সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

দুর্বিষহ জীবন ৮ হাজার জেলে পরিবারের

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

দুর্বিষহ জীবন ৮ হাজার জেলে পরিবারের

গোবিন্দ দাস (৪৮)। তিস্তা নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি। এক মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। দুই ছেলে বিয়ে করে আছেন আলাদা সংসারে। ছেলেরাও তিস্তায় মাছ শিকার করে জীবিকা চালাচ্ছেন। সংসারে গোবিন্দ দাস আর তার স্ত্রী মিনতি বালা। লালমনিরহাটের সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নে তিস্তা মাঝিপাড়া গ্রামের গোবিন্দ ভাগ্যেরে কোনো পরির্বতন হয়নি। তার মতো অবস্থা এই গ্রামে আরও ৩৬ জেলে পরিবারের। লালমনিরহাটের তিস্তা, ধরলা, সানিয়াযান ও রত্নাই নদী তীরবর্তী ১২৫ জেলে পাড়ায় প্রায় ৮ হাজার পরিবারের বাস। তারা সবাই কমবেশি ঋণের ফাঁদে বন্দি।

তিস্তা নদী তীরবর্তী জেলে গোবিন্দ দাস বলেন, তার নিজের কোনো নৌকা নেই। অন্যের নৌকায় চড়ে তাকে মাছ ধরতে হয়। মাছ শিকার করে যা আয় করছেন তা দিয়ে জীবিকা চালাচ্ছেন কোনোরকমে। যা সঞ্চয় করছেন তা বছর শেষে জাল মেরামত এবং কিনতে শেষ হচ্ছে। অসুখে পড়লে তাকে অন্যের কাছে ধার করতে হয়। আমাদের গ্রামের কোনো জেলে পরিবারের ভাগ্যের পরির্বতন নেই। দুই যুগ আগেও যেমন দুর্ভাগা ছিলেন এখনো সেরকমই রয়েছেন। কালিগঞ্জের চলবলা ইউনিয়নের শিয়াল খোওয়া মাঝিপাড়ার মোহন দাস (৭০) বলেন, ৪-৫ বছর হলো তিনি মাছ ধরা থেকে বিরত রয়েছেন। তার তিন ছেলে এখন সতি নদীতে মাছ ধরছে। তিন ছেলের পরিবার ৬ শতাংশ জমিতে ঘর তুলে কোনোরকম বসবাস করছে। দুমুঠো খেয়ে আমাদের বাঁচতে হচ্ছে। বড় ধরনের সমস্যায় পড়লে ঋণ করতে হয়। একই এলাকার রজনীকান্দ দাস (৫২) বলেন, নদ-নদীতে আগের মতো মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। এখন যেটুকু মাছ পাওয়া যাচ্ছে তা বিক্রি করে কোনোভাবে সংসার চালানো যাচ্ছে। বছর শেষে জাল মেরামত ও কেনার জন্য স্থানীয় মহাজনের কাছে চড়াসুদে ঋণ নিতে হয়। প্রায় সারা বছর এ ঋণের ঘানি টানতে হয় তাদের।

সদর উপজেলার তিস্তাপাড়ে সারপুকুর দাসপাড়া গ্রামের অনিল চন্দ্র দাস (৬০) বলেন, যারা যুগ যুগ ধরে নদ-নদীতে মাছ ধরছেন তাদের পরিবারের কোনো উন্নতি হচ্ছে না। অনেকে মাছ ধরা বাদ দিয়ে অন্য কাজ করেছেন। প্রতি বছর নৌকা ও জাল মেরামত অথবা কিনতে অনেক টাকা ব্যয় হয়। অনেক জেলে বাধ্য হয়ে চড়াসুদে ঋণ নিয়ে থাকেন। ঋণের বোঝা সারা বছর বইতে হয়। জেলেদের জীবন দিন দিন আরও বেশি দুর্বিষহ হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারুকুল ইসলাম বলেন, জেলে পরিবারগুলোর সন্তানরা শিক্ষিত না হওয়া পর্যন্ত তাদের কোনো উন্নতি হবে না। তিস্তা ও ধরলাপাড়ের অনেক জেলে পরিবারকে সরকারিভাবে আর্থিক সহায়তা করা হয়। তারা অনেক সময় বিনা কারণেই ঋণ নিয়ে বিপাকে পড়েন। তিনি বলেন, জেলে পরিবারের সন্তানরা যাতে শিক্ষিত হয় সেজন্য সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাচ্ছি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর