শুক্রবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

দখলে নারদ নদ এখন নালা

নাটোর প্রতিনিধি

দখলে নারদ নদ এখন নালা

নাটোরের এক সময়ের খরস্রোতা নারদ নদে এখন নেই প্রবাহ। নদের বুক চিরে চলাচল করে না ইঞ্জিনচালিত বড় বড় নৌকা। অবৈধ দখল, কলকারখানার বর্জ্যে নারদ পরিণত হয়েছে নালায়। গত তিন বছরে তিনবার নারদ নদ থেকে দখলদারদের উচ্ছেদ করা হলেও আবারও দখল হয়ে গেছে। স্থানীয়রা জানান, নাটোর শহরের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নারদ নদ দখলমুক্ত করতে একাধিক বার উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযানের কিছুদিন পর আবার দখল হয়ে যায় নদের দুইপাশ। চলতি বছর কোনো অভিযান না হওয়ায় বর্তমানে নদ দখলের উৎসব চলছে। ১৮২১ সালে পদ্মা নদীতে বন্যায় ব্যাপক জলস্ফীতি হলে উৎসমুখে বালু ও পলি জমে নারদ স্রোতহীন হয়ে পড়ে। সেবারের বন্যায় দীর্ঘদিন নাটোর জলাবদ্ধ ছিল। ওই সময় থেকে নারদ নদের রাজশাহী অঞ্চলের পানিপ্রবাহ কমে যেতে থাকে। তবে নাটোর অঞ্চলে নারদ নদে পদ্মার পানি রাজশাহীর চারঘাট হয়ে বড়াল ও মুসাখান দিয়ে ঢুকছিল। রাজশাহীর চারঘাটে পদ্মা নদী থেকে জন্ম বড়াল নদের। বড়াল থেকে জন্ম হয় মুসাখান নদ। নাটোর সদর উপজেলার পাইকপাড়ায় মুসাখান নদ থেকে নারদ আবার পদ্মার সঙ্গে যুক্ত হয়। ভাটিতে গুরুদাসপুরের নন্দকুজা নদীতে গিয়ে মিশেছে এ নদ। জনশ্রুতি আছে, নারদ নদ ঘিরে প্রায় ৩০০ বছর আগে নাটোর শহরের গোড়াপত্তন হয়। নাটোরের রাজা রামজীবন ও রঘুনাথ ১৮ শতকের প্রথম দিকে এখানে তাদের রাজধানী স্থাপন করেন। তখন বাংলার রাজধানী মুর্শিদাবাদের সঙ্গে গড়ে ওঠে নাটোরের যোগাযোগ। সে সময় ব্যবসা-বাণিজ্য ও যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ছিল খরস্রোতা এই নারদ নদ। এরপর ধীরে ধীরে নদের আশপাশের ঊর্বর ভূমিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠতে থাকে বসতি। মহারানী ভবানীসহ অন্য রাজা-বাদশারা এই নদ দিয়ে কলকাতায় যাতায়াত করতেন। ৮০’র দশকে নারদের উৎসমুখ চারঘাটে স্লুইস গেট নির্মাণের ফলে এ নদে কমতে থাকে পানি প্রবাহ। শুষ্ক মৌসুমে পানি না থাকায় তীর ভরাট করে চলে দখল প্রক্রিয়া। গড়ে তোলা হয় স্থায়ী ও অস্থায়ী অবকাঠামো। কমতে থাকে নারদের আয়তন। নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও স্থানীয়দের তথ্যমতে, নারদ নদের দৈর্ঘ্য ৪৪ কিলোমিটার। কালের বিবর্তনে এবং অবৈধ দখল ও দূষণের কবলে নারদ হারিয়ে যেতে বসেছে। নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে দখলদারদের তালিকা চাওয়া হয়েছে। তালিকা পেলেই উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে দখলমুক্ত করা হবে নদের জমি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর