শনিবার, ২২ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

পদ্মায় জমি হারিয়ে দিশাহারা

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

পদ্মায় জমি হারিয়ে দিশাহারা

বর্ষা মৌসুমে পদ্মায় পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অগ্নিমূর্তি ধারণ করে, তেমনি বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একই চিত্র দেখা যায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের নারায়ণপুর ও শিবগঞ্জের পাঁকায়। প্রতিদিনই নদী গিলে খাচ্ছে শত শত বিঘা ফসলি জমি। নদী এতটাই তীব্র আকার ধারণ করে যা দেখে স্থানীয় মানুষ হতবিহ্বল হয়ে পড়েছে। বিগত ৪ বছর থেকে এভাবেই চলছে চরের পাড়ের মানুষের জীবন সংগ্রাম। স্থানীয়দের মতে, আগে কখনো এ ধরনের ভাঙনের ঘটনা ঘটেনি। এ বছর ব্যাপক ভাঙনের মুখে পড়েছে। হুমকিতে পড়েছে নদীর তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে চরে বিদ্যুৎ সংযোগ। তবে, ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে কারিগরি কমিটি ভাঙনকবলিত এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। জানা গেছে, এখন পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি অব্যাহত ও নদীর গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার প্রত্যন্ত চর নারায়ণপুর ইউনিয়নের ডাকাতপাড়া, খলিফাচর, বান্নাপাড়া, মরাপাড়া ও ধূলাউড়ি, নারায়ণপুর ঘোন এবং পাঁকা ইউনিয়নের নিশিপাড়া ও দক্ষিণ পাকা এলাকায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। নদীর পানিতে চারদিক টইটম্বুর থাকার পর ভাঙন শুরু হয়। তেমনি বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নদীর পাড় ভাঙতে দেখা যায়। এভাবেই চলে চরের পাড়ের মানুষের জীবন সংগ্রাম। পাঁকার দক্ষিণ পাকা থেকে নারায়ণপুর পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা পানি পদ্মা নদীর তীব্র স্রোতে ইতোমধ্যে বিলীন হয়েছে কয়েক হাজার বিঘা ফসলি জমি ও বসতবাড়ি। এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মাদরাসাও যাচ্ছে নদীর পেটে। এখন হুমকিতে রয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ আরও ফসলি জমি ও বসতবাড়ি। একসময়ে এ অঞ্চলের মানুষ ছিল স্বাবলম্বী, এখন ভাঙন বাড়তে থাকায় তাদের ভিটেমাটি হারিয়ে তারা নিঃস্ব হতে চলেছে। চোখের সামনে বিলীন হয়ে যাওয়া স্থাপনা নির্বাক হয়ে তাকিয়ে  দেখছে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলো। ভাঙন কবলিত এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত একাধিক পরিবার জানান, গত কয়েক বছর থেকে ভাঙনের পরিমাণ কম ছিল কিন্তু এবার ব্যাপকহারে ভাঙন বেড়েছে। পদ্মার ভয়াল স্রোতে নদীর পার যেমন ভাঙছে, তেমনি বাড়ি-ঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভাঙনকবলিত এলাকার জন্য আগাম ব্যবস্থা নিলে হয়তো এতো বাড়িঘর বিলীন হতো না। নারায়ণপুর ঘোন এলাকার শামিম হোসেন জানান, নদীর গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় কয়েক বছর থেকে এ গ্রামসহ আশপাশের গ্রামে ভাঙন দেখা দেওয়ায় মানুষ দিশাহারা হয়ে পড়েছে। মাসকলাই, ধান, তিল ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করে এ এলাকার মানুষের সংসার ভালোই চলছিল। এখন এসব জমি তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি কিছু জমি পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। কিন্তু ভাঙতে ভাঙতে এখন নদীর খুব কাছে চলে এসেছে। তাই সরকারের নিকট আকুল আবেদন, ভাঙনরোধে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হোক। নারায়ণপুরের আবদুল মোমিন জানান, ভাঙন  ঠেকাতে অস্থায়ীভাবে ৩৪০টি জিও টিউব ও ১ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। তাতে এলাকার মানুষের মনে আশার সঞ্চার জেগেছিল, কিন্তু কোনোভাবেই ভাঙন রোধ হচ্ছে না। মানবতার প্রতীক প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন, স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে আমাদের রক্ষা করুন।

সর্বশেষ খবর