বুধবার, ১২ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

নাটোরে অজানা ভাইরাস বাড়ছে চর্মরোগ

নাটোর প্রতিনিধি

নাটোরে অজানা ভাইরাস বাড়ছে চর্মরোগ

নাটোরের গুরুদাসপুরে অজানা ভাইরাসজনিত রোগ হলো পানিবাহিত চর্মরোগ। এ রোগেই চাপিলা ইউনিয়নের পাবনাপাড়া গ্রামে আক্রান্ত হন ৬০ জন। এ খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে টনক নড়ে জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের। গত ১০ অক্টোবর ৭ সদস্যের একটি টিম চাপিলা ইউনিয়নের বাকিদেবপুর কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছে। গুরুদাসপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, চাপিলা ইউনিয়নের পাবনাপাড়ায় অজানা ভাইরাস রোগ নির্ণয় ও সেবা প্রদানের লক্ষ্যে চিকিৎসক মাহামুদুল হাসানের নেতৃত্বে আবদুর রহিম, মাধব কুমার, আবদুল আওয়াল বাকিদেবপুর কমিউনিটি ক্লিনিকে সোমবার ও মঙ্গলবার (গতকাল) চিকিৎসা সেবা প্রদান করেছেন এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ দিয়েছেন রোগীদের। জানা যায়, প্রায় দেড় বছর আগে পাবনাপাড়া মহল্লার সুলতানের স্ত্রী লিমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ঘামাচির মতো বের হয়। পরে ব্যাপক চুলকানোর কারণে লাল হয়ে যায়। তার তিন দিন পর তার মেয়ের শরীরেও ওই লক্ষণ দেখা দেয়। প্রথমে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসাসেবা নেন। কিন্তু চুলকানি আরও বেশি হতে থাকে। একপর্যায়ে নাটোর শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ একজন চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করেন। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হয়নি। লিমা ও তার মেয়ের পর প্রতিবেশীদের শরীরেও দেখা দেয় ওই রোগের লক্ষণ। ধীরে ধীরে ভাইরাসজনিত এ রোগটি ছড়িয়ে পড়ে গ্রামব্যাপী। বর্তমানে ওই মহল্লায় নারী-পুরুষ-শিশুসহ প্রায় ৬০ জন এ চর্মরোগে আক্রান্ত। আক্রান্ত রোগীদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ঘামাচির মতো লাল ও গুটি গুটি হয়ে পড়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রত্যেকেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করেছেন কিন্তু কেউ প্রতিকার পাননি। এমনকি রোগের সঠিক নির্ণয়ও করতে সক্ষম হয়নি কেউ। সরেজমিন চাপিলার বাকিদেবপুর কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায়, শত শত মানুষ চিকিৎসা নিতে কমিউনিটি ক্লিনিকে ভিড় করছে। চিকিৎসকরা লাইন করে একজন করে রোগী দেখছেন আর চিকিৎসা দিচ্ছেন। চিকিৎসা নিতে আসা আদরি বেগম বলেন, ‘আমি তিন মাস ধরে চুলকানি রোগে ভুগছি, অনেক চিকিৎসক-কবিরাজ দেখাইছি ভালো হয় নাই। চুলকানির জায়গায় ঘা হয়ে গেছে। আজ ডাক্তার সব দেখে বলেছে আপনার রোগ ভালো হয়ে যাবে। নিয়মিত ওষুধ খাবেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন থাকবেন। আমাদের এলাকায় ডাক্তার এসে সেবা দিবে এটা ভাবতেও পারি না।’ আরেকজন মনিরা মণি বলেন, ‘আমি ছয় মাস ধরে এই চুলকানি রোগের সঙ্গে বসবাস করছি। যখন যে কথা বলেছে সেই চিকিৎসা নিয়েছি কিন্তু কিছুতেই রোগ ভালো হচ্ছে না। যখন চুলকানি শুরু হয় মনে হয় চুলকাতে চুলকাতে মরে যাব। আজ যখন সরকারি হাসপাতাল থেকে ডাক্তার আসবে শুনেই চিকিৎসার জন্য এসেছি। ডাক্তার দেখেছে, বলেছে, ভালো হয়ে যাবে। গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও টিম লিডার মাহামুদুল হাসান বলেন, এটা একটা ছোঁয়াচে রোগ, একজনের মাধ্যমে আরেকজনের শরীরে ছড়ায়। সঠিকভাবে চিকিৎসা না নেওয়ার কারণে রোগটি নিরাময় হয়নি। এ এলাকার মানুষ অসচেতন, তারা পুকুরে গোসল করে তা থেকে জীবাণু মানবদেহে ছড়িয়েছে। তাই রোগীদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন থাকতে বলা হয়েছে। যে অসুস্থ তার কাছ থেকে অন্যদের দূরে থাকতে বলা হয়েছে। আমরা হাসপাতাল থেকে যে ওষুধ পেয়েছি তা রোগীদের দেওয়া হয়েছে। বাকি ওষুধ বাইরে থেকে কিনে খেতে বলা হয়েছে। এছাড়া গতকাল ৫০ থেকে ৬০ জন রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

 

সর্বশেষ খবর