শনিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা

হিলি প্রতিনিধি

প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা

আর কিছুদিন পরই সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। তাই দিনাজপুরের হিলিতে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। মন্দিরে মন্দিরে চলছে মাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরির কাজ। দেবী দুর্গাকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করছেন কারিগররা। পূর্বের চেয়ে কাজ বাড়লেও ব্যয় বাড়ার কারণে খরচ নিয়ে শঙ্কিত কারিগররা। তবে গতবারের চেয়ে এবার ভালোভাবে পূজা উদযাপনের আশা মন্দির কমিটির। হিলির বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থিত মন্দিরে মন্দিরে মাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে। কারিগররা সকাল থেকে শুরু করে রাত অবধি মাটির সঙ্গে পাট মিশিয়ে তা দিয়ে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সেই সঙ্গে কার্তিক গণেশ লক্ষ্মী সরস্বতিসহ অন্যান্য প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন। বেশিরভাগ মন্দিরেই মাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। কারিগর শ্রিদাম পাল বলেন, আমার বাসা দিনাজপুরে আমি প্রতিবছর হিলিতে প্রতিমা তৈরির কাজ করে থাকি। এবার করোনা পরিস্থিতি ভালো হওয়ায় সবাই ভালোভাবে পূজার প্রস্তুতি নিয়েছেন। যার কারণে এবার কাজের পরিধি বেড়েছে তারই ধারাবাহিকতায় এবার আমি হিলিতে ছয়টি প্রতিমা  তৈরির কাজ পেয়েছি। কমিটির লোকজনের চাহিদা মোতাবেক এবার প্রতিমার আকারে ও ডিজাইনে ভিন্নতা এসেছে। বর্তমানে আমরা মাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরির কাজ করছি। ইতোমধ্যেই প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে বর্তমানে হাতের আঙুল থেকে শুরু করে চালার কাজ করছি আর দু-এক দিন কাজ করলেই মাটির কাজ শেষ হবে। এর পর প্রতিমা শুকানোর জন্য রেখে দেব পরে পূজা শুরুর কয়েকদিন পূর্বে রঙের কাজ শেষ করে তা কমিটির লোকজনের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। অপর কারিগর সুজিৎ পাল বলেন, আমার দাদু পূর্বে এই প্রতিমা তৈরির কাজ করতেন পরবর্তীতে দাদুর কাজ দেখে আমার বাবা এই পেশায় আসেন। এর পর আমার বাবার কাজ দেখে আমি এই পেশায় এসেছি। বাবার সময়টা ভালোই ছিল কিন্তু আমার সময় দেখা যাচ্ছে বিগত দুই বছর করোনাকালীন সময় থেকে শুরু করে বর্তমান পরিস্থিতি পর্যন্ত আমাদের চলা খুব কষ্ট হয়ে গেছে। অপর কারিগর বিশ্বজিৎ পাল বলেন, গত দুই বছর করোনার কারণে পূজার পরিস্থিতি নিয়ে যেমন কারিগররা হতাশ ছিলেন। তেমনি কমিটির লোকজন পূজা করা নিয়ে হতাশার মধ্যে ছিল। যার কারণে আমরাও সেসময়ে কমরেটে কাজ করে দিয়েছিলাম।

এর ফলে দ্রব্যমূল্যের দাম অনুযায়ী সেসময় কাজ করে চলতে পেরেছি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে যে হারে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ছে এতে আমাদের অবস্থা ভালো  নেই। করোনার কারণে গত দুই বছর কাজ তেমন না হলেও এবার কাজ ভালো হচ্ছে কিন্তু দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে উপকরণের দাম। যে সাজ গত বছর ১৪ হাজার টাকায় কিনেছি সেই সাজ এবার ২০ হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে। যে রং ১০৫ টাকায় কিনেছি সেটি এখন ১৪০ টাকা হয়ে গেছে। ঠিক এমনিভাবে অন্যান্য যেসব উপকরণ রয়েছে এগুলোর দাম বাড়তি দামের কারণে এবার কী হবে বুঝতে পারছি না। প্রতিমার দাম যদি বাড়ত তাতে করে একটু সুবিধা হতো আমাদের। পালপাড়া সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার পাল বলেন, গত দুই বছর করোনার প্রভাবের কারণে আমরা সীমিত আকারে আমাদের দুর্গাপূজা উদযাপন করেছি। এবার যেহেতু করোনার তেমন প্রকোপ নেই তাই ভালোভাবে দুর্গাপূজা উদযাপনের প্রস্তুতি রয়েছে। আগামী ১ অক্টোবর ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু হবে ৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে। আমাদের এখানে বরাবরই ভালোভাবেই দুর্গাপূজা উদযাপন করে থাকি কোনো ধরনের সমস্যা হয় না। হাকিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু ছায়েম মিয়া বলেন, উপজেলায় সর্বমোট ২১টি মন্দিরে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। বেশিরভাগ মন্দিরে দেবী তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়ন ও বিটে আমাদের বিট অফিসার রয়েছে নিয়মিতভাবে তারা কমিটির নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা নির্বিঘ্নে যেন তাদের শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন করতে পারে এ জন্য সবধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। টহল পুলিশ, পোশাকধারী পুলিশ ও সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন থাকবে। নিয়মিত টহল বাড়ানো হয়েছে সামনের দিনে এটি আরও বাড়বে।

 

সর্বশেষ খবর