মঙ্গলবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

দেবীর আগমনকে ঘিরে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরে ঘরে ব্যস্ততা বেড়েছে। কেউ প্রস্তুতি নিচ্ছে কেনাকাটায়, কেউ-বা নাড়ুমোয়া তৈরির। আর এক দিকে দেবীর আগমনকে ঘিরে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত মৃৎশিল্পের কারিগররা। মাটি আর হাতের ছোঁয়ায় কাঠামো তৈরির কাজ চলছে। প্রতিমার প্রতিরূপ ফুটে তোলার কর্মে ব্যস্ত রয়েছেন কারিগররা। বগুড়া জেলায় এবার ৬৯০টি ম পে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার প্রস্তুতি চলছে জোড়েসোড়ে। জানা যায়, জেলায় নানা আয়োজনে শারদীয় দুর্গাপূজার প্রস্তুতি চলছে। শারদীয় দুর্গোৎসবকে সামনে রেখে বগুড়ায় প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পীরা। শিল্পীদের হাতের কারুকাজে প্রতিমার কাঠামো সেজে উঠেছে। প্রতিমার কারিগররা আট থেকে ১০টি করে প্রতিমা নিয়ে রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছেন। আর ম পে মন্ডপে চলছে নানা আয়োজন। কারিগররা কোথাও প্রতিমার কাঠামো তৈরি করে মাটি ভরাট করে যাচ্ছে। কোথাও মাটি ভরাট করে প্রতিমার প্রতিরূপ ফুটে তোলার কর্মে ব্যস্ত রয়েছে প্রতিমার কারিগররা। আর কয়েকদিন পর রঙের আঁচড়ে সেজে উঠবে প্রতিমাগুলো। শারদীয় দুর্গাপূজার খুব বেশি দেরি না থাকায় বগুড়ায় উৎসবের প্রতি ঝুঁকে পড়তে দেখা যাাচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের। মন্দির মন্ডপের প্রস্তুতি চলছে।

সাজসজ্জা করতে মন্দির ম প ডেকোরশনের কাজ সবখানে শুরু না হলেও আয়োজন চলছে মাপজোকের। ভক্তদের প্রেবেশের জন্য ভিন্ন ভিন্ন কারুকাজে বিরাট গেট তৈরি করা হচ্ছে। বাঁশ, কাঠ, কাপড় দিয়ে ম পের শোভা বাড়ানোর প্রস্তুতি নিয়েছে ম প কর্তৃপক্ষ। এসব ব্যস্ততার মধ্যেও বাড়িতে সবার জন্য কেনাকাটাও শুরু করেছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।

বগুড়া শহরের নিউমার্কেট, জলেশ্বরীতলা, রানার প্লাজা, আলতাফ আলী সুপার মার্কেট, হকার্স মার্কেটসহ বিভিন্ন বিপণিবিতানে পূজার কেনাকাটা করতে ভিড় বেড়েছে আগের থেকে দিগুণ। পূজার জন্য নতুন জামাকাপড়। পাদুকা থেকে প্রসাধনী সবই মনের মতো করে খুঁজে ক্রয় করছে। আবার কাটা কাপড়, শাড়ি, নারীদের সাজের প্রয়োজনীয় অর্নামেন্ট, তৈরি পোশাক, টেইলার্স, নতুন কাপড়ের দোকানেও ভিড় বেড়েছে। তবে এবার কেনাকাটায় নারীদের প্রথম পছন্দ শাড়ি। আর ছেলেরা ধুতির সঙ্গে রং মিলিয়ে নিচ্ছেন পাঞ্জাবি। আর তরুণরা জিন্স ও টি-শার্টে ঝুঁকেছেন। তরুণীরা মজেছেন ভারতীয় বিভিন্ন রঙের থ্রি পিসে। আর শিশুদের তৈরি পোশাক বিক্রি হচ্ছে বেশি।

শিশুদের তৈরি পোশাকের মধ্যে রয়েছে ছেলেদের জন্য প্যান্ট, টি-শার্ট, গেঞ্জি, মেয়েদের জন্য টপ, পার্টি ফ্রগ, সুতির বিভিন্ন ডিজাইনের জামা। তবে পূজা উপলক্ষে অনেকেই ছুটছে স্বর্ণের দোকানে। জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, বগুড়া জেলার ১২টি উপজেলায় এ বছর শাজাহানপুরে ৫৬টি, নন্দীগ্রামে ৪৬টি, শিবগঞ্জে ৬৩টি, আদমদিঘীতে ৬৫টি, সারিয়াকান্দিতে ২০টি, দুপচাঁচিয়ায় ৪২টি, ধুনটে ২৯টি, সোনাতলায় ৫০টি, শেরপুরে ৯০টি, গাবতলীতে ৭৩টি, কাহালুতে ৩৬টি এবং বগুড়া সদরে ১২০টি ম পে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।

আগামী ১ অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে এবারের দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। সে হিসাবে ৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবাবের দুর্গোৎসব। এ বছর দেবী দুর্গা আসছেন গজে (হাতি) চড়ে আর ফিরে যাবেন নৌকায় চড়ে। দেবীর আগমনে বিশ্ব হবে শান্তিময়, অশুভ শক্তিকে বিনাশ করে উদয় হবে শুভশক্তির- এমনটাই প্রত্যাশা তাদের। বগুড়া জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সাগর কুমার রায় জানান, প্রশাসনের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে পূজা অনুষ্ঠানে বৈঠক হয়েছে। প্রতিবারের মতো এবারও প্রতিটা মন্দিরে আনসার বাহিনীর সদস্য সার্বক্ষণিক থাকবে। এর পাশাপাশি নিজ দায়িত্বে প্রতিটি মন্দিরে কমিটির পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবী নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকাসহ সম্ভব হলে সিসি ক্যামেরা লাগানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে কম আলোকসজ্জা ব্যবহারের সুপারিশ করা হয়েছে। পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী জানান, পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হবে। পোশাকে থাকার পাশাপাশি সাদা পোশাকেও নিরাপত্তা প্রদানে কাজ করা হবে। আয়োজক কমিটির পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে টহল টিমও সতর্ক হয়ে মাঠে কাজ করবে। বগুড়ায় অতীতেও সুন্দর ও শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবারো শান্তিপূর্ণভাবেই সব আয়োজন সম্পন্ন হবে। এ জন্য সব ধরনের নিরাপত্তার কাজ করবে পুলিশ বিভাগ।

সর্বশেষ খবর