শনিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

দখল-দূষণে নাব্য হারিয়েছে রায়পুরের ডাকাতিয়া

রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি

দখল-দূষণে নাব্য হারিয়েছে রায়পুরের ডাকাতিয়া

লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া একসময়ের খরস্রোতা ডাকাতিয়া নদী নাব্য হারিয়ে এখন মরাখালে পরিণত হয়েছে। নদীর বিভিন্ন অংশ দখল করে স্থাপনা নির্মাণ, ময়লা-আবর্জনা ফেলে পানির প্রবাহ বন্ধ করা, তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়া এবং কচুরিপানা জন্মে বন্ধ হয়ে গেছে নৌ-চলাচল। ঢাকা ও চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন শহর ও নৌবন্দর থেকে মালামাল পরিবহনের জন্য একসময় রায়পুরবাসী এই নদীপথের ওপর নির্ভরশীল ছিল।

জানা যায়, ডাকাতিয়া নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৪১ কিলোমিটার ও গড় প্রস্থ ৬৭ মিটার। নদীটি ছিল তীব্র খরস্রোতা। মেঘনার এই শাখানদীতে ফুটে উঠত উত্তাল রূপ। স্রোতের তীব্রতায় প্রায়ই নদীর দুই পাড়ে ভাঙন সৃষ্টি হতো। নদীতে বিলীন হতো ঘর-বাড়ি আর ফসলের মাঠ। ডাকাতের মতো আগ্রাসী হওয়ায় মানুষ এ নদীর নাম দেয় ‘ডাকাতিয়া নদী’। একদা ডাকাতিয়া নদী ছিল লক্ষ্মীপুরের রায়পুর, চাঁদপুর ও দক্ষিণ কুমিল্লার কয়েক উপজেলার মানুষের কাছে আশীর্বাদ। এটি ছিল তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা ও মালামাল আনা-নেওয়ার প্রধান মাধ্যম। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াতের জন্যও মানুষ ব্যবহার করতেন ডাকাতিয়া নদীপথ। চলাচল করত বড় বড় যাত্রীবাহী লঞ্চ, মালবাহী নৌকা ও ট্রলার। শুষ্ক মৌসুমে নদীতীরের কৃষকরা ফসল আবাদের জন্য পেতেন ডাকাতিয়ার পানি। নদীতে ছিল দেশীয় মাছের প্রাচুর্য। কালের পরিক্রমায় এখন ডাকাতিয়া যেন পরিত্যক্ত জলাধার। মৃতপ্রায় ডাকাতিয়ায় এখন মাছের উৎপাদন না থাকায় জেলেরা পেশা পরিবর্তন করছেন। ডাকাতিয়ায় এখন আর শোনা যায় না যাত্রীবাহী লঞ্চের শব্দ। দেখা যায় না পালতোলা নৌকা। নেই মাঝি-মাল্লাদের ভাটিয়ালি ও জারি-সারি গানের সুর। নদীতীরে নেই নির্মল বাতাস। প্রাণবন্ত ডাকাতিয়া যারা দেখেছেন তাদের কাছে এই ডাকাতিয়া যেন ‘অভিশপ্ত দীর্ঘশ্বাস’।

কিছুদিন আগে ‘ডাকাতিয়া সুরক্ষা আন্দোলন’ এই নদী দখল ও দূষণমুক্ত করার লক্ষ্যে রায়পুর পৌর শহরে মানববন্ধন করেছে। তাদের আহ্বান, ডাকাতিয়া নদী দখল ও দূষণমুক্ত করার জন্য সরকারি, বেসরকারি ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। রায়পুর উপজেলা নদীরক্ষা টাস্কফোর্সের আহ্বায়ক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাসেল ইকবাল বলেন, ভরাট ও অবৈধভাবে দখল হয়ে যাওয়া নদী পুনরুদ্ধারের জন্য শিগগিরই অভিযান পরিচালনা করা হবে। রায়পুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মামুনুর রশীদ বলেন, দখল হয়ে যাওয়া নদীতীর পুনরুদ্ধার ও নদতে নাব্য ফিরিয়ে আনতে পারলে অর্থনৈতিকভাবে রায়পুরের দৃশ্যপট পাল্টে যাবে।

সর্বশেষ খবর