শনিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

পাটের ভালো দামেও হাসি নেই কৃষকের

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

পাটের ভালো দামেও হাসি নেই কৃষকের

বগুড়ার বাজারে পাটের মণ ৩ হাজার টাকা করে বিক্রি হলেও খুশি নন চাষিরা। সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় এবং কৃষি শ্রমিকের মজুরি বেশি হওয়ায় পাট উৎপাদনে খরচ বেড়েছে বলে দাবি তাদের। বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফর সূত্রে জানা যায়, জেলায় চলতি বছর পাট চাষ হয় ১২ হাজার ২৫৭ হেক্টর জমিতে। পানির অভাবে কৃষকরা বিভিন্ন উপায়ে পাট কেটে জাগ দিয়ে আঁশ ছাড়িয়ে বাজারে বিক্রি শুরু করেছেন। প্রতি হেক্টরে ১৩.৮৪ বেল ফলন ধরা হয়েছে। সে হিসাবে জেলায় প্রায় দেড় লাখ বেল পাট উৎপাদন হয়েছে এবার। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভালো ফলন হলেও জাগ দেওয়ার সময় পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় পাট চাষিদের নানা ধকল পোহাতে হয়েছে। বেশিরভাগ চাষি দূরের নদী, খালে, পুকুরের পানিতে পাট জাগ দিয়ে আঁশ ছাড়িয়েছেন। যে কারণে চাষিদের খরচ বেড়ে যায়। চলতি বছর বাজারে প্রতিমণ পাট বিক্রি হচ্ছে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা। শেরপুরে হাট-বাজারে উঠতে শুরু করেছে সোনালি আঁশ পাট। দামও ভালো। পাটের ফলনও হয়েছে বাম্পার। এরপরও কৃষকের মুখে হাসি নেই। কারণ পাট কাটা, জাগ দেওয়া ও আঁশ ছড়ানোর কৃষি শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় লাভবান হচ্ছেন না তারা। শেরপুর উপজেলার শুবলী গ্রামের জামাল উদ্দিন জানান, তিনি দুই বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। পাট কাটা ও জাগ দেওয়ার জন্য শ্রমিকদের বাড়তি টাকা দিতে হয়েছে। প্রতি বিঘা জমির পাট কাটতে ছয়জন শ্রমিক প্রয়োজন। এ জন্য ৬০০ টাকা হারে মজুরি দিতে হয়েছে ৩ হাজার ৬০০ টাকা। জমি থেকে অনেক দূরে ডোবায় নিয়ে পাট জাগ দিতে হয়েছে। এ জন্য প্রতিবিঘায় আরও বাড়তি শ্রমিক ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার টাকা। এ ছাড়া পাটের আঁশ ছাড়াতেও একই পরিমাণ টাকা শ্রমিক বাবদ খরচ হয়েছে। শুধু পাট কাটা থেকে আঁশ ছাড়ানো পর্যন্ত প্রতিবিঘায় খরচ হয়েছে ১০ হাজার ৮০০ টাকা। এ ছাড়া জমি তৈরি, সার-বীজ, নিড়ানিসহ পাট শুকানো বাবদ খরচ হয়েছে আরও ৬ হাজার। সেই হিসেবে পাট চাষে প্রতিবিঘায় খচর প্রায় ১৭ হাজার টাকা।

জামাল উদ্দিনের দাবি, তার জমি থেকে ছয় মণ পাঠ হয়েছে। বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী সেই পাট বিক্রি করে পেয়েছেন ১৮ হাজার টাকা। খরচ বাদে মাত্র ১ হাজার টাকা অবশিষ্ট থাকে। জমির ভাড়া ধরলে কোনো লাভই নেই। লাভ শুধু পাটখড়ি। একই কথা জানান আরও কয়েকজন পাট চাষি। স্থানীয় হাট-বাজারে গিয়ে দেখা যায়, পাট বেচাকেনা বেশ জমে উঠেছে। পাটের আমদানিও বাড়তে শুরু করেছে। বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান ভলেন, চলতি বছর বগুড়ায় পাটের উৎপাদন ভালো হয়েছে। মাঝে কয়েকদিন বন্যার কারণে কিছু পাট নষ্ট হয়েছে। বন্যায় পাট নষ্ট না হলে উৎপাদন আরও বাড়ত।

 

সর্বশেষ খবর