দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চা অঞ্চল হিসেবে খ্যাত উত্তরের জেলা পঞ্চগড়। এ জেলায় চা নিলাম কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। চট্টগ্রাম ও মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের পর এটি হবে তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্র। এ জন্য চা বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এলাকা পরিদর্শন করেছেন। সরকারের এমন ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে নিলাম কেন্দ্রের জন্য গড়ে উঠেছে ভবন। উদ্যোক্তারা ইতোমধ্যে চা ওয়ার হাউস, ব্রোকার হাউসসহ সংশ্লিষ্ট নানা অবকাঠামো নির্মাণ করে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ নিলাম কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হলে বদলে যাবে ক্ষুদ্র চা-চাষিদের ভাগ্য। কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ রাজস্ব জমা হবে সরকারের কোষাগারে। বন্ধ হবে চোরাচালানে চা বিক্রি। কয়েক বছর ধরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি চা উৎপাদন হচ্ছে পঞ্চগড়ে। এ অঞ্চলের ক্ষুদ্র কৃষকরা বাড়ির আনাচে-কানাচে গড়ে তুলছেন চা বাগান। জেলার ক্ষুদ্র চা-চাষিদের অভিযোগ, কারখানা মালিকরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে একচেটিয়া ব্যবসা করলেও কাঁচা চা পাতার নায্যমূল্য পাচ্ছেন না তারা। কারখানা মালিকরা হাজার হাজার কেজি চা পাতা চোরাচালানের মাধ্যমে বিক্রি করছেন। ফলে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। অন্যদিকে ক্ষুদ্র চা-চাষিরা লোকসান গুনতে গুনতে চা বাগান কেটে ফেলতে চাইছেন। এদিকে কারখানা মালিকরা বলছেন, শত শত কিলোমিটার দূরে চট্টগ্রাম ও শ্রীমঙ্গলের নিলাম কেন্দ্রে তৈরি চায়ের বিপণন করতে গিয়ে সঠিক মূল্য পাচ্ছেন না তারা। পরিবহন খরচ বেড়ে যায়। রাস্তায় জ্যাম এবং দূরত্বের কারণে সময় বেশি লাগে। ওয়্যার হাউসে বেশি দিন রাখতে হয় বলে চায়ের মানও খারাপ হয়ে যায়। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে চাষিদের ওপর। দ্বিমুখী এ সমস্যা সমাধানে এক বছর আগে সরকার পঞ্চগড়ে তৃতীয় চা নিলামকেন্দ্র স্থাপনের ঘোষণা দেয়। এরপরই আগ্রহী উদ্যোক্তারা ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনায় প্রস্তুতি নিচ্ছেন। জেলা আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শামীম আল মামুন বলেন, পঞ্চগড় বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চা অঞ্চল। এই অঞ্চলে ২২টি চা কারখানা গড়ে উঠেছে। আরও ৪০-৫০টি কারখানা চালুর সম্ভাবনা আছে। এ অঞ্চলের চা বিপণনের জন্য শ্রীমঙ্গল বা চট্টগ্রামে নিতে হয়। এতে পরিবহন ব্যয়সহ সময় লাগে অনেক বেশি। চায়ের মানও নষ্ট হয়। পঞ্চগড়ে তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্র স্থাপনের জন্য স্টক হোল্ডারদের নিয়ে দফায় দফায় সভা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পঞ্চগড়ে চা নিলাম কেন্দ্র স্থাপনের কার্যক্রমও হাতে নেওয়া হয়েছে। চা বোর্ডের চেয়ারম্যান পরিদর্শন করেছেন। এখন শুধু ঘোষণার অপেক্ষা।
