বুধবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

প্রকৌশলী-ঠিকাদার দ্বন্দ্বে সেতুর নির্মাণকাজে কচ্ছপগতি

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

কুষ্টিয়ায় প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের গড়িমসিতে কচ্ছপ গতিতে চলছে একটি সেতুর নির্মাণকাজ। কাজের নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হলেও সেতু নির্মাণ হয়নি। এতে মানুষের চলাচলে বেড়েছে ভোগান্তি ও দুর্ভোগ। এমন অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা। এটি কুষ্টিয়ার কুমারখালীর পান্টি ইউনিয়নের ডাকুয়া নদীর ওপর আনন্দনগর-খাগড়াবাড়িয়া নির্মাণাধীন ৮১ মিটার পিসি গার্ডার সেতুর নির্মাণকাজের চিত্র। এদিকে সেতুর কাজের অগ্রগতি নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করছেন প্রকৌশলী ও ঠিকাদার। ঠিকাদার বলছেন, উপজেলা প্রকৌশলী অতিরিক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে বারবার সেতুর কাজ পরীক্ষা, নিরীক্ষা করতে আসেন। প্রতিবার তাকে খুশি (টাকা) করতে হয়। খুশি করতে ব্যর্থ হওয়ায় নির্মাণ কাজ আগাচ্ছে না। আগামী বছরের মার্চ-এপ্রিলে কাজ শেষ হতে পারে। তবে ঠিকাদারের অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা প্রকৌশলী বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, ঠিকাদারের টেকনিক্যাল জনবল নেই। লেবার দিয়েই কাজ চালায়। আমাদের বারবার সাইডে যেতে হয়। এতে কিছুটা কাজের বিলম্ব হচ্ছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরে কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এলাকাবাসী জানায়, পান্টি ইউনিয়ন ও পার্শ্ববর্তী ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপার কাচেরকোল ইউনিয়নের ১০ থেকে ১২টি গ্রামের অন্তত ৬০ হাজার মানুষ চলাচল করেন খাগড়াবাড়িয়া সেতু এলাকা দিয়ে। সেখানে আগে বাঁশের সেতু ছিল। বর্তমানে পাকা সেতুর নির্মাণ কাজ চলছে। চলাচল সচল রাখার জন্য নির্মাণাধীন সেতুর পাশে আরেকটি জরাজীর্ণ বাঁশের সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু বাঁশের সেতু দিয়ে স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ঘটছে দুর্ঘটনা। চলাচলে মানুষের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তারা আরও জানায়, প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের গড়িমসিতে কচ্ছপ গতিতে চলছে সেতুর নির্মাণ কাজ। কাজের নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হলেও সেতু নির্মাণ হয়নি। দ্রুত সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হলে মানুষের খুব উপকার হতো।

উপজেলা প্রকৌশল কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৫ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে খাগড়াবাড়িয়া এলাকায় সেতু নির্মাণ কাজ চলছে। ৫৫৫ দিন মেয়াদি সেতুর নির্মাণ কাজ করছেন ঢাকা উত্তরার এমএলটি অ্যান্ড এমই এইচ জেভি। ঠিকাদারের নাম মো. ইকরামুল হক। সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা চলতি বছরের ৩০ জুন। নির্ধারিত সময়ে সেতুর কাজ শেষ হয়েছিল ৫০ ভাগ। এর পর ঠিকাদারের আবেদনের ভিত্তিতে কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল চলতি বছরের ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। সে মেয়াদও শেষ হয়েছে। বর্তমানে সেতুর প্রায় ৭০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে ৯টি গার্ডারের মধ্যে ৬ নম্বর গার্ডারের কাজ চলছে। আগামী ডিসেম্বরে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মঙ্গলবার সকালে সেতু এলাকায় সরেজমিন দেখা যায়, কয়েকজন শ্রমিক গার্ডার ঢালাইয়ে সাটারিংয়ের কাজ করছেন। মানুষ বাঁশের তৈরি জরাজীর্ণ সেতু দিয়ে চলাচল করছে। সেখানে প্রকৌশল অফিসের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দেখা মেলেনি। এ বিষয়ে পান্টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য বাদল বিশ্বাস বলেন, ‘কাজের মেয়াদ হয়েছে, কিন্তু সেতু নির্মাণ হয়নি। ঠিকারদার-প্রকৌশলীর গড়িমসিতে কাজ আগাচ্ছে না। মানুষের চরম ভোগান্তি হচ্ছে। আমরা দ্রুত সেতুর কাজ শেষ চাই।’ কাচেরকোল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. সাহেব আলী বলেন,  দুই উপজেলার ১০ থেকে ১২ গ্রামের মানুষ চলাচল করে। পান্টি নাম করা বাজার হওয়ায় শৈলকুপার অধিকাংশ কৃষক মালামাল নিয়ে আসে। কিন্তু সেতুর কাজ শেষ না হওয়ায় চরম ভোগান্তি হচ্ছে। এ বিষয়ে ঠিকাদার মো. ইকরামুল হক বলেন, উপজেলা প্রকৌশলী অতিরিক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে বারবার সেতুর কাজ পরীক্ষা, নিরীক্ষা করতে আসে। প্রতিবার তাকে খুশি (টাকা) করতে হয়। খুশি করতে ব্যর্থ হওয়ায় নির্মাণ কাজ আগাচ্ছে না। আগামী বছরের মার্চ-এপ্রিলে কাজ শেষ হতে পারে। তবে ঠিকাদারের অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা প্রকৌশলী মো. আবদুর রহিম বলেন, ঠিকাদারের টেকনিক্যাল জনবল নেই। লেবার দিয়েই কাজ চালায়। আমাদের বারবার সাইডে যেতে হয়। এতে কিছুটা কাজের বিলম্ব হচ্ছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরে কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৭০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

সর্বশেষ খবর