শুক্রবার, ২১ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

লালমনিরহাটে কার্তিকের ধানে মঙ্গা জয়ের হাসি

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

লালমনিরহাটে কার্তিকের ধানে মঙ্গা জয়ের হাসি

আগাম জাতের আমন ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষক -বাংলাদেশ প্রতিদিন

দফায় দফায় বন্যা, ভারী বর্ষণ ও ঝড়সহ নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও লালমনিরহাটে স্বল্পমেয়াদি আমাম জাতের আমন ধান ঘরে তুলতে পারায় খুশি প্রান্তিক চাষি ও কৃষি শ্রমিকরা। ধানের ভালো ফলন ও দাম পাওয়ায় ক্ষতি অনেকটা পুষিয়ে ওঠবেন বলে আশাবাদী কৃষকরা। প্রায় সব দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধিতে যখন নিম্নআয়ের মানুষের নাভিশ্বাস তখন কার্তিকের আগাম ধান কৃষকের মুখে মঙ্গা জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। অগ্রহায়ণের এখনো ঢের বাকি। এক সময়ে এ মাসে লালমনিরহাটের ঘরে ঘরে হানা দিত মঙ্গার ভয়াল থাবা। কালের বিবর্তনে সব যেন পাল্টে গেছে। এখন আর অগ্রহায়ণ মাসের অপেক্ষা নয়, আগাম জাতের ধান চাষ করে এ অঞ্চলের কৃষক আশ্বিন-কার্তিক মাসেই মঙ্গা জয় করতে শিখেছেন। চলতি মাসেই লালমনিরহাটসহ রংপুর বিভাগের আট জেলার বিভিন্ন এলাকায় আগাম জাতের আমন ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হয়েছে। কৃষকদের মুখে দেখা যাচ্ছে হাসির ঝিলিক। ধান কেটে বাড়ি আনার পর মাড়াই, শুকিয়ে ঘরে তোলার কাজ করছেন কৃষকবধূ ও মেয়েরা। ধানের দাম ভালো থাকায় চাষিদের মন উৎফুল্ল। আর মজুরি বেশি থাকায় চাঙা কৃষি শ্রমিকরা। চলতি আমন মৌসুমে উত্তরাঞ্চলের রংপুর বিভাগের আট জেলায় ১২ লাখ ৮৬ হাজার ৪৯ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে উৎপাদন ধরা হয়েছে ৩৫ লাখ ৫৯ হাজার ৯৬৩ টন চাল। এর মধ্যে আগাম জাতসহ হাইব্রিড চাষ হয়েছে প্রায় ৭ লাখ হেক্টর জমিতে যা মোট আবাদি জমির ৪৩ শতাংশ। এবার আমন আবাদের শুরুটা ভালো ছিল না দুই কারণে। তা হলো, পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়া ও অকাল বন্যা। ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকের মাথায় হাত। আমনের যে টার্গেট তারা করেছিল, তা পূরণ না হওয়ার শঙ্কা দেখা দেয়। সব মোকাবিলা করে মাঠ ঘুরে দেখা যায় আমনের ফলন ভালোই হবে। কৃষকরা জানান, তিন বছর আগেও এক একর জমির ধান কাটা ও মাড়াই করতে এক থেকে দেড় হাজার টাকা লাগত। এবার প্রায় তিনগুণ বেশি মজুরি দিতে হচ্ছে। অন্যদিকে দিন হাজিরায় যেসব শ্রমিক কাজ করতেন তাদের মজুরিও দ্বিগুণ হয়েছে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত ব্রি-৩৩ ও বাংলাদেশ আণবিক কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) উদ্ভাবিত বিনা-৭ ধান আমনের আগে ফলন দিয়েছে। ব্রি-৩৩ ও বিনা-৭ আবাদে খরচও তেমন নেই। বিঘাপ্রতি উৎপাদন ১৬ থেকে ১৮ মণ। এ অঞ্চলে এখন সারা বছর কোনো না কোনো জাতের ধানের আবাদ হচ্ছে। ধানের ‘নির্দিষ্ট মৌসুম’ দিন দিন উঠে যাচ্ছে। লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক হামিদুর রহমান বলেন, আগাম আমন ধানের ফলন ভালো হয়েছে। কৃষকরা মঙ্গা দূর করে প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়েছেন।

সর্বশেষ খবর