মঙ্গলবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

অর্ধকোটি টাকা নিয়ে স্কুলের পরিচালক লাপাত্তা

কালিয়াকৈর প্রতিনিধি

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে শিক্ষকদের বেতন, ভবন ও গাড়ি ভাড়াসহ বিভিন্ন দোকানে প্রায় অর্ধকোটি টাকা নিয়ে রফিকরাজু ক্যাডেট একাডেমির এক পরিচালক লাপাত্তা হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিক্ষকদের বেতনসহ প্রায় ১০/১২ জন ব্যবসায়ীর বকেয়া টাকা না দিয়ে গোপনে পাড়ি জমিয়েছেন দুবাই শহরে। এতে হতাশায় ভুগছেন ক্ষতিগ্রস্ত ভুক্তভোগী শিক্ষক ও ব্যবসায়ীরা। এলাকাবাসী, ভুক্তভোগী শিক্ষক-ব্যবসায়ী ও স্কুল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, গত ৬/৭ বছর আগে কালিয়াকৈর উপজেলার ফুলবাড়িয়া এলাকার আবদুল কাদেরের ছেলে তপন মাহমুদ কালিয়াকৈর বাইপাস সাহেববাজার এলাকায় সিরাজুল ইসলামের বহুতল ভবন ভাড়া নেন। পরে তিনি সেখানে টাঙ্গাইল থেকে পরিচালিত রফিকরাজু ক্যাডেট একাডেমির একটি শাখা খোলেন। আবাসিক ও অনাবাসিকভাবে মানহীন শিক্ষাব্যবস্থা পরিচালনা করে আসছিলেন তপন মাহমুদ। কিন্তু তিনি পরিকল্পনা মাফিক দীর্ঘদিন ধরে কৌশলে ভবনের ভাড়া প্রায় ২০ লাখ, শিক্ষকের বেতন প্রায় ৩ লাখ, মীম এন্টারপ্রাইজ এর প্রেস ও গাড়ি ভাড়া প্রায় ১২ লাখ, মাখন লাল স্টোরে প্রায় ৫৬ হাজার টাকা, আমজাদের মুরগি দোকানে ৫০ হাজার টাকাসহ বিভিন্ন দোকান ও টেইলার্সে প্রায় অর্ধকোটি টাকা বকেয়া রাখেন। পরে ওই টাকা না দিয়ে গত মাসে গোপনে দুবাই শহরে পারি জমিয়েছেন পরিচালক তপন। তার লাপাত্তা হওয়ার খবর পেয়ে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা ওই স্কুলে গেলেও তার ভাই নতুন পরিচালক মোফাজ্জল হোসেন মনির ও অপর পরিচালক রাকিবুল ইসলাম পাওনাদারদের পাত্তা দিচ্ছেন না।

এতে চরম হতাশায় ভুগছেন অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ভুক্তভোগী শিক্ষক ও ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়াও শিক্ষার্থীদের অভিভাবক, আশপাশের বিভিন্ন স্কুলের পরিচালক ও শিক্ষকদের অভিযোগ, রফিকরাজু ক্যাডেট একাডেমির এসব শাখার কোনো ইন নম্বর নেই। তারপরও বিভিন্ন স্থানে যত্রতত্র শাখা খুলে শিক্ষাব্যবস্থার মান ক্ষুণ্ন করছে। কালিয়াকৈর শাখার সাবেক পরিচালক অর্ধকোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হলেও সম্প্রতি চন্দ্রা ত্রিমোড়ে সরকারি স্কুলের পাশে আবার আরেকটি শাখা খোলার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। এতে কালিয়াকৈরে শিক্ষাব্যবস্থার সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। ভুক্তভোগী মাখন লাল স্টোরের প্রোপ্রাইটার জহর লাল জানান, আমার দোকানের স্কুলের নামে ৫৬ হাজার টাকা বাকি রয়েছে। কিন্তু স্কুলের পরিচালক তপনকে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে তার বাবাকে বিষয়টি জানানো হলেও তেমন কোনো আশ্বাস দেননি। গোলাম মোস্তফা লিটন জানান, স্কুলে গাড়ি ভাড়া ও প্রেসের বিল বাবদ ১২ লাখ টাকা পাই। ওই স্কুলের পরিচালককে না পেয়ে গ্রামের বাড়ি গেলেও তার স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যরা দিব, দিচ্ছি বলে বিভিন্ন ভাবে ঘুরাচ্ছেন। এসব বিষয়ে ওই স্কুলের সাবেক পরিচালক তপন মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা না গেলেও তার ভাই ও ওই স্কুলের নতুন পরিচালক মোফাজ্জল হোসেন ধীরে ধীরে সবার বকেয়া টাকা পরিশোধ করার কথা জানালেও অপর পরিচালক রাকিবুল ইসলাম জানান, ওই বকেয়া টাকা সাবেক পরিচালকের, এর দায় আমরা নিব না। তবে স্কুল পরিচালনার ক্ষেত্রে বাড়িওয়ালার বকেয়া টাকা ধীরে ধীরে পরিশোধের চেষ্টা করব। এ ব্যাপারে রফিকরাজু ক্যাডেট একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রফিক মুঠোফোনে জানান, চুক্তি ভিত্তিক শাখা দিয়েছে। এর বাইরে দায়-দায়িত্ব ওই প্রতিষ্ঠানের পরিচালকের। এ ছাড়া বিস্তারিত জানতে হলে আমার টাঙ্গাইল অফিসে আসেন। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাকির হোসেন মোল্লা জানান, রফিকরাজু যে কিন্ডারগার্টেন স্কুল আছে, সেগুলো আমাদের অধীনে নয়। এসব স্কুলের বকেয়ার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া এখতিয়ার আমাদের নেই। এ ছাড়া এত অনিয়মের পরও নতুন করে চন্দ্রা এলাকায় কীভাবে আরেকটি শাখা দেওয়া হচ্ছে, তার আমার জানা নেই। তবে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ বলেন, এ ব্যপারে এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নিব।

 

সর্বশেষ খবর