৯৯, দেলদুয়ারে ৬৫, ঘাটাইলে ৬০, ভূঞাপুরে ২২০, কালিহাতীতে ২৮০, গোপালপুরে ১১২, ধনবাড়ীতে ১০ এবং মধুপুরে ৯টি কুমার পরিবার বসবাস করছে। জেলায় ১ হাজার ২৩৫টি কুমার পরিবার থাকলেও অধিকাংশই বাপ-দাদার পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছেন। সরেজমিন দেখা যায়, মৃৎশিল্পীরা সুনিপুণ হাতে তৈরি করছেন পুতুল, ফুলের টব, কুয়ার পাট, হাঁড়ি-পাতিল, খেলনা, শোপিসসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় ও শৌখিন জিনিসপত্র। এসব পণ্য তারা শহরের দোকান এবং বাসাবাড়িতে বিক্রি করে থাকেন। বর্তমান সময়ে মৃৎশিল্পের তৈজসপত্রের ব্যবহার তেমন চোখে পড়ে না। শৌখিন জিনিসপত্র এবং কুয়ার পাট তৈরিই মৃৎশিল্পীদের জীবিকার একমাত্র মাধ্যম। গ্রামীণ মেলা-সংশ্লিষ্টরা জানান, জেলার মৃৎশিল্পীরা প্রতি বছর তাদের পণ্যের পসরা সাজিয়ে মেলার আকর্ষণ বাড়ানোর পাশাপাশি ক্রেতা টানতেন। মাটির জিনিসপত্রের ব্যবহার কমে যাওয়ায় এখন হাতেগোনা কয়েকজন মৃৎশিল্পী খেলনা, ফুলদানি ও শোপিস নিয়ে মেলায় অংশ নেন। মৃৎশিল্পের স্থান কাঠের ফার্নিচার দখল করে নিয়েছে। টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বাসাখানপুরের চৈতি পাল, বাদল পাল, ঝরনা রানী পাল, দেলদুয়ারের গমজানির নিমাই পাল, মির্জাপুরের গণেশ পাল, ভূঞাপুরের ফলদা কুমারপাড়ার পিয়াতা পাল, কালিহাতীর স্বপন পাল, পরিতোশ পাল, গদাই পালসহ অনেকে জানান, মাটির তৈজসপত্র এক সময় ঘর-গেরস্থালির প্রধান উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। সাধারণত বর্ষাকালে মাটির পণ্য রোদে শুকানো যায় না। এ কারণে মৃৎশিল্পীদের বছরের তিন-চার মাস বেকার সময় কাটাতে হয়। টাঙ্গাইল বিসিক শিল্প নগরীর সহকারী মহাব্যবস্থাপক শাহনাজ বেগম বলেন, বিসিক থেকে সরকারি সহযোগিতায় মৃৎশিল্পীদের বিভিন্ন ধরনের কারিগরি ও আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হয়। যেসব মৃৎশিল্পী শোপিস তৈরি করেন তাদের দেওয়া হয় প্রশিক্ষণ ও ব্যাংক ঋণ।

সর্বশেষ খবর