মঙ্গলবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

নানা অব্যবস্থাপনায় চলছে স্বাস্থ্যসেবা

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

নানা অব্যবস্থাপনায় চলছে স্বাস্থ্যসেবা

নানা অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে চলছে লালমনিরহাটের চিকিৎসাসেবা। জেলা সদরসহ অন্য চারটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স জনবল সংকট, নানা অনিয়ম আর দুর্নীতির মধ্য দিয়েই চলছে। এ ছাড়া এসব হাসপাতালে নেই পরীক্ষার যন্ত্রপাতি। ফলে সাধারণ মানুষের যে দুর্ভোগ সেটি থেকেই যাচ্ছে। জেলার প্রায় ১৮ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার ভরসাস্থল লালমনিরহাট সদর হাসপাতাল। প্রয়োজনীয় জনবল সংকট আর অনিয়মে হাসপাতালটির স্বাস্থ্যসেবা ভেঙে পড়েছে। দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর ধরে শূন্য ১৭ জন চিকিৎসকের পদ। নষ্ট প্রায় কোটি টাকার আধুনিক ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালকে ১০০ শয্যা হতে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের ঘোষণা দেন। এরপর প্রথম পর্যায়ে ১০০ শয্যা থেকে ১৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও ১০০ শয্যার জনবল দিয়ে চলছে ১৫০ শয্যার কার্যক্রম। জনবল সংকটে হাসপাতালের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে, জেলা শহরে ১৫০ শয্যার হাসপাতালসহ ১০ শয্যার একটি মা ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং জেলার পাঁচ উপজেলায় ৫০ শয্যার পাঁচটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে। উপজেলা শহরের প্রতিটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে দীর্ঘদিনের জনবল সংকট। সরকারি হাসপাতালে কাক্সিক্ষত স্বাস্থ্যসেবা না পেয়ে বেসরকারি ক্লিনিকমুখী হচ্ছেন জেলার মানুষ। আর সুযোগকে কাজে লাগিয়ে শুধু জেলা ও উপজেলা শহরের গন্ডি পেরিয়ে এখন বিভিন্ন ইউনিয়নে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠছে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, জেলা হাসপাতালে ১৭টি মেডিকেল অফিসারের পদ দীর্ঘ দেড় বছর ধরে শূন্য রয়েছে। অনেক সময় মেডিকেল অফিসার ছাড়াই হাসপাতালের জরুরি বিভাগ চলে সহকারী মেডিকেল অফিসার দিয়ে। কয়েকজন চিকিৎসককে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হতে এনে জোড়াতালি দিয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসা কার্যক্রম চালালেও সম্প্রতি এদের কয়েকজন অন্যত্র বদলি হয়ে চলে গেছেন। এ ছাড়াও হাসপাতালে কভিড-১৯ রোগীদের জন্য পৃথক কোনো ওয়ার্ড না থাকায় কেবিনে রেখে চিকিৎসা চলছে।

এ ছাড়াও হাসপাতালের পাশে স্থাপিত সরকারি নার্সিং ইনস্টিটিউটটিতে নার্সদের আবাসিক হলের রুমে ২০ শয্যার করোনারোগীদের সাধারণ চিকিৎসা সেবা দিতে অস্থায়ী হাসপাতাল ঘোষণা করে চিকিৎসা চলছে। তবে শুরুর দিকে এখানে ১৩ জন নতুন চিকিৎসক যোগ দিলেও বর্তমানে চারজন চিকিৎসক অন্যত্র চলে গেছেন। দীর্ঘদিন থেকে হাসপাতালে সরকারি নিয়োগপ্রাপ্ত আয়া ও ওয়ার্ডবয় নেই। স্থানীয় অস্থায়ী জনবল দিয়ে আয়া ও ওয়ার্ডবয়ের কাজ চলছে। নিয়োগপ্রাপ্ত সুইপার সংকটের কারণে যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে ময়লা আবর্জনা। জানা গেছে, হাসাপাতালে কর্মরত বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বিভাগীয় রংপুর শহরে বসবাস করেন। সেখানে তারা নামে বেনামে গড়ে তুলেছেন ক্লিনিক, হাসপাতাল ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজ। সেখানেও নিয়মিত কাজ করেন। তারা নানা অজুহাতে হাসপাতালে অনুপস্থিত থাকেন। এদিকে চিকিৎসক সংকটে হাসপাতালে বন্ধ রয়েছে অস্ত্রোপচার। প্রায় কোটি টাকার আধুনিক ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট, দামি ওটি ও আল্ট্রাসোনগ্র্যাম মেশিন অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। রক্তের অনেক পরীক্ষাই এখানে হয় না। সদর হাসপাতালের একজন চিকিৎসক বলেন, রোগীদের কাক্সিক্ষত সেবা ইচ্ছা থাকলেও দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। হাসপাতালে ১৭টি মেডিকেল অফিসারের পদ প্রায় দেড় বছর ধরে শূন্য রয়েছে। সরকারিভাবে কোনো আয়া ও ওয়ার্ডবয়ের নিয়োগ নেই। বিনা বেতনে স্থানীয় আয়া ও ওয়ার্ডবয় দিয়ে হাসপাতালে কী ধরনের সেবা দেওয়া যায়? উল্টো প্রশ্ন রাখেন। সিভিল সার্জন ডা. নির্মূলেন্দু রায় জানান, হাসপাতালের পাশে আড়াই শত শয্যার হাসপাতালের একটি আট তল বিল্ডিং প্রায় নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে। ডিসেম্বর মাসে গণপূর্ত বিভাগ হস্তান্তর করার কথা রয়েছে। সেখানে পৃথক সরকার ঘোষিত ইউনিটগুলো চালু করা যাবে। তবে এ মুহূর্তে হাসপাতালে চিকিৎসক, আয়া ও ওয়ার্ডবয় প্রয়োজন। এ ছাড়া অন্য চারটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও জনবল সংকট প্রকট বলে জানান এই কর্মকর্তা। সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রমজান আলী জানান, জনবল সংকটই এই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবার প্রধান অন্তরায়। কাক্সিক্ষত সেবা দিতে গেলে জনবল কাঠামো পরিপূর্ণ করতে হবে। অন্যথায় জনগণ কাক্সিক্ষত সেবা পাবে না।

সর্বশেষ খবর