মঙ্গলবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

আন্ডারপাসের অভাবে ঝরছে প্রাণ

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

আন্ডারপাসের অভাবে ঝরছে প্রাণ

বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার পাকুল্যা একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। কোনো জটিলতা না থাকলেও মহাসড়কের পাকুল্যা বাসস্টেশনে আন্ডারপাস নির্মাণ হচ্ছে না। এলাকাবাসীর জোরালো দাবির মুখেও আন্ডারপাস নির্মাণ না করায় গত ছয় বছরে পারাপারের সময় বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, শিশু, ছাত্র এবং একই পরিবারের সদস্যসহ শতাধিক ব্যক্তির প্রাণ ঝরেছে। আহত হয়েছেন পাঁচ শতাধিক। বাসস্ট্যান্ডটি এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। গত রবিবার রাতে বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কে পাকুল্যা বাসস্ট্যান্ডে গাড়িচাপায় রাশেদুজ্জামান রাশেদ (৪৫) নামে এক ব্যবসায়ী নিহত হন। তিনি পাকুল্যা পূর্বপাড়ার সিরাজুল ইসলাম ননি মিয়ার ছেলে। তিনি পাকুল্যা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির দফতর সম্পাদক ও জামুর্কী ইউনিয়ন বিএনপির প্রচার সম্পাদক ছিলেন। রাশেদুজ্জামান রাশেদ পাকুল্যা বাজারে পোলট্রি ফিডের ব্যবসা করতেন। প্রতিদিন রাত সাড়ে ১০টার মধ্যে তিনি মহাসড়ক পার হয়ে বাড়িতে চলে যেতেন। রবিবার রাতে মহাসড়ক পার হতে গিয়ে গাড়িচাপায় তিনি নিহত হন। ওই বাসট্যান্ড এলাকায় ১৮ অক্টোবরও একজন নিহত ও তিনজন গুরুতর আহত হন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এলাকাবাসীর দাবি ও আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৮ জুলাই স্থানীয় সংসদ সদস্য খান আহমেদ শুভ, টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ডক্টর মো. আতাউল গনি, পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার, সাসেক প্রজেক্টের ম্যানেজার অমিত কুমার পাল, টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আলীউর হোসেন, মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. হাফিজুর রহমান, মির্জাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মীর শরীফ মাহমুদসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা পাকুল্যা বাসস্ট্যান্ড পরিদর্শন করেন। তারা তিন মাসের মধ্যে পাকুল্যা বাসস্টেশনে ওভারব্রিজ নির্মাণ এবং দুই পাশে ট্রাফিক পুলিশ ব্যবস্থা থাকবে বলে ঘোষণা দেন। পাশাপাশি সাসেক-এর সহযোগিতায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ গুরুত্ব বিবেচনায় পাকুল্যায় আন্ডারপাস সড়ক নির্মাণ করে দেওয়ারও ঘোষণা দেন। তবে দীর্ঘদিন পার হলেও তাদের সে প্রতিশ্রুতি আলোর মুখ দেখেনি। ফলে প্রতিনিয়ত সড়কে মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে। আন্ডারপাস নির্মাণ না করায় স্থানীয়রা ফুঁসে উঠছে। এক বছর ধরে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বারবার মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন। প্রতিশ্রুতি পেলেও বাস্তবায়ন না হওয়ায় সম্প্রতি আন্ডারপাস নির্মাণের দাবি নিয়ে স্থানীয় কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী এবং আশপাশের ৮-১০ গ্রামের মানুষ আবারও আন্দোলনে নেমেছেন।

আন্ডারপাস নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলনসহ কঠোর কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। পাকুল্যা বাসস্টেশনে আন্ডারপাস নির্মাণ নিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ডিএ মতিন, ওয়ার্কার্স পার্টি টাঙ্গাইল জেলার সভাপতি কমরেড গোলাম নওজব পাওয়ার চৌধুরীসহ অনেকেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তারা জানান, পাকুল্যায় ’৭১-এ মহান মুক্তিযুদ্ধে টাঙ্গাইলের প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধের গণকবর, ৪-৫টি গ্রামের সামাজিক গোরস্থান, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, সাটিয়াচড়া ছাবদার আলী কলেজ, মসজিদ, মাদরাসা, কয়েকটি বিদ্যালয়, জামুর্কি ইউনিয়ন পরিষদ, মির্জাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ভূমি অফিস, বাজার ও বাজারকেন্দ্রিক ১৩-১৪টি গ্রাম রয়েছে। এ ছাড়া পাকুল্যা বাসস্ট্যান্ড দিয়ে পাশের দেলদুয়ার, নাগরপুর, ঢাকা জেলার ধামরাই, মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়াসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার হাজার হাজার মানুষ রাজধানী ঢাকা, উত্তরবঙ্গ এবং জেলা সদর টাঙ্গাইলের সঙ্গে যাতায়াত করে থাকে। স্থানটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও আন্ডারপাস নির্মাণ না করায় বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসীর যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা রাফিউর রহমান খান ইউসুফজাই সানি, তৌফিকুর রহমান তালুকদার রাজিব, ব্যবসায়ী মাকসুদুর রহমান খান ইউসুফজাই রেমনসহ একাধিক ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতা অভিযোগ করেন, বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়ক চার লেন চালু হওয়ার পর গত ছয় বছরে পাকুল্যা বাসস্টেশনে মহাসড়ক পারাপারের সময় শিক্ষার্থী, শিক্ষক, বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ শতাধিক পথচারী নিহত ও পাঁচ শতাধিক আহত হয়েছেন। আহত অনেকে পঙ্গুত্ববরণ করে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। তারা সরকারের কাছে অনতিবিলম্বে পাকুল্যা বাসস্টেশনে আন্ডারপাস নির্মাণের দাবি জানান। টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আলীউর হোসেন জানান, বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কে মির্জাপুরের পাকুল্যায় আন্ডারপাস নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ডক্টর মো. আতাউল গনি জানান, বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কে টাঙ্গাইলের পাকুল্যা একটি জনবহুল গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। ওখানে মহাসড়ক পারাপারে স্থায়ী ব্যবস্থা করা জরুরি। এলাকা পরিদর্শন করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে আন্ডারপাস নির্মাণের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ স্থান যাচাই-বাছাই করছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী জানুয়ারি মাসের মধ্যে নির্মাণকাজ শুরু হবে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য খান আহমেদ শুভ জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওভারব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবির বিষয়টি বিবেচনায় রেখে পাকুল্যায় আন্ডারপাস নির্মাণের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগও বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনায় রেখেছে।

সর্বশেষ খবর