মঙ্গলবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

জেলা ছাত্রলীগের পাল্টাপাল্টি কমিটি

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

কুষ্টিয়ায় পৌর, সদর উপজেলা ও জেলার তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি গঠন করা নিয়ে প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। শনিবার রাতে কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান অনিক তাঁর ফেসবুক আইডিতে পাঁচটি আংশিক কমিটি পোস্ট করেন। সেখানে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উভয়েরই স্বাক্ষর ছিল। কমিটিতে পদ পাওয়া নেতা-কর্মীরা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। এদিকে ২৪ ঘণ্টা পর রবিবার রাতে সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ নতুন করে পাল্টা পাঁচটি আংশিক কমিটি গঠনের চিঠি পোস্ট করেন। ওই পোস্টকে কেন্দ্র করে সাধারণ নেতা-কর্মীরা বিভ্রান্তিতে পড়ে যান। পাল্টাপাল্টি এ কমিটি নিয়ে ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় ওঠে। শেখ হাফিজের পোস্ট দেখে প্রতিবাদ জানিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন একাংশের নেতা-কর্মীরা। তারা সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। দলীয় নেতা-কর্মীরা জানান, গত শনিবার রাতে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান অনিক ও সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ স্বাক্ষরিত পৃথক পাঁচটি প্যাডে কুষ্টিয়ার তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ পাঁচটি ইউনিটের আংশিক কমিটি অনুমোদন দেন।

কমিটি ঘোষণার পর নিজ নিজ ইউনিটের নবনির্বাচিত নেতারা জেলা ছাত্রলীগের শীর্ষ এই দুই নেতার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে তাদের নিজ নিজ ফেসবুক আইডিতে অভিনন্দন জানান। বিভিন্ন মহল থেকে নবনির্বাচিত কমিটির নেতাদেরকে অভিনন্দন জানানো হয়। এদিকে ওই কমিটি ঘোষণার মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে রবিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ তাঁর ফেসবুক আইডিতে জেলা ছাত্রলীগের প্যাডে নতুন করে তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ পাঁচটি ইউনিটের আংশিক কমিটি অনুমোদনের বিজ্ঞপ্তি পোস্ট করেন। ওই বিজ্ঞপ্তিতেও জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান অনিক ও সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জের স্বাক্ষর রয়েছে। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে একই ইউনিটের নতুন করে কমিটি ঘোষণা নিয়ে ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জের পোস্ট দেখে সভাপতি আতিকুর রহমান অনিক তাঁর ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেন, শনিবারের কমিটিই সঠিক। রবিবার কোনো কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়নি। তাঁর স্বাক্ষর জাল করে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। বিভ্রান্তি না হওয়ার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানান তিনি। কমিটির বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আতিকুর রহমান অনিক বলেন, ‘২২ অক্টোবর ঢাকায় আমি ও সাধারণ সম্পাদক যৌথভাবে স্বাক্ষর করে পাঁচটি ইউনিটের আংশিক কমিটি অনুমোদন দিয়ে রাতেই কুষ্টিয়ায় ফিরে আসি। রবিবার ঘোষিত কমিটিতে আমি স্বাক্ষর করিনি। হাফিজ আমার স্বাক্ষর জাল করে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। আমি প্রয়োজনে এ ব্যাপারে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করব। অপরদিকে, সভাপতির দেওয়া স্ট্যাটাসের ১০ মিনিট পর সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ পাল্টা পোস্ট দেন। সেখানে শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করেন, ‘শনিবারের যে কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল সেটা সঠিক নয়। আমার স্বাক্ষর ও সিল নকল করে বিভ্রান্ত ছড়ানো হয়েছে। বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য অনুরোধ জানান তিনি।

এই দুই নেতার পাল্টাপাল্টি পোস্টের পর জেলা ছাত্রলীগের দফতর সম্পাদক রক্তিম ঘোষ স্বাক্ষরিত ছাত্রলীগের প্যাডে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয় ‘শনিবার অনুমোদন দেওয়া পাঁচটি কমিটি সঠিক। রবিবার কোনো কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়নি। কিছু অসাধু মহল স্বাক্ষর নকল করে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তাই সবাইকে বিভ্রান্তি না হওয়ার আহ্বান জানান।’ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পাল্টাপাল্টি এই কমিটি ঘোষণা ও স্ট্যাটাস নিয়ে চরম দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়েছেন সাধারণ নেতা-কর্মীরা। কমিটি অনুমোদন নিয়ে জেলা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। শনিবার ঘোষিত কমিটির নেতারা তাদের অনুসারী ও কর্মীদের জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জের হঠকারী ও দল ভাঙনের স্ট্যাটাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে রবিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে কুষ্টিয়া শহরে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল বের করে। শতাধিক নেতা-কর্মী মজমপুর ট্রাফিক মোড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।

সমাবেশে বক্তারা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। চ্যালেঞ্জের দুই গালে জুতা মারো তালে তালে, চোর চোর কমিটি চোর, চ্যালেঞ্জ চোর। নারী চোর নারী চোর, চ্যালেঞ্জকে মানি না মানব না, চ্যালেঞ্জের আস্তানা ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও। অ্যাকশন অ্যাকশন ডাইরেক্ট অ্যাকশন-এসব বলে তারা স্লোগান দেন। সাধারণ নেতা-কর্মীরা বলছেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের প্রকাশ্যে পাল্টাপাল্টি স্ট্যাটাস নিয়ে কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের ভাঙন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ সাংবাদিকদের বলেন, ‘কিছু অতি উৎসাহী নেতা-কর্মী উসকে দিয়ে নোংরামি করছে। ছাত্রলীগ সুসংগঠিত দল। দলে কোনো বিশৃঙ্খলা মেনে নেওয়া হবে না। সভাপতিকেও অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেও মিছিল হয়েছে।’

সর্বশেষ খবর