বুধবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

ময়লার ভাগাড় কৃষি কোয়ার্টার

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

ময়লার ভাগাড় কৃষি কোয়ার্টার

নওগাঁর রানীনগরে ইউনিয়নভিত্তিক উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের কোয়ার্টার কাম-অফিসগুলো বর্তমানে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। যুগের পর যুগ এ কোয়ার্টারগুলোতে সংস্কার না করায় উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের কোয়ার্টারগুলো পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে। অনেক আগেই খোয়া গেছে ভবনগুলোর আসবাবপত্রসহ অন্যান্য অবকাঠামো। নতুন করে নির্মাণ করা ছাড়া এ ভবনগুলো সংস্কার কিংবা মেরামতের আর কোনো উপায় নেই। জানা গেছে, উপজেলার প্রতিটি কৃষকের ঘরে ঘরে গিয়ে পরামর্শ ও সেবা পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে প্রতিটি ইউনিয়নে মাঠ পর্যায়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের জন্য অফিস কাম বাসা এবং এখান থেকে খুব সহজেই দূর-দূরান্তের কৃষকদের কাছে সার, বীজসহ অন্য কৃষি উপকরণগুলো পৌঁছে দিতেই দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে ও পরে এ কোয়ার্টারগুলো নির্মাণ করা হয়েছিল। এ ছাড়া উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা এ কোয়ার্টারগুলোতে অবস্থান করে দিন-রাতের যে কোনো সময় ওই এলাকার কৃষকরা চাষাবাদ নিয়ে কোনো সমস্যায় পড়লে সেই বিষয়ে পরামর্শ এবং সহযোগিতা প্রদান করতে পারেন। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এ ভবনগুলোতে আধুনিকতার কোনো ছোঁয়া স্পর্শ না করায় আস্তে আস্তে সেগুলো বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। যার কারণে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা এ ভবনগুলোতে আর বসবাস করেন না। ফলে বর্তমানে এ ভবনগুলো বছরের পর বছর পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। কোনো কোনো স্থানে ভবনগুলোকে ময়লা-আবর্জনা ভাগাড় কিংবা গণশৌচাগার হিসেবে ব্যবহার করছেন স্থানীয়রা। আবার কোনো কোনো এলাকায় ভবনের আশপাশের জমি জবরদখল করছেন প্রভাবশালীরা। আবার যদি এ পরিত্যক্ত ভবনগুলোর জায়গায় আধুনিকমানের ভবন নির্মাণ করে সেগুলোতে নিজ নিজ এলাকার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের বসবাস নিশ্চিত করা সম্ভব হয় তাহলে প্রতিটি কৃষকের ঘরে ঘরে আধুনিক প্রযুক্তির কৃষি সেবা পৌঁছে দেওয়ার যে মহৎ উদ্যোগ সরকার গ্রহণ করেছে তা শতভাগ সফল হবে এবং দেশের কৃষি বিভাগ আরও সমৃদ্ধশালী হবে। এক সময় তারা বেতগাড়ি বাজারে বিএস কোয়ার্টারে গিয়ে কৃষি সেবা পেয়েছেন। কিন্তু বহু বছর হয়ে গেল ওই কোয়ার্টারে আর কোনো অফিসার থাকেন না। যার কারণে আর চাইলেও অফিসারদের সব সময় হাতের কাছে পাওয়া যায় না। প্রয়োজন হলে অফিসারদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করতে হয়। আবার সার, বীজ কিংবা অন্য কৃষি উপকরণগুলো নিতে হলে ২৫ কিলোমিটার দূরে উপজেলা কৃষি অফিসে যেতে হয়। এতে কৃষকদের টাকা ও সময় দুটোই নষ্ট হয়। যদি বিএস কোয়ার্টারগুলো থেকে এ কার্যক্রম চালানো হতো তাহলে শত শত কৃষক খুব সহজেই বাড়ির কাছ থেকে এ কৃষি সেবাগুলো নিতে পারত। সব সময় মনিটরিং করার কারণে স্থানীয় কৃষি সেক্টরগুলো আরও উন্নত হতো। উপজেলার একডালা গ্রামের কৃষক হানিফ মন্ডল বলেন, বর্তমানে এ ভবনগুলোর করুণ অবস্থা দেখে মনে হয় সবকিছুতে আধুনিকতার ছোঁয়া স্পর্শ করলেও কৃষি বিভাগে এখন পর্যন্ত পুরোপুরি আধুনিকতার ছোঁয়া স্পর্শ করেনি।

 কৃষিই হচ্ছে আমাদের দেশের একমাত্র চালিকাশক্তি। তাই কৃষিকে পেছনে ফেলে দেশকে এগিয়ে নেওয়া কখনই সম্ভব নয়। দেশের কৃষিকে আরও সমৃদ্ধশালী করতে, অধিক ফলন পেতে এবং কৃষি নিয়ে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে হলে স্থানীয় এ বিএস অফিস কাম বাসাগুলোর কার্যক্রম নতুন করে চালু করার কোনো বিকল্প নেই। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম বলেন, এ ভবন কাম অফিসগুলো যদি সচল থাকত তাহলে উপজেলা কৃষি অফিসে চাপ কম হতো। দূর-দূরান্ত থেকে কৃষকদের আর কষ্ট করে উপজেলা কৃষি অফিসে আসতে হতো না। মাঠ পর্যায়ের অফিসারগুলো বাধ্যতামূলক যার যার এলাকায় অবস্থান করতেন। যার কারণে কৃষকরা খুব সহজেই যাবতীয় কৃষি সমস্যার পরামর্শ পেতেন। এতে কৃষি সেক্টরগুলো আরও সমৃদ্ধশালী হতো। ফলন বৃদ্ধি পাওয়া, কৃষকদের খরচ কম হওয়াসহ যাবতীয় কৃষি বিষয়ে দেশ আরও এগিয়ে যেত। এ ছাড়া এ ভবনগুলোর জায়গা বেদখল হয়ে যাচ্ছে। এ জায়গাগুলোতে যদি এখনই নতুন করে কোনো কিছু করার সরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করা না হয় তাহলে আর কিছুদিন পর এ জায়গাগুলো হাতছাড়া হয়ে যাবে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক আবু হোসেন বলেন, আমি প্রতিনিয়তই জেলার প্রতিটি উপজেলার এ বিএস কোয়ার্টারগুলো নিয়ে দ্রুত সরকারের পদক্ষেপ গ্রহণ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়কে অবগত করে আসছি। জানি না সরকার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করবে কি না। তবে এ কোয়ার্টারগুলো আবার দ্রুত সচল করা অত্যন্ত প্রয়োজন।

সর্বশেষ খবর