বুধবার, ৫ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

হাওরে মিলছে না দেশি মাছ

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি

হাওরে মিলছে না দেশি মাছ

অপরূপ সৌন্দর্য আর হাওর-বাঁওড় বেষ্টিত একটি জেলার নাম হবিগঞ্জ জেলা। নানা কারণে এ জেলাটি দেশের অন্যান্য জেলা থেকে একটু ভিন্ন। এখানে যেমন রয়েছে সবুজ ঘেরা পাহাড় তেমনি রয়েছে প্রাকৃতিক সম্পদ। ২৬৩৬.৫৮ বর্গকিলোমিটার আয়াতনের এ জেলায় ১৮ লক্ষাধিকের ওপরে মানুষের বসবাস। উত্তরে সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলা, পূর্বে মৌলভীবাজার জেলা, দক্ষিণে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য ও পশ্চিমে কিশোরগঞ্জ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সঙ্গে রয়েছে হবিগঞ্জের সীমানা। আর সীমান্ত এলাকাজুড়ে রয়েছে বিশাল বিশাল হাওর। হাওর অঞ্চল হওয়ায় বর্ষাকালে এখানকার অধিকাংশ মানুষের প্রধান কাজ হচ্ছে মাছ শিকার বা চাষ করা। একটা সময় এখানকার মিঠা পানির মাছ দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করা হতো ইউরোপ, আমেরিকাসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে কিন্তু এখন আর সেই সময় নেই। হাওরে আগের মতো দেখা মিলছে না দেশীয় মাছের। এ ছাড়াও বিলুপ্তির পথে রয়েছে নানা প্রজাতির মাছ। জানা যায়, জেলার আজমীরিগঞ্জ, লাখাই, নবীগঞ্জ ও বানিয়াচং উপজেলায় বেশির ভাগ মানুষ মাছ শিকারের সঙ্গে বা মাছ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। বর্ষা মৌসুমে এসব এলাকার মানুষ বেকার হয়ে পড়ায় তারা বেছে নেন মাছ শিকার। এই জেলায় রয়েছে করাঙ্গী, বরাক, ভেড়ামোহনা, শুঁটকি, রত্না, বিজনা, খোয়াই, কুশিয়ারা, ঝিংড়ি, সুতাংসহ বিভিন্ন নদ-নদী। আরও আছে অসংখ্য খাল-বিল, ডোবাসহ নানা প্রাকৃতিক জলাশয়। আর এ কারণেই একটা সময় এখানে বেশি পরিমাণে মাছ পাওয়া যেত। জলাশয়গুলোতে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো শৈল, গজার, শিং, পাবদা, রুই, কাতল, চিতল, টেংরা, চিংড়ি, বোয়াল, বাউস, আইড়, টাকি, বাইন, পুঁটিসহ বিভিন্ন প্রজাতি মাছের কদরও ছিল বেশ। কিন্তু কালের পরিক্রমায় সেটি হারাতে বসেছে। বিলুপ্তর পথে রয়েছে নানা প্রজাতির মাছ। এর মধ্যে রানি, কাকিয়া, পাবদা, বেদা, ঘাঘট, চাপিলা, ট্যাংড়া, চিতল, কালবাউশ, খালিশা, গুতুমসহ বেশ কিছু প্রজাতির মাছের এখন দেখাই মিলে না। মৎস্যচাষের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হাওর এলাকায় অবৈধ কারেন্ট জালের অবাধ ব্যবহার, পোনা মাছ নিধন, পুকুর জলাশয় সেচের পর মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার এবং হাওরের মাঝ দিয়ে সড়ক নির্মাণের ফলে দিন দিন কমছে দেশীয় প্রজাতির মাছ। সচেতন মহল মনে করছেন, এভাবে চলতে থাকলে আরও কয়েক বছর পরে হয়তো দেশীয় মাছের দেখাই মিলবে না। তাই দেশীয় মাছ রক্ষা ও বিদেশে রপ্তানি বাড়াতে হলে এখনই পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়াও জেলায় রেজিস্ট্রিভুক্ত ৪১ হাজার ২৯৪ জন জেলেকে প্রণোদনার পাশাপাশি মাছ শিকারের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। হবিগঞ্জ জেলা মৎস্য অধিদফতরের দেওয়া তথ্যমতে, জেলায় মাছের চাহিদা ৪৫ হাজার ৯২ দশমিক ১২ মেট্রিক টন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর