শিরোনাম
শনিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা
নওগাঁর ১৬৮ এতিমখানা

এতিমখানায় ভুয়া শিশু দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা লোপাট

নওগাঁ প্রতিনিধি

এতিমখানায় ভুয়া শিশু দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা লোপাট

নওগাঁয় সরকারি-বেসরকারি মিলে ১৬৮ এতিমখানায় অধিকাংশ ভুয়া শিশু দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। এসব এতিমখানায় থাকা বেশির ভাগ ছাত্রের মা-বাবা থাকলেও তাদের এতিম দেখিয়ে সমাজসেবা অধিদফতরের কর্তাদের যোগসাজশে প্রতিষ্ঠান প্রধানরা এ টাকা আত্মসাৎ করছেন। অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে ইতোমধ্যে কয়েকটি এতিমখানার বরাদ্দ বন্ধ ও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। নওগাঁ জেলা সমাজসেবা অধিদফতর জানায়, তাদের তালিকা অনুযায়ী জেলার ১১ উপজেলায় ১৬৮টি বেসরকারি এতিমখানা রয়েছে। প্রতিটি দুস্থ এতিম শিশুর জন্য মাসে ২ হাজার টাকা দেওয়া হয়। সে হিসাবে এসব এতিমখানায় বছরে সরকারি বরাদ্দ ৮ কোটি ২৫ লাখ ৬ হাজার টাকা। এতিমখানার অধিকাংশই মাদরাসাভিত্তিক লিল্লাহ বোর্ডিং। এগুলোতে সরকারি ভাতাভোগী এতিম শিশু রয়েছে ৩ হাজার ৪৪০ জন। জেলার মহাদেবপুর উপজেলায় কাগজে-কলমে ৩৪টি বেসরকারি এতিমখানা রয়েছে। যাতে শিশুর সংখ্যা দেখানো হয়েছে ১ হাজার ১৫৪ জন। উপজেলার বাঁশবারিয়া বেসরকারি শিশু সদন ও মাদরাসায় ২০ জন এতিমের জন্য মাসিক বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, এতিমখানার সাইনবোর্ড টাঙানো প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ। ঘরের ভিতর কিছুই নেই। জানালা-দরজা ভাঙা। মোবাইলে প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ইউসুফ আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পরীক্ষা শেষে ছাত্রদের ১০ দিনের ছুটি দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিতে ২০ জন ভাতাভোগী এতিমের তালিকা থাকলেও বাস্তবে তা পাওয়া যায়নি। এ উপজেলার সবচেয়ে বেশি বরাদ্দের তালিকায় রয়েছে সফাপুর আখতার হামিদ সিদ্দিকী বেসরকারি শিশু সদন মাদরাসা। এখানে ৯০ জন এতিম পান সরকারি ভাতা। এ মাদরাসায় কাগজে-কলমে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২১০ জন। তবে বাস্তব চিত্র ভিন্ন। উপস্থিত শিক্ষার্থী মাত্র ৫০-৬০ জন। কাগজ-কলমের সঙ্গে উপস্থিতির এত পার্থক্য হওয়ার বিষয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধান আবদুল ওহায়েদ বলেন, মাদরাসায় আবাসিক-অনাবাসিক ছাত্র রয়েছে। আবার অনেক ছাত্র ছুটিতে আছে। নিয়ম অনুসারে ৯০ জন ভাতাভোগীর বিপরীতে এতিম শিক্ষার্থী থাকার কথা ১৮০ জন। কিন্তু তা তিনি দেখাতে পারেননি। একই অবস্থা উপজেলার আরেকটি প্রতিষ্ঠান ঈশ্বর লক্ষ্মীপুর মবেজ উদ্দীন বেসরকারি শিশু সদন, বদলগাছী উপজেলার খোজাগাড়ী এতিমখানা শিশু সদন ও নূরানী মাদরাসাসহ অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের।

স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, এসব মাদরাসা ও এতিমখানার অধিকাংশ ছাত্ররা গ্রামের লোকজনের বাড়িতে লজিং থাকে। এতিমদের খাবারের বরাদ্দের টাকা শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা ভাগাভাগি করে নেন। সমাজসেবা অধিদফতরের নিয়মানুযায়ী যেসব শর্তে বরাদ্দ আসে তার ছিটেফোঁটাও নেই বেশির ভাগ এতিমখানায়। এতিমদের টাকা যাতে নির্দিষ্ট খাতে ব্যয় হয় সেজন্য সঠিক তালিকা তৈরি করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তারা। মহদেবপুর উপজেলা সমাজসেবা অধিদফতরের কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান জানান, ইতোমধ্যে কয়েকটি এতিমখানা পরিদর্শন করেছি, কিছু অনিয়মও পেয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। সমাজসেবা অধিদফতরের কর্তাদের যোগসাজশে এতিমদের টাকা লুটপাটের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নওগাঁ জেলা সমাজসেবা অধিদফতরের উপপরিচালক নূর মোহাম্মদ। তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী যাদের মা-বাবা বা শুধু বাবা নেই তারা বরাদ্দ পাবে। আমাদের যাচাই-বাছাইয়ের পরও বিভিন্ন সময় ওপর মহলের অনেকে সুপারিশ নিয়ে আসেন। তখন আমাদের কিছু করার থাকেনা। সেই তালিকাও আমাদের সংযুক্ত করতে হয়। এরপরও সুনির্দিষ্টভাবে কোনো অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর