বুধবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ঘুমন্ত শিশুকে পুকুরে ফেলে হত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

প্রথমটি মেয়ে সন্তান। এরপর প্রত্যাশা ছিল ছেলের। কিন্তু আবারও মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া লেগেই থাকত। আর এই পারিবারিক কলহের জেরে জাকির হোসেন (৪৫) তার ১৪ মাস বয়সী ফুটফুটে ঘুমন্ত শিশুটিকে পুকুরে ফেলে হত্যা করে। মধ্যযুগীয় এই অমানবিক ঘটনাটি ঘটেছে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার কুসুম্বী ইউনিয়নের উঁচুলবাড়িয়া গ্রামে। সোমবার দিনগত গভীর রাতের কোনো এক সময় ঘুমন্ত শিশুটিকে তুলে নিয়ে পুকুরে ছুড়ে ফেলে জাকির। এরপর গতকাল ভোররাতে তার দেওয়া স্বীকারোক্তি

অনুযায়ী পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে। পরে জাকিরকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। তিনি উঁচুলবাড়িয়া গ্রামের ইদ্রিস আলীর ছেলে। নিহত শিশুটির নাম মোছা. হুমায়রা খাতুন। পারিবারিক সূত্র জানায়, বিগত সাত বছর আগে জাকিরের সঙ্গে পাশের নন্দীগ্রাম উপজেলার বুড়ইল ইউনিয়নের নামা সিংড়াপাড়া গ্রামের রমজান আলীর মেয়ে রাবেয়া খাতুনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর ভালোই চলছিল তাদের সংসার। এক বছরের মাথায় একটি মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়।

তার নাম মোছা. জান্নাতি খাতুন (৬)। এরপর বাবা জাকিরের প্রত্যাশা ছিল ছেলে সন্তানের। কিন্তু দ্বিতীয় সন্তানও মেয়ে হয়। এতে ক্ষুব্ধ হন তিনি। এরই ধারাবাহিকতায় বিষয়টি নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই মনোমালিন্য হতো। যার জেরে সোমবার সন্ধ্যায় স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে সবাই ঘুমিয়ে পড়েন। পরবর্তীতে রাতের কোনো এক সময় ঘুমন্ত শিশুটিকে পুুকুরে ফেলে দেন পাষ- বাবা। নিহত শিশুটির মা রাবেয়া খাতুন জানান- মধ্যরাতে ঘুম থেকে জেগে দেখি আমার মেয়ে হুমায়রা খাটের ওপর নেই। পরে পরিবারের সবাইকে ঘুম থেকে ডেকে বিষয়টি জানাই। এরপর আমার বোন-দুলাভাইকে খবর দেই। প্রতিবেশীদেরও জানানো হয়। পরে সবাই খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। সন্তানকে না পেয়ে একাধিকবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। একপর্যায়ে আমার স্বামীকে চাপ দেন তারা। পরে মেয়েটিকে পুকুরে ফেলে দেওয়ার কথা স্বীকার করেন পাষ- স্বামী। জাকিরের ভায়রা সাইফুল ইসলাম বলেন, জাকিরের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ভোররাতে ওই পুকুরে নেমে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। প্রায় দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালানো হয়। পরে শিশুটিকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। শেরপুর থানার ওসি আতাউর রহমান খন্দকার জানান, স্থানীয়দের মাধ্যমে ঘটনাটি জেনে উপ-পরিদর্শক হাসানকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেই। পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) হাসান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, শিশুটির লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর