শেষ বয়সে সরকারি স্বীকৃতি নিয়ে মরতে চান বীরাঙ্গনা জহুরা বেগম (৭৫)। স্বীকৃতির জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। অন্যের দেওয়া খাবার খেয়ে দিন চলে তার। বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় জন্ম নেওয়া জহুরার এখন একটাই চাওয়া-বীরাঙ্গনার সরকারি স্বীকৃতি। জহুরা জানান, তিনি একজন বীরাঙ্গনা। ১৯৪৭ সালের ২৫ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন সারিয়াকান্দি উপজেলার বাঁশহাটা গ্রামে। ১৬ বছর বয়সে একই গ্রামের হবিবর রহমান মণ্ডলের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। ১৯৭১ সালের জ্যৈষ্ঠ মাসের কোনো এক দুপুরে তিনি বাড়ির কূপের পাড়ে পানি তুলে গোসল করছিলেন। এমন সময় পাকিস্তানিরা তাকে ভেজা কাপড়ে জোর করে পাশের একটি ঘরে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে তিনি ঘরের চৌকির নিচে লুকাতে গিয়ে দেখেন আরও ছয়জন বয়স্ক নারী লুকিয়ে আছেন। পাকিস্তানিরা ওই ছয়জনকে ঘর থেকে বের করে দেন। এরপর পাকবাহিনীর সাতজন নরপশু তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। সেনাবাহিনী চলে গেলে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় পরিবারের লোকজন উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। দীর্ঘ তিন মাসের চিকিৎসায় তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। এরপর শ্বশুর-শাশুড়ি বাড়ি থেকে তাকে বের করে দিলেও স্বামী গ্রহণ করেন।
এরপর তিনি দুটি মেয়ে সন্তান জন্ম দেন। মেয়েদের বিয়ে হয়েছে। স্বামী হবিবরও মারা গেছেন। বাঙ্গালি নদীতে তার ভিটেমাটি বিলীন হয়েছে। কয়েক বছর আগে তিনি জানতে পারেন সরকার ’৭১ সালে নির্যাতিত বীরাঙ্গনাদের সম্মানিত করছে। ২০১৫ সাল থেকে তিনি বীরাঙ্গনার স্বীকৃতির জন্য শুরু করেন দৌড়ঝাঁপ। সারিয়াকান্দি উপজেলার ভেলাবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম শিপন বলেন, ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি তিনি বীরাঙ্গনা। তার স্বীকৃতির জন্য আমি প্রত্যয়ন দিয়েছি। সারিয়াকান্দির সাবেক উপজেলা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আজগর বলেন, জহুরা বেগম বেশ কিছুদিন আমাদের কাছে এসেছিলেন। এগুলোর জন্য মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করতে হয়। জহুরা প্রকৃত বীরাঙ্গনা। তার কাগজপত্র বহুবার মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি কিন্তু কোনো ফল যায়নি। সারিয়াকান্দির ইউএনও রেজাউল করিম বলেন, জহুরা বেগম আমার কাছে এসেছিলেন। তার বীরাঙ্গনা স্বীকৃতির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হবে।