শনিবার, ২২ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য বাড়ছে

জমির বেগ, ফেনী

কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য বাড়ছে

ফেনীতেও দিন দিন বাড়ছে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য। ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধ। কিশোরদের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে পুলিশ নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসলেও তাদের থামানো যাচ্ছে না। আগে কিশোররা ছোটখাটো অপরাধ করে থাকলেও বর্তমানে খুন খারাবি, চুরি, ছিনতাই, মাদক বিকিকিনি ও ইভ টিজিংসহ গুরুতর অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। কিশোররা বিভিন্ন পাড়ার তথাকথিত বড় ভাইদের পৃষ্ঠপোষকতায় এসব অপরাধে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগও রয়েছে। এসব কিশোর গ্যাংয়ের দাপটে ফেনীবাসী অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। কিশোরদের দৌরাত্ম্য বন্ধে ইতোমধ্যে ফেনীতে বেশ কয়েকটি সংগঠন মানববন্ধন ও জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপিও দিয়েছে।  কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা পাড়া-মহল্লায়, শহরের অলি-গলিতে দেয়ালে চিকা মেরে নিজেদের জানান দিতে উঠেপড়ে লেগেছে। তাদের গ্রুপগুলোর নামও অদ্ভুদ ধরনের। ফেনীতে অন্তত ৩০টি কিশোর গ্যাং আছে বলে জানা যায়। তাদের মধ্যে অনেকেই শহরের বড় বড় স্কুলের শিক্ষার্থী। মেয়েদের গ্রুপ আছে বলেও বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়। গ্রুপগুলো হলো- এপেক্স টুয়েন্টি-টুয়েন্টি, বি-২ কে, পিএসডিবি, রেড সিগন্যাল, এক্স টুয়েন্টি-টুয়েন্টি, টিএন টুয়েন্টি ইত্যাদি। সম্প্রতি ফেনীতে কিশোর গ্যাংয়ের মধ্যে বেশ কয়েকটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ গত সোমবার শহরের পাঠানবাড়ি এলাকায় টিএন টুয়েন্টি ও পিএসডিবি গ্রুপের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে ছোরা, চাপাতিসহ দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করা হয়। এতে দুই পক্ষের আটজন আহত হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে পাঁচজনকে আটকও করেছে। তার আগে শহরের শিশু নিকেতন স্কুল, একাডেমিসহ বিভিন্ন সড়কে ও পাড়ায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের মধ্যে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শহরের নাজির রোড ও শান্তি কোম্পানি রোড এলাকায় একাধিকবার বিভিন্ন গ্রুপের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। গত ৯ জুলাই ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার জায়লস্কর ইউনিয়নের নুরুল্লাপুর ও সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়ার রতনপুরে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা তৌহিদ ও সজীব নামে দুই যুবককে এলোপাতাড়ি আঘাত করে। এ ঘটনায় ১৫ দিন চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে সজীব উল্লাহ মৃত্যুবরণ করে। কিশোর অপরাধ বন্ধে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় অভিযান চালানোর কথা জানা যায়। পুলিশ কিশোরদের অভিনব স্টাইলে চুল রাখাসহ পাড়া-মহল্লায় উৎপাত বন্ধে কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। ডাটাবেজ তৈরির পাশাপাশি সচেতনতা বাড়াতে পুলিশ চালাচ্ছে নানা কার্যক্রম। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পুলিশ সদস্য জানান, কিশোর অপরাধের জন্য সুস্থ বিনোদনের অভাব, দরিদ্রতা দায়ী। এলাকার বড় ভাই, ছোট ভাই এক গ্রুপের সদস্য অন্য গ্রুপে যোগদানে চাপ দিলে দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। ধনাঢ্য পরিবারের ছেলেরাও ইতোমধ্যে পরিবারের আসকারা পেয়ে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে বলেও তারা জানান। ইতোমধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাদিয়া ফারজানার নেতৃত্বে কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে নিত্য অভিযান চলছে। ছাড় দেওয়া হবে না, ছেড়ে দেওয়া হবে না- এসব লিখে তাদের মধ্যে ভয়েরও সৃষ্টি করছেন।

সর্বশেষ খবর