বৃহস্পতিবার, ৬ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

দখল-দূষণের কবলে নওগাঁর ছয় নদী

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

দখল-দূষণের কবলে নওগাঁর ছয় নদী

উত্তরের জেলা নওগাঁয় দখল-দূষণের কবলে ছয় নদী। নদীগুলো হলো- আত্রাই,  ছোট যমুনা, তুলসীগঙ্গা, শীব, পুনর্ভবা ও নাগর নদ। এ জেলার অন্যতম নদী হলো- ছোট যমুনা ও তুলসীগঙ্গা। এক সময় বছরের সব সময় এসব নদী পানিতে ভরপুর থাকত। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যোগাযোগ ও মালামাল পরিবহন করার মাধ্যম বলতে এই নদীগুলোয় ছিল একমাত্র পথ। শত শত পালতোলা নৌকা জেলার এক স্থান থেকে অন্য স্থানে মালামাল বহন করে নিয়ে  যেত। জেলেরা সারা বছর এসব নদী থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। জেলার প্রধান প্রাণকেন্দ্র ছোট যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত নওগাঁ শহর। এই নদীর তীরেই অবস্থিত কোর্ট, জেলা প্রশাসন, পুলিশ সুপারসহ সব সরকারি দফতর। শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ছোট যমুনা ও তুলসীগঙ্গা এক সময়ের খরস্রোতা নদী বর্তমানে দখল আর দূষণের শিকার হয়ে মরতে বসেছে। নদীর দুই পাশে দখল করে নির্মাণ করা হচ্ছে বড় বড় ভবন ও শিল্প-কারখানা। দীর্ঘদিন ধরে নদীটি খনন না করার কারণে পলি জমে কমে গেছে নদীর নাব্য। নদীটি এখন শহরবাসীর ময়লা-আবর্জনা ফেলার ডাস্টবিনে পরিণত হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের উল্লেখযোগ্য গুরুত্ব বহন করত এই ছোট যমুনা নদী। বড় বড় নৌকা ভিড়ত নদীতে। বর্ষা মৌসুমে পানি থাকলেও খরা মৌসুমে প্রতি বছর নদীটি মোটামুটি শুকিয়ে যায়। বর্তমানে নদীর উভয় পাশে ফ্লাডওয়াল নির্মিত হওয়ায় শহরের নদীর উভয় পাশের বাসিন্দারা তাদের পরিত্যক্ত সব ময়লা আবর্জনা নদীতে ফেলছে। পুরো নদীটি এখন যেন একটি বিশাল ডাস্টবিন। যার যখন মনে হয় তখন তাদের ময়লা-আবর্জনা নদীতে ফেলছে। এদিকে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা দিনাজপুরের শালখুড়িয়া ইউনিয়নের বিলাঞ্চল এলাকা থেকে তুলসীগঙ্গা নদীটির উৎপত্তি। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া নদী পরিচিতি দৈর্ঘ্য ১০০ কিলোমিটার বা ৬২ মাইল। নওগাঁ সদর উপজেলার চন্ডীপুর এলাকায় ছোট যমুনা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। এটির প্রায় ২০ কিলোমিটার জুড়ে নওগাঁ সদর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। ১৯৮৭ সালে সদর উপজেলার ছিটকিতলা এলাকায় স্লুইস গেট নির্মাণ করা হয় এবং ওই এলাকায় তুলসীগঙ্গা থেকে একটি খাল খনন করে তুলসীগঙ্গার প্রবাহ ছোট যমুনার সঙ্গে মিলিত করা হয়। মূলত সেই সময় থেকেই তুলসীগঙ্গা তার নাব্য হারিয়ে ফেলে। নদীর কোথাও কোথাও পানি শুকিয়ে শুষ্ক মাঠে পরিণত হয়। ওই অবস্থান দিয়ে হেঁটে নদী পার হওয়া যায়। নদীর পাড়জুড়ে চলছে দখলদারি। নদীর তীরবর্তী এলাকায় স্থাপিত চালকলের ছাই ফেলা, পৌরসভার পয়োবর্জ্য ও গৃহস্থালিসহ সব ধরনের বর্জ্যে বদ্ধ জলাশয়ে পরিণত হয়েছে তুলসীগঙ্গা। নওগাঁ পৌরসভার রজাকপুর এলাকায় তুলসীগঙ্গা সেতু দুই পাশে নদীজুড়ে যেন ময়লার ভাগাড়। সেতুর নিচে প্রচুর বর্জ্য ফেলা রয়েছে। নদীর বুকজুড়ে শুধুই কচুরিপানা। অনেক স্থানে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় হেঁটে নদী পারাপার হচ্ছে মানুষ। সেতুর উত্তর দিকে তুলসীগঙ্গা নদীর উজানে পশ্চিম পাশে নদীর পাড়ে স্থাপিত তিনটি চালকলের উৎপাদিত ছাই ফেলা হচ্ছে নদীতে। ফলে ছাইয়ের স্তূপ জমে রয়েছে নদীতে। পূর্বে পাশে নদীর ভাটির অংশে পাড় ঘেঁষে স্থাপন করা হয়েছে দুটি চালকল, দুটি ইটভাটা, চাল-গমসহ বিভিন্ন খাদ্যশস্য ছাঁটাইয়ের একটি কারখানা রয়েছে।

সর্বশেষ খবর